আপনি কি জানেন

সকালে সূর্যোদয়ের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সারা দিন চারদিক আলোকিত থাকে। অবশ্য আকাশে মেঘ থাকলে কিছুটা অন্ধকার দেখায়, তবে মোটামুটি আলোকিত। সন্ধ্যার পর চারদিক অন্ধকার হয়ে আসে। আকাশে চাঁদ থাকলে অবশ্য হালকা আলো থাকে। তবে এটা ঠিক যে রাত অন্ধকার, দিন আলোকিত। এটা আমাদের পৃথিবীর জন্য সত্য।

কিন্তু আমরা যদি রকেটে মহাশূন্যে যাই, তাহলে দেখা যাবে চারদিক অন্ধকার। সূর্যকে দেখা যাবে মহাকাশে উজ্জ্বল আলোর একটি গোলকের মতো। এর চারপাশে কোটি কোটি তারা। পৃথিবী থেকে রাতের আকাশেও আমরা এই তারার রাজ্য দেখি। অর্থাৎ পৃথিবীর বাইরে মহাশূন্যে দিন বলে কিছু নেই। সব সময়ই ঘুটঘুটে অন্ধকার। দেখা যাবে শুধু চাঁদ, সূর্য আর নক্ষত্ররাজি।

অথচ এই যে আকাশজুড়ে এত তারা, সূর্য তো আছেই, আছে চাঁদ, তারপরও কেন অন্ধকার? পৃথিবী থেকে দিনের বেলায় আমরা চারদিক এত আলোকিত দেখি অথচ মহাশূন্যে কেন আলো থাকে না?

মূল পার্থক্য বায়ুমণ্ডল

পৃথিবীর চারপাশ ঘিরে রয়েছে বাতাসের আবরণ। সূর্যের আলো বাতাসের মধ্য দিয়ে আসার সময় প্রতিসরিত হয়ে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। তখন চারদিক উজ্জ্বল দেখায়। কিন্তু পৃথিবীপৃষ্ঠের মাত্র ৬০ থেকে ৭০ মাইল উচ্চতা পর্যন্ত রয়েছে বাতাসের এ চাদর। এরপর মহাশূন্য প্রায় বস্তুকণাশূন্য। একেবারে ফাঁকা।

তাই আমরা যদি রকেটে মহাকাশ স্টেশনে যাই, তাহলে দেখব চারপাশ অন্ধকার। কারণ, সেখানে কোনো বাতাসের আস্তরণ নেই। এ কারণে সূর্যের আলো প্রতিসরণ হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। শুধু আমরা যদি সূর্যের দিকে তাকাই, তাহলে সরাসরি আলোকিত সূর্যগোলকটি কেবল দেখতে পাব।

সেখান থেকে অবশ্য চাঁদও দেখা যাবে। কিন্তু পৃথিবীর মতো পূর্ণিমার মনোমুগ্ধকর হালকা নীলাভ আলো দেখব না। কারণ, চাঁদেও কোনো বায়ুমণ্ডল নেই। তাই সূর্যের আলো চাঁদে প্রতিফলিত হয়ে সরাসরি আমাদের চোখে আসবে। মহাশূন্য থেকে চাঁদকে দেখা যাবে অনুজ্জ্বল আলোর ছোট একটি গোলকের মতো।

এত তারার আলো তাহলে কোথায় যায়

এখানে স্বভাবতই একটি প্রশ্ন ওঠে। আকাশভরা এত যে তারা আমরা দেখি, তাদের আলো তাহলে কোথায় যায়। মহাশূন্যে না হয় কোনো বাতাস নেই, কিন্তু এত ঘেঁষাঘেঁষি তারার আলোই তো সমস্ত আকাশ আলোকিত রাখার জন্য যথেষ্ট হওয়া উচিত। হ্যাঁ, প্রশ্নটা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু সমস্যা হলো আমরা আকাশে যে তারাগুলো দেখি, ওরা এত দূরে যে কল্পনাও করা যায় না। দূর থেকে আমরা দেখি খুব কাছাকাছি, কিন্তু আসলে এরা একে অপরের থেকে অনেক দূরে। যেমন দূর থেকে আমরা যদি কোনো বনের দিকে তাকাই, তাহলে মনে হবে গাছগুলোর মধ্যে কোনো ফাঁকা স্থান নেই। কিন্তু কাছে গেলে দেখব বনের গাছগুলো বেশ দূরে দূরে।

আকাশের তারাগুলোর অবস্থানও ঠিক তেমনই। প্রায় ১ হাজার ৩৮০ কোটি বছর আগে বিগব্যাঙের পর থেকেই মহাশূন্য ক্রমাগত প্রসারিত হয়ে চলেছে। এ কারণে নক্ষত্রগুলো একে অপরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

নতুন নতুন নক্ষত্রের জন্ম হচ্ছে। আমাদের ছায়াপথের মতো অনেক গ্যালাক্সি জন্ম নিয়েছে, নিচ্ছে। আবার অনেক গ্যালাক্সি ব্ল্যাকহোলে পরিণত হচ্ছে।

সম্প্রতি জানা গেছে, মহাশূন্য আমাদের আগের ধারণার চেয়েও দ্রুতগতিতে প্রসারিত হচ্ছে। এ কারণে তারাগুলো একে অপরের থেকে আরও দ্রুতগতিতে দূরে সরে যাচ্ছে। এ অবস্থায় তারার আলোয় মহাকাশ আলোকিত হয়ে ওঠার কোনো সুযোগ নেই। মহাকাশ একেবারে ঘুটঘুটে অন্ধকার।

আব্দুল কাইয়ুম, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক। [email protected]