তুলাগাছ থেকে তৈরি হবে প্যারাসিটামল

পপলার গোত্রের গাছের বায়োমাস দিয়ে প্যারাসিটামল ওষুধ তৈরি হবেছবি: ফিজিস ডটঅর্গ

বহুকাল আগে মানুষ যখন গুহায় বসবাস করত, তখন রোগ নিরাময়ে বিভিন্ন গাছপালাই ছিল ভরসা। পরবর্তী সময়ে সভ্যতা যতই সামনে এগিয়েছে, গাছপালা-নির্ভর ওষুধের ব্যবহারও বেড়েছে। দেড় শতাব্দী ধরে শিল্পবিপ্লবের কারণে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ওষুধ তৈরি হলেও এবার গাছের যৌগ থেকে প্যারাসিটামল ওষুধ তৈরির কৌশল আবিষ্কার করছেন বিজ্ঞানীরা।

যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী পপলার গোত্রের গাছের বায়োমাস দিয়ে প্যারাসিটামল ওষুধ তৈরির কৌশল আবিষ্কার করেছেন। পপলাস গোত্রের অধীনে ২৫ থেকে ৩০ প্রজাতির গাছ আছে। তুলাগাছ এই গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। নতুন এই আবিষ্কার বিশ্বের সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত ওষুধ তৈরিতে সবুজ প্রযুক্তির সংযোগ ঘটাবে বলে আশা করা হচ্ছে। নতুন এ আবিষ্কারের তথ্য কেমসাসকেম নামের জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

গ্রেট লেকস বায়োএনার্জি রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞানী স্টিভেন কার্লেন বলেন, ‘প্যারাসিটামল অ্যাসিটামিনোফেন নামেও পরিচিত। এটি একটি বহুল ব্যবহৃত ওষুধ, যার বার্ষিক বৈশ্বিক বাজারমূল্য প্রায় ১৩ কোটি মার্কিন ডলার। ১৮৭০-এর দশকে প্যারাসিটামল প্রথম উদ্ভাবন করা হয়। সাধারণভাবে কয়লা বা পেট্রোলিয়ামের উপজাত উপাদান থেকে তৈরি করা হয় ব্যথানাশক ওষুধটি। আমরা বড় পরিসরে ওষুধটি তৈরির জন্য গবেষণা করছি।’

২০১৯ সালে বিজ্ঞানী কার্লেন ও জন রালফ প্যারাসিটামল তৈরির নতুন এক ধারণা দেন। তাঁরা পপলার গোত্রের গাছের যৌগ থেকে প্যারাসিটামল তৈরির কৌশলও উদ্ভাবন করেন। এই কৌশল কাজে লাগিয়েই পরে প্যারাসিটামলের পাশাপাশি অন্যান্য ওষুধ, রঞ্জক, টেক্সটাইল ও বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক তৈরির প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা।

প্যারাসিটামল অণু একটি ছয়-কার্বন বেনজিন রিং দিয়ে তৈরি দুটি রাসায়নিক গ্রুপ সংযুক্ত। পপলারগাছের লিগনিনে পি-এইচবি নামে অনুরূপ যৌগ তৈরি হয়। এই অংশ উদ্ভিদের শর্করাকে একত্রে আবদ্ধ করে। এই লিগনিন সুগন্ধযুক্ত যৌগ প্রকৃতির, যা অনেক পেট্রোকেমিক্যাল প্রতিস্থাপন করতে পারে। সস্তা এই পদ্ধতিতে পি-এইচবিকে অন্য রাসায়নিকে রূপান্তরিত করে প্যারাসিটামল বা অন্যান্য ওষুধ তৈরি করা যায়।

সূত্র: ফিজিস ডটঅর্গ