দক্ষিণ কোরিয়ার চুল্লিতে তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড

কেস্টার চুল্লির অভ্যন্তরীণ চেম্বারছবি: কোরিয়া ইনস্টিটিউট অব ফিউশন অ্যানার্জি

দক্ষিণ কোরিয়ার এক পারমাণবিক ফিউশন চুল্লিতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ১০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ৪৮ সেকেন্ডের জন্য এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এই ফিউশন চুল্লিকে ‘কৃত্রিম সূর্য’ নামে ডাকা হচ্ছে। কোরিয়া সুপারকন্ডাক্টিং টোকামাক অ্যাডভান্সড রিসার্চ (কেস্টার) নামের চুল্লিতে এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আগেরবার ২০২১ সালে একই চুল্লিতে এই তাপমাত্রা ৩১ সেকেন্ড পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছিল। নতুন এই রেকর্ড ‘ক্লিন এনার্জি’ হিসেবে নতুন উৎসের খোঁজে অনুপ্রেরণা জোগাবে বলে গবেষকেরা জানিয়েছেন।

বিজ্ঞানীরা ৭০ বছরের বেশি সময় ধরে পারমাণবিক ফিউশন শক্তিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। উচ্চ চাপ ও তাপমাত্রায় হিলিয়াম তৈরি করতে হাইড্রোজেন পরমাণুকে ফিউজ করে শক্তি উৎপাদন করা হয়। এভাবে নক্ষত্র পদার্থকে আলো ও তাপে রূপান্তর করে। গ্রিনহাউস গ্যাস বা দীর্ঘস্থায়ী তেজস্ক্রিয় বর্জ্য উত্পাদন না করেই প্রচুর পরিমাণে শক্তি উৎপন্ন করে।

পরীক্ষাগারে এমন শক্তির প্রতিলিপি করা খুব সহজ কাজ নয়। ফিউশন চুল্লি নির্মাণ বেশ জটিল একটা কাজ। টোকামাক চুল্লিতে প্লাজমাকে অতি গরম করে শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্রসহ একটি ডোনাট-আকৃতির চুল্লি চেম্বার আছে। নিউক্লিয়ার ফিউশন ঘটানো দীর্ঘ সময়ের জন্য উত্তপ্ত প্লাজমা ও কয়েল যথেষ্ট সময় ধরে রাখা বেশ শ্রমসাধ্য প্রক্রিয়া। সোভিয়েত বিজ্ঞানী নাটান ইয়াভলিনস্কি ১৯৫৮ সালে প্রথম টোকামাক ডিজাইন করেন। যদিও এমন একটি চুল্লি পুরোপুরি তৈরি করা যায়নি, যা বেশি শক্তি উৎপন্ন করতে পারে।

দক্ষিণ কোরিয়ার কেস্টার পারমাণবিক চুল্লি
ছবি: কোরিয়া ইনস্টিটিউট অব ফিউশন অ্যানার্জি

গবেষণাগারের পরিচালক সি-উ ইউন বলেন, ‘২০২৬ সালের মধ্যে ৩০০ সেকেন্ডের জন্য ১৮ কোটি ফারেনহাইট (প্রায় ১০ কোটি সেন্টিগ্রেড) তাপমাত্রা তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছি আমরা। ফিউশন রিঅ্যাক্টরে খুব উচ্চ তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়, সূর্যের চেয়ে অনেক গুণ বেশি। নক্ষত্রের কেন্দ্রের ভেতরে যেখানে ফিউশন স্বাভাবিকভাবে ঘটে, তার চেয়ে অনেক কম চাপে কাজ করতে হয়। সূর্যের প্রকৃত মূল অংশের তাপমাত্রা প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ ফারেনহাইট বা ১ কোটি ৫০ লাখ সেন্টিগ্রেড। সেখানকার চাপ পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠে বায়ুচাপের প্রায় ৩৪ হাজার গুণের সমান। সেই তাপমাত্রায় প্লাজমা তৈরি করা তুলনামূলকভাবে সহজ। পৃথিবীতে এমন চুল্লি নির্মাণ করা প্রযুক্তিগতভাবে কঠিন।

সূত্র: লাইভ সায়েন্স