ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির ১৩৬ বছর

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির প্রশাসনিক ভবন। ওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাষ্ট্রছবি: উইকিমিডিয়া

ভ্রমণপিপাসু কিংবা অভিযাত্রীদের কাছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি খুব পরিচিত একটি নাম। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি অবস্থিত। বিশ্বের বৃহত্তম অলাভজনক বৈজ্ঞানিক ও শিক্ষামূলক সংস্থার মধ্যে একটি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি। ১৮৮৮ সালের ১৩ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে সংস্থাটি। সেই হিসাবে আজ ১৩৬ বছর পূর্ণ করল ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি। ভূগোল, প্রত্নতত্ত্ব, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, পরিবেশ–সংক্রান্ত নানা বিষয় ও ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণ বিষয়ে প্রচার, গবেষণা ও অভিযান পরিচালনা করে সংস্থাটি।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের জানুয়ারি ১৯১৫ সংখ্যা
ছবি: উইকিমিডিয়া

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি ভৌগোলিক জ্ঞান বাড়ানো ও ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়। ৩৩ সদস্যের একটি ট্রাস্টি বোর্ড সোসাইটি পরিচালনা করে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি শিক্ষাবিদদের একটি অভিজাত গোষ্ঠী হিসেবে যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠাতারা ভ্রমণ ও অভিজ্ঞতা অন্বেষণে আগ্রহী ছিলেন। ওয়াশিংটন ডিসির কসমস ক্লাবে যাত্রা শুরু করে সংস্থাটি। গার্ডিনার গ্রিন হাবার্ড সোসাইটির প্রথম সভাপতি। তাঁর জামাতা আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল ১৮৯৭ সালে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। গ্রাহাম বেল টেলিফোনের উদ্ভাবক। ১৮৯৯ সালে বেলের জামাতা গিলবার্ট হোভি গ্রোসভেনরকে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের প্রথম পূর্ণ সময়ের জন্য সম্পাদক হিসেবে মনোনীত করা হয়। বিজ্ঞানী গ্রাহাম বেল ও সম্পাদক গিলবার্ট হোভি গ্রোসভেন সোসাইটির পত্রিকায় গল্প বলার জন্য আলোকচিত্র (ফটোফিচার) প্রকাশ শুরু করেন।

সোসাইটি থেকে বিখ্যাত ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক (সংক্ষেপে ন্যাটজিও নামে পরিচিত) ম্যাগাজিন প্রকাশিত হচ্ছে। প্রথম সংখ্যা ১৮৮৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয়। প্রতিবছর ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ১২টি মাসিক সংখ্যা প্রকাশিত হয়। ম্যাগাজিনটিতে ভূগোল, জনপ্রিয় বিজ্ঞান, বিশ্বের ইতিহাস, সংস্কৃতি, বর্তমান ঘটনাবলি ও বিশ্ব–মহাবিশ্বের নানা স্থান ও স্থাপনার ছবি ও গল্প প্রকাশিত হয়ে থাকে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিন বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৪০টি স্থানীয় ভাষায় প্রকাশিত হয়। সম্মিলিতভাবে বছরে ৬ কোটি পাঠক এই ম্যাগাজিন পড়েন। প্রথম সংখ্যার দাম ছিল ৫০ সেন্ট। ১৮৯০ সালে প্রথম প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি ম্যাগাজিনে ছাপা হয়। আর্কটিকের হেরাল্ড দ্বীপের ছবি ছিল এটি।

১৮৯০ সালে প্রথম বৈজ্ঞানিক অভিযাত্রা পরিচালনা করে এই সোসাইটি। সেই গল্প ১৯০২ সালের জুলাই সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। ড. ইজরায়েল রাসেল সেই অভিযানের নেতৃত্ব দেন। ২০২৩ সালে ম্যাগাজিনটি লেখক ও কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেয়। প্রকাশনা সীমিত করার ঘোষণা আসে। সোসাইটি বেশ কয়েকটি পুরস্কার প্রদান করে। হুববার্ড মেডেল প্রদান করা হয় দারুণ সব অভিযান আবিষ্কার আর গবেষণার জন্য। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৪৪ বার এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। আর বিরল কোনো অভিযান বা আবিষ্কারের জন্য সোসাইটি আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল পদক প্রদান করে। এযাবৎ দুবার এ পদক প্রদান করা হয়েছে।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে বাংলাদেশের আলোকচিত্রী কে এম আসাদের তোলা সন্তানসহ এক রোহিঙ্গা নারীর ছবি। আগস্ট ২০১৯ সংখ্যা

১৯১৪ সালে প্রথম রঙিন ছবি প্রকাশিত হয় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনে। বেলজিয়ামের একটি বাগানের রঙিন ছবি ছিল সেটি। ১৯১৪ সালে একটি সংখ্যায় প্রথম নারী লেখকের লেখা প্রকাশিত হয়। জুলাই ১৯১৪ সংখ্যায় এলিজা আর শিডমোর জাপানের তরুণদের নিয়ে ‘ইয়াং জাপান’ শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশ করেন। ১৯৮৫ সালে আফগান গার্ল নামের বিখ্যাত একটি ছবি প্রকাশ করা হয়। ১২ বছরের এক কিশোরীর ছবি তোলেন আলোকচিত্রী স্টিভ ম্যাককারি। শরবত গুলা নামের সেই সবুজ চোখের আফগান কিশোরী পাকিস্তানের শরণার্থীশিবিরে অবস্থান করছিল। ১৯৮৫ সালের একটি সংখ্যায় টাইটানিক জাহাজের খোঁজে পরিচালিত অভিযানের গল্প প্রকাশ করেন রবার্ট ব্যালার্ড। ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বর সংখ্যা ডুবে যাওয়া টাইটানিকের খোঁজের গল্প লেখেন তিনি। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এক্সপিডিশনস নামে ১৯৯৯ সালে নতুন কার্যক্রম চালু হয়। এর মাধ্যমে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি নানা অভিযান পরিচালনা শুরু করে।

২০০১ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেল নামে টেলিভিশন সম্প্রচার শুরু করে। ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে টেলিভিশন সম্প্রচার শুরু করা হয়।

সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক