মরুভূমির শেওলা কি প্রাণ আনতে পারবে মঙ্গল গ্রহে

সিন্ট্রিচিয়া ক্যানিনারভিস নামের মরু শেওলাটি রুক্ষ পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারেছবি: উইকিমিডিয়া

যাঁরা হলিউডের বিখ্যাত ‘দ্য মার্শিয়ান’ সিনেমা দেখছেন, তাঁরা জানেন, সেই সিনেমার নায়ক ম্যাট ডেমন মঙ্গল গ্রহে কীভাবে আলু চাষ করেন। এবার চীনের একদল বিজ্ঞানী মরুভূমিতে থাকা বিশেষ ধরনের শেওলা খুঁজে পেয়েছেন, যেগুলো মঙ্গল গ্রহের রুক্ষ পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে। মোজাভে মরুভূমি ও অ্যান্টার্কটিকায় জন্মানো এই শেওলার মাধ্যমে মঙ্গল গ্রহে প্রাণের বিকাশ ঘটানো যেতে পারে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।

‘সিন্ট্রিচিয়া ক্যানিনারভিস’ নামের মরু শেওলাটি খরা, উচ্চমাত্রার বিকিরণ ও চরম ঠান্ডা পরিবেশেও ভালোভাবে বাঁচতে পারে। তাই বিজ্ঞানীরা মঙ্গল গ্রহের কঠিন পরিবেশে এই শেওলা ব্যবহারের কথা ভাবছেন। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেওলাবিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানী স্টুয়ার্ট ম্যাকড্যানিয়েল বলেন, স্থলজ উদ্ভিদ চাষ করা যেকোনো দীর্ঘমেয়াদি মহাকাশ মিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গাছপালা দক্ষতার সঙ্গে কার্বন ডাই–অক্সাইড ও পানি বিশ্লেষণ করে অক্সিজেন ও কার্বোহাইড্রেট তৈরি করে। সাধারণভাবে মরু শেওলা খাওয়ার উপযোগী নয়। তবে মরু শেওলা মহাকাশ ও মঙ্গল গ্রহে গাছ চাষের নতুন উপায় হতে পারে।

দ্য ইনোভেশন জার্নালে মরু শেওলার মঙ্গল গ্রহের বুকে সম্ভাবনার কথা প্রকাশ করেছেন চীনের গবেষকেরা। সেখানে বিজ্ঞানী আগাতা জুপানস্কা জানিয়েছেন, গাছপালা বৃদ্ধির জন্য মরু শেওলা মঙ্গল গ্রহপৃষ্ঠের পাথুরে উপাদানকে সমৃদ্ধ ও রূপান্তরিত করতে সাহায্য করতে পারে। মরু শেওলা কেবল কঠিন পরিবেশে বেঁচে থাকে না, পানিশূন্য পরিবেশেও দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে। শুধু তা–ই নয়, মাইনাস ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম তাপমাত্রাতেও পাঁচ বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে এসব শেওলা। পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাইনাস ১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মরু শেওলা টিকে থাকে। শুধু তা–ই নয়, গামা রশ্মির সংস্পর্শে আসার পরও শেওলার বৃদ্ধি হয়েছে। রুক্ষ পরিবেশ থেকে ফিরে এসে স্বাভাবিক বৃদ্ধির নজির খুব কম গাছেরই রয়েছে।

বেশির ভাগ গাছপালা মহাকাশ ভ্রমণের চাপ সহ্য করতে পারে না। তাই পৃথিবীতেই মঙ্গল গ্রহের মতো তাপমাত্রা, গ্যাস ও বিকিরণ ব্যবহার করে মরু শেওলার সক্ষমতা পরীক্ষা করেছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণায় দেখা গেছে, মঙ্গল গ্রহের পরিবেশেও সিন্ট্রিচিয়া ক্যানিনারভিস শেওলা বেশ ভালোভাবে বেঁচে রয়েছে। আর মহাকাশে উদ্ভিদের উপনিবেশ ও বৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগাতে এসব শেওলা ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্র: ডেইলি মেইল