সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ বাড়ছে, বঙ্গোপসাগরও রয়েছে ঝুঁকিতে
সমুদ্রের সব স্থান সামুদ্রিক প্রাণীদের জন্য নিরাপদ নয়। বেশ কিছু এলাকায় প্লাস্টিকের উপস্থিতি সমুদ্রের প্রাণীদের জীবন বিপন্ন করে তুলছে। যুক্তরাষ্ট্রের টুলেন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিজ্ঞানী ইয়ানক্সু ঝাংয়ের নেতৃত্বে এক গবেষণায় সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণের নতুন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। গবেষণায় ভাসমান বোতলের সংখ্যা না গুনে বাস্তুতন্ত্রের ওপর প্লাস্টিকের ঝুঁকির একটি বৈশ্বিক ম্যাপ তৈরির মাধ্যমে সমুদ্রের কোথায় কোথায় প্লাস্টিকের সঙ্গে প্রাণীর সংযোগের সম্ভাবনা বেশি ও কোথায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর, তা বের করেছেন বিজ্ঞানীরা। শুধু তা–ই নয়, প্লাস্টিক বর্জ্য ভিন্ন ভিন্ন প্রাণীর জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, তা-ও বিশ্লেষণ করেছেন তাঁরা। বিজ্ঞানীদের তৈরি বৈশ্বিক ম্যাপ পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, আমাদের বঙ্গোপসাগরও প্লাস্টিক দূষণের ঝুঁকির মধ্যে আছে।
প্লাস্টিক প্রধানত চারভাবে প্রাণীদের ক্ষতি করছে। অনেক প্রাণী প্লাস্টিক খায়, প্লাস্টিকের মধ্যে জড়িয়ে যায়। অনেক প্রাণী প্লাস্টিকের সঙ্গে লেগে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থও খায়। প্লাস্টিক থেকে নিঃসৃত রাসায়নিক শরীরে প্রবেশ করে সমুদ্রের প্রাণীদের ক্ষতি করছে। আর তাই বিজ্ঞানীরা এপিপেলাজিক প্রজাতি হিসেবে সমুদ্রের পৃষ্ঠের কাছাকাছি প্রায় ৬৫০ ফুট গভীরতার মধ্যে বসবাসকারী প্রাণীদের চিহ্নিত করেছেন। আর মেসোপেলাজিক প্রজাতি হিসেবে প্রায় ৬৫০ থেকে ৩৩০০ ফুট গভীরে বসবাসকারী প্রাণীদের আলাদা করেছেন। দেখা গেছে, সমুদ্রের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে প্রাণীদের ওপরে প্লাস্টিকের প্রভাব ভিন্ন রকম।
বিজ্ঞানী ঝাং বলেন, সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ একটি বৈশ্বিক উদ্বেগ হিসেবে স্বীকৃত। যদিও প্লাস্টিকের বাস্তুসংস্থানের ঝুঁকি সম্পর্কে এখনো খুব কম জানা হয়েছে। আমরা কীভাবে প্লাস্টিক বিভিন্ন ঝুঁকির মাধ্যমে সামুদ্রিক জীবন ও বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে, তা জানার চেষ্টা করেছি। গবেষণায় উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর, উত্তর আটলান্টিক, উত্তর ভারত মহাসাগরের কিছু অংশ ও পূর্ব এশিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলকে প্লাস্টিক ঝুঁকির হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই অঞ্চলগুলোতে প্রচুর বন্য প্রাণী থাকে। আবার বড় আকারের মাছ ধরার কার্যক্রম চলে। সমুদ্রের উপক্রান্তীয় অঞ্চলের বেশি প্রাণীর ঘনত্ব থাকে না। সেখানে শুধু দৃশ্যমান আবর্জনা দেখে ক্ষতির মাত্রা অনুমান করা যায় না। প্লাস্টিক-সম্পর্কিত পরিবেশগত ঝুঁকির বৈশ্বিক অবস্থানের ম্যাপ তৈরি করে আমরা বিজ্ঞানভিত্তিক একটি ভিত্তি তৈরি করেছি।
কিছু প্লাস্টিক ক্ষুদ্র ভেলা বা বাহক হিসেবে কাজ করে। এসব ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ বহন করে। এই গবেষণায় পিএফওএস ও মিথাইলমারকারির মতো রাসায়নিক পদার্থ চিহ্নিত করা হয়েছে। এই রাসায়নিক প্লাস্টিকের সঙ্গে মিশে দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। মিথাইলমারকারি একটি শক্তিশালী নিউরোটক্সিন। এটি গ্রহণ করে প্রাণীর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হচ্ছে। মাছ ধরার জালসহ পরিত্যক্ত সরঞ্জামকে ঘোস্ট গিয়ার বলা হয়। এসব মাছ, সামুদ্রিক পাখি, কচ্ছপ ও স্তন্যপায়ী প্রাণীর জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনে। এই গবেষণার মানচিত্রে ওখোটস্ক সাগর, হলুদ ও পূর্ব চীন সাগর, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং অন্যান্য ব্যস্ত উপকূলীয় অঞ্চলে এই ধরনের ঝুঁকির মাত্রা বেশি দেখানো হয়েছে। শক্তিশালী পদক্ষেপ না নিলে ২০৬০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক প্লাস্টিক গ্রহণের ঝুঁকি বর্তমানের চেয়ে তিন গুণের বেশি বাড়বে। গবেষণার ফলাফল নেচার সাসটেইনেবিলিটি সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
সূত্র: আর্থ ডট কম