চাঁদের রং বদলায় কীভাবে

চাঁদছবি: রয়টার্স

বিশাল নীলাকাশ যেন অনন্ত রহস্যের এক সুবিশাল ক্যানভাস। সেখানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন দৃশ্যপট উন্মোচিত হয়। এই রহস্যময় আকাশের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো আমাদের পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ চাঁদ। এ চাঁদকে নিয়ে যুগ যুগ ধরে মানুষের কৌতূহল আর কল্পনার অন্ত নেই। কখনো সে উদয় হয় বিশাল আকৃতির ধবধবে সাদা থালার মতো, আবার কখনো সে ছোট আর নিষ্প্রভ। কখনো সে ছড়ায় রুপালি জোছনা, আবার কখনো দেখা যায় তার গায়ে ভিন্ন রঙের ছোঁয়া। নীল চাঁদ, রক্ত চাঁদ বা স্ট্রবেরি মুন নামে ডাকা হয় একে।

চাঁদ নিজে কিন্তু কোনো আলো উৎপন্ন করে না। আমরা চাঁদকে আলোকিত দেখি, এর কারণ এটি সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে। অনেকটা আয়নার মতো, চাঁদ সূর্যের আলোকে শোষণ করে আর একটি অংশকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে দেয়। আমাদের চাঁদের পৃষ্ঠ মূলত অ্যানোরথোসাইট নামের একধরনের ধূসর শিলা দিয়ে গঠিত। চন্দ্রপৃষ্ঠের বেশির ভাগ অংশই এই একই রকম ধূসর। এই ধূসর রং সূর্যের আলোর বর্ণালির প্রতিটি অংশকে প্রায় সমানভাবে শোষণ করে। সামান্য অংশ প্রতিফলিত করে। এই কারণেই সাধারণত আমরা চাঁদকে ধূসর-সাদা চেহারায় দেখতে পাই। এটিই চাঁদের আসল রং। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির গবেষণায় দেখা গেছে, চাঁদের পৃষ্ঠের গঠন ও এর রাসায়নিক উপাদানই এর মৌলিক রং প্রতিফলনের ক্ষমতা নির্ধারণ করে।

আমরা চাঁদের যে রং দেখি, তা অনেকটাই নির্ভর করে বায়ুমণ্ডলের অবস্থার ওপর। বায়ুমণ্ডলের ধরনের কারণে চাঁদের প্রতিফলিত আলোকে আমাদের চোখে ভিন্ন ভিন্ন রূপে দেখি। যখন চাঁদ আকাশের সর্বোচ্চ স্থানে বা অনেক উঁচুতে অবস্থান করে, তখন বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে আলোর ভ্রমণপথ তুলনামূলকভাবে ছোট হয়। এ অবস্থায় আলো খুব বেশি ছড়িয়ে পড়ে না। আলোর কণাগুলো বাতাসের কণার সঙ্গে খুব বেশি সংঘর্ষে লিপ্ত হয় না। ফলে সূর্যের আলোর প্রায় সব সাদা উপাদানই পৃথিবীতে পৌঁছায়। তখন আমরা চাঁদকে তার স্বাভাবিক ধূসর-সাদা রূপে দেখি।

চাঁদ যখন দিগন্তের কাছাকাছি থাকে, তখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে যায়। এ সময় বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে আলো ভ্রমণের পথ উল্লেখযোগ্যভাবে দীর্ঘ হয়। এই দীর্ঘ পথে আলোর কৌণিক দূরত্ব পরিবর্তিত হয়। আলোর কণাগুলো বাতাসের কণা, ধূলিকণা, জলীয় বাষ্প এবং অন্যান্য কণার সঙ্গে বেশি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সংঘর্ষের ফলে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটলে চাঁদের আলোকে ভিন্ন রং ধারণ করতে বাধ্য করে। যখন চাঁদ দিগন্তের কাছাকাছি থাকে, তখন আলো বায়ুমণ্ডলের একটি ঘন স্তরের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করে। এ সময় নীল ও বেগুনি আলোর বেশির ভাগই বিচ্ছুরিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে বলে আমাদের চোখে পৌঁছায় না। তখন যে আলো আমাদের চোখে পৌঁছায়, তাতে লাল ও কমলা আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যই বেশি থাকে। এ কারণেই দিগন্তে চাঁদকে প্রায়ই হলুদ, কমলা বা এমনকি লালচে দেখায়।

চাঁদের রঙের পরিবর্তনের সবচেয়ে নাটকীয় উদাহরণ হলো ব্লাড মুন। চন্দ্রগ্রহণের সময় এমনটা দেখা যায়। চন্দ্রগ্রহণের সময় পৃথিবী সূর্য ও চাঁদের মাঝখানে চলে আসে। পৃথিবীর ছায়া তখন চাঁদের ওপর পড়ে। ফলে চাঁদে সরাসরি সূর্যের আলো পৌঁছাতে পারে না। আসলে চাঁদ সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে যায় না, এক অদ্ভুত লালচে রং ধারণ করে।
চন্দ্রগ্রহণের সময় সূর্যের আলো সরাসরি চাঁদে পৌঁছাতে পারে না। কিছু আলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভেদ করে চাঁদের দিকে যায়। এ সময় আমাদের বায়ুমণ্ডল সব নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে শোষণ ও বিচ্ছুরণ করে। সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের সময় আকাশ লাল দেখায়। ঠিক তেমনি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে শুধু লাল ও কমলা তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো চাঁদের পৃষ্ঠে পৌঁছায়। এ কারণেই চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদকে গাঢ় লাল বা কমলা দেখায়।

সূত্র: বিজিআর ডটকম