যে প্রতিযোগিতায় বিজ্ঞানীদের নাচতে হয়

নাচের মাধ্যমে নিজের গবেষণার বিষয় তুলে ধরেন ওয়েলিটন মেনরিও কস্তাছবি: স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন

যাঁরা বিজ্ঞান দুনিয়ার খোঁজখবর রাখেন না, তাঁরা মনে করেন যে বিজ্ঞানের দুনিয়া মানেই কঠিন কঠিন সব গবেষণা। বিজ্ঞান দুনিয়ায় অদ্ভুত সব পুরস্কারের জন্য আইজি নোবেল আর সায়েন্টিস্টস ড্যান্স ইয়োর পিএইচডি নামের পুরস্কার বেশ আলোচিত।

২০০৮ সালে চালু হয় ড্যান্স ইয়োর পিএইচডি প্রতিযোগিতা। আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স ও সায়েন্স সাময়িকীর আয়োজনে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। এ প্রতিযোগিতায় বিজ্ঞানীরা তাঁদের গবেষণাকে নাচের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন। এ বছরের সেরা নাচিয়ে বিজ্ঞানী হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার ক্যাঙ্গারু টাইম (ক্লাব এডিট) প্রতিষ্ঠাতা ড. ওয়েলিটন মেনরিও কস্তা পুরস্কার জিতেছেন। ড. কস্তা অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানী। কস্তা বিজ্ঞানজগতে ‘ওয়েলি’ ডাকনামে আলোচিত। নিজের গবেষণাকে সৃজনশীল ও অদ্ভুত উপায়ে প্রদর্শন করে প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি। বিজ্ঞানী কস্তার চার মিনিটের ভিডিওতে বিশেষ ধরনের নাচের শৈলী দেখা যায়। ক্যাঙ্গারু নিয়ে তাঁর গবেষণাকে নেচে–গেয়ে অভিব্যক্তি দিয়ে আলোচনার সৃষ্টি করেন এই বিজ্ঞানী। বিশ্বের বিভিন্ন এলাকার নাচ যেমন ব্যালে থেকে শুরু করে টোয়ার্কিং বা ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যের মাধ্যমে ক্যাঙ্গারুবিষয়ক গবেষণাকে উপস্থাপন করেন তিনি। ভিডিওতে কস্তার সঙ্গে তাঁর বন্ধুদের দেখা যায়।

ড্যান্স ইয়োর পিএইচডি প্রতিযোগিতায় বিজ্ঞানীরা নাচের মাধ্যমে জটিল সব গবেষণা তুলে ধরেন। নাচের মাধ্যমে জটিল সব তত্ত্বের উপস্থাপনা দেখা যায়। এ প্রতিযোগিতার প্রাথমিক উদ্দেশ্য সৃজনশীলভাবে সবাইকে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানানো। জটিল সব বৈজ্ঞানিক ধারণাকে নাচের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। বিজ্ঞানী কস্তা ভিডিওতে অভিনয় করেছেন আর নিজেই পরিচালনা করেছেন। সেই নাচের ভিডিওর গানটি সাত হাজারের বেশিবার স্পটিফাইতে শোনানো হয়েছে। গানটি এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন ক্লাব, উত্সব, নাচের ক্লাস আর রেডিও স্টেশনে বাজানো হচ্ছে।

বিজ্ঞানী কস্তা বলেন, ‘এ প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করা আমার জন্য ইউরোপের জনপ্রিয় গানের রিয়েলিটি শো ইউরোভিশন জয়ের সমতুল্য। আমি মনে করি, অস্ট্রেলিয়ায় পরিচালিত একটি গবেষণাকে সৃজনশীল উপায়ে সবার সামনে তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছি আমরা।’

বিশ্বসেরা ক্যাঙ্গারু–বিশেষজ্ঞ হিসেবে আলোচিত ড. কস্তা। ক্যাঙ্গারুরা ম্যাক্রোপাস পরিবারের অন্তর্গত। ম্যাক্রোপাস মানে বড় পা। কখনো কখনো ক্যাঙ্গারুরা লাফিয়ে ৩০ ফুট পর্যন্ত যেতে পারে। আর ঘণ্টায় ৩০ মাইল গতিতে ছুটতে পারে তারা। কস্তা বলেন, ‘আমরা নাচের মাধ্যমে ক্যাঙ্গারুর আচরণ বিশ্লেষণ করেছি। “ক্যাঙ্গারু টাইম” শিরোনামের চার মিনিটের নাচের ভিডিওটি আমার পিএইচডি গবেষণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি। অস্ট্রেলিয়ার উইলসন প্রমন্টরি ন্যাশনাল পার্কে গবেষণা করেছি আমি।

গবেষণার বিষয় নিয়ে তৈরি ভিডিওর কলাকুশলীরা। স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন

কানাডার শেরব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিল অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। আমার গবেষণার বিষয় ছিল ব্যক্তিত্ব, সামাজিক পরিবেশ ও মাতৃত্বের প্রভাব: বন্য ক্যাঙ্গারুর অন্তর্দৃষ্টি। আমরা প্রাণীর ব্যক্তিত্ব কেমন, তা জানার চেষ্টা করি। প্রাণী হিসেবে ক্যাঙ্গারু ভিন্ন আচরণ করে। আমাদের নাচের ভিডিওতে শাস্ত্রীয় নাচ থেকে শুরু করে শহুরে নাচের বৈচিত্র্য দেখা যায়। ক্যাঙ্গারুর মতোই নেচেছি আমরা।’
২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন কস্তা। ‘ক্যাঙ্গারু টাইম’ শীর্ষক নাচের ভিডিওর মাধ্যমে বিজ্ঞানী কস্তা সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্তি ও বৈচিত্র্যের বিষয়টি নিয়ে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। পুরস্কার হিসেবে এক হাজার ডলার পেয়েছেন তিনি।

সূত্র: স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন