কেরালায় গোসলের সময় পাওয়া নতুন প্রজাতির মাছ, আবিষ্কারকের প্রশংসায় লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও

লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওরয়টার্স

আর্কেমিডিস গোসল করার সময় পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র আবিষ্কার করেছিলেন বলে প্রচলিত আছে। ঠিক তেমনি গোসল করার সময় মাছ আবিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে। ২০২০ সালের অক্টোবরে পাতালা এল লক নামের এক মাছের সন্ধান পান ভারতীয় নাগরিক আব্রাহাম এ। তিনি ভারতের আধা সামরিক বাহিনীর সাবেক সৈনিক।

বিবিসি জানাচ্ছে, গোসল করার সময় নতুন সেই মাছের প্রজাতির সন্ধান পান আব্রাহাম। ভারতের কেরালার আলাপ্পুঝা জেলায় বাস করেন তিনি। সুতার মতো কিছু একটা দেখতে পেয়ে একটু ভয় পেয়ে যান। খেয়াল করে দেখেন, সাপের মতো নড়ছে সেই সুতার মতো বস্তুটি। সেটিকে পানির গ্লাসে করে নিয়ে বিনয় থমাস নামের এক কলেজশিক্ষকের কাছে ছুটে যান তিনি। সেই শিক্ষক তাঁকে পাঠান কেরালা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস ও সমুদ্রবিদ্যা বিভাগের গবেষকদের কাছে। সেই গবেষকেরা কুয়া আর ট্যাংকের পানিতে আরও চারটি মাছের সন্ধান পান।

নতুন প্রজাতির মাছ পাতালা এল লক
রাজীব রাঘবের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে

পাতালা এল লক মাছ দেখতে গাঢ় গোলাপি বর্ণের। আকারে ৩ সেন্টিমিটারের মতো হয়। তিন বছর আগের সেই আবিষ্কারের গল্প আবারও সবার সামনে তুলে এনেছেন অস্কারবিজয়ী অভিনেতা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও। তিনি ইনস্টাগ্রামে তাঁর অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘প্রাণের সন্ধান আমাদের চারপাশেই আছে। সাধারণ একটা দিনেই নতুন কোনো প্রজাতি আবিষ্কার হয়ে যেতে পারে।’ নতুন এই আবিষ্কার সাধারণ নাগরিকদের বিজ্ঞানচর্চায় উদ্বুদ্ধু হতে উৎসাহ দেবে বলে মনে করেন তিনি। ডিক্যাপ্রিও ইনস্টাগ্রামে ছবি দিয়ে সেই মাছের বিস্তারিত লিখেছেন।

ডিক্যাপ্রিওর এমন লেখা দেখে ভীষণ অভিভূত আব্রাহাম। আব্রাহাম বলেন, ‘আমি খুবই খুশি। তিনি এত বড় মনের মানুষ হয়ে আমার নাম মনে করেছেন।’ আব্রাহামের বাড়ির কুয়া থেকেই এই মাছ ছাদের পানির ট্যাংকে চলে যায়। পরে পানির ট্যাপ হয়ে বালতিতে পাওয়া যায় মাছগুলো। ২০২০ সালে এই মাছের প্রজাতির সন্ধান পান তিনি। সাধারণভাবে মাছ নদী কিংবা হ্রদে বাস করে। পাতালা এল লক নামের মাছটি একটু ব্যতিক্রমী। অন্য মাছেরা উন্মুক্ত পানিতে থাকলেও এই মাছ ভূপৃষ্ঠের নিচের পানিতে থাকে। সংস্কৃত ভাষায় পাতালা মানে পায়ের নিচে।

কুয়ার নিচের অংশ ভূপৃষ্ঠের নিচের পানির সঙ্গে যুক্ত। গ্রীষ্মকালে কুয়াগুলো শুকিয়ে গেলে এই মাছগুলো দেখা যায়। ভারতের কেরালায় বলা যায় ৭০ লাখের বেশি কুয়া আছে। কেরালা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাজীব রাঘব জানান, ভারতজুড়ে এমন ১৭-১৮টি প্রজাতি আছে, যার ১১টিই পাওয়া যায় কেরালাতে। ভারত, চীন আর মেক্সিকোয় এমন মাছ বেশি পাওয়া যায়। ভূপৃষ্ঠের নিচের পানিতে এমন মাছ পাওয়া যায় বলে এগুলোর সাধারণত দেখা মেলে না। রাজীব রাঘব মনে করেন, কালেভদ্রে এমন সুযোগ পাওয়া যায় বলেই মাছটি পাওয়া গেল।

১৯৫০ সালের আগপর্যন্ত এসব মাছের তেমন তথ্য পাওয়া যেত না। ২০১৫ সালে প্রথম কেরালায় এমন মাছের সন্ধান মেলে। কেরালা বিশ্ববিদ্যালয় নাগরিকদের বিজ্ঞানে উদ্বুদ্ধ করতে সিটিজেন সায়েন্স নেটওয়ার্ক চালু করেছে। যে কর্মসূচির মাধ্যমে এসব মাছের কথা সাধারণ মানুষের কাছে জানান বিজ্ঞানীরা। রাজীব রাঘব জানান, ‘এভাবে আমরা ১১টি প্রজাতির ১৫০টি নমুনা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছি।’
এমন ধরনের অধিকাংশ মাছ প্রাগৈতিহাসিক বৈশিষ্ট্যের হয়। এসব মাছ সাড়ে ১২ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। সেই সময় ডাইনোসররা পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াত।
সূত্র: বিবিসি