বরফ পানিতে ভাসে বলেই বাঁচোয়া

গতকাল লিখেছিলাম মহাকাশে কেন ঢেকুর তোলা যায় না। সে লেখা যখন প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে শেয়ার করা হলো, একটি প্রশ্ন ঘুরেফিরে এসেছে। আচ্ছা, ঢেকুর তো বুঝলাম, গ্যাস উল্টো পথে বেরোলে কী হবে?

যা হোক, মহাশূন্যে বড় সমস্যা হলো, গ্যাস বেরোলে তা উড়ে যায় না। আর মহাকাশযানের বদ্ধ পরিবেশে ব্যাপারটা অস্বস্তিকর তো বটেই। তা ছাড়া ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, বদ্ধ পরিবেশে নির্গত বায়ু অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত পর্যন্ত করতে পারে।

স্বস্তির খবর হলো, আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে খারাপ বাতাস বের করে দেওয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে। নভোচারীদের স্পেস স্যুটেও একই ধরনের ফিল্টার আছে। সুতরাং নিশ্চিন্ত থাকুন।

আজ আর মহাকাশে না গিয়ে বরং পৃথিবীর পানি সম্পর্কে তিনটা মজার তথ্য দিই।

পানিতে বরফ ভাসে বলেই সমুদ্রে সব পানি জমে বরফ হয়ে যায় না
ছবি: পিক্সাবে

বরফ পানিতে ভাসে বলেই বাঁচোয়া

পদার্থের তরল বা বায়বীয় রূপ থেকে যখন কঠিনে রূপান্তরিত হয়, তখন সাধারণত পরমাণুগুলো একে অপরের কাছাকাছি চলে আসে, অর্থাৎ ঘন হয়। সে কারণেই অনেক কঠিন পদার্থ দেখবেন পানিতে ডুবে যায়। তবে পানির কঠিন রূপ অর্থাৎ বরফ কিন্তু অতটা ঘন নয়।

পানি জমাট বাঁধার সময় পানির পরমাণুগুলো এক ধরনের বলয় তৈরি করে। এই বলয় তৈরির সময় কিছুটা ফাঁকফোকর তো থেকেই যায়। আর সে কারণেই বরফ অন্যান্য কঠিন পদার্থের মতো ঘন নয়। পানিতে ভাসার সেটিই কারণ।

বরফের পানিতে ভাসার ব্যাপারটি কিন্তু দারুণ। কারণ বরফ পানির ওপরে ভাসে বলেই নিচে তরল পানি থাকে। বরফ ডুবে গেলে হয়তো পুরো সাগরই জমে বরফ হয়ে যেত!

পাতা থেকে বাষ্প হয়ে উড়ে যায় পানি
ছবি: পিক্সাবে

উদ্ভিদে মহাকর্ষ মানে না পানি

পানির একটি মজার বৈশিষ্ট্য হলো, এটা লেগে থাকে। পানির সঙ্গে পানি তো বটেই, অন্য বস্তুর সঙ্গেও কিছুটা লেগে থাকতে দেখা যায়। আর এ কারণেই ছড়িয়ে না গিয়ে পানি গোলাকার ড্রপলেট তৈরি করে। সব তরলে এমন বৈশিষ্ট্য দেখা যায় না। এমন বৈশিষ্ট্যের কারণেই উদ্ভিদের শিকড় থেকে পাতায় পৌঁছে যায় পানি। পরিবহনের কাজটি হয় জাইলেম নামের অত্যন্ত সরু ‘স্ট্র’ দিয়ে। জাইলেমে পানির পরমাণুগুলো একে অপরের সঙ্গে এবং টিউবের গায়ে লেগে থাকে বলেই এমনটা হয়। আর নিচ থেকে ওপর দিকে যাওয়ার কারণটা হলো পাতা থেকে বাষ্প হয়ে উড়ে যায় পানি।

ধূমকেতু
ছবি: পিক্সাবে

মহাকাশ থেকে পানি

পৃথিবীর গঠন যে পাথুরে পদার্থে হয়েছে, তাতে কিছু পানি ছিল। তবে সম্ভবত সেটাই পানির একমাত্র উৎস না। বেশির ভাগ ধূমকেতু মূলত পানির বরফে তৈরি। হতে পারে একসময় হয়তো ধূমকেতু প্রায়ই পৃথিবীতে এসে পড়ত, আর তা থেকে নিয়মিত পানি পেয়েছে পৃথিবী। অবশ্য সমুদ্র ভরাতে চাইলে অনেক অনেক ধূমকেতু প্রয়োজন। তবু পৃথিবীর জলভাগে ধূমকেতুর বড় অবদানের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

তথ্যসূত্র: নাসার ক্লাইমেট কিডস ওয়েবসাইট