দেখে নিন বিবিসির ১০০ নারী তালিকায় বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তিতে কারা আছেন

২০২৩ বিশ্বজুড়ে নানা কাজে আলোচিত ১০০ জন প্রভাবশালী ও অনুপ্রেরণাদায়ী নারীর তালিকা প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। বিবিসি ১০০ নারী ২০২৩ শীর্ষক এই তালিকায় নারীদের গল্প, নারীর এগিয়ে যাওয়া, পৃথিবীর নানা সমস্যা-সংকটে তাঁদের আলোচিত ভূমিকার বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছে। বিবিসি ১০০ নারী কার্যক্রমের গবেষণা দল সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে। বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস ল্যাঙ্গুয়েজ টিম ও বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন এই তালিকার আলোচিত নারীদের তথ্য সংগ্রহ করে।

বিবিসির ভাষ্যে, ‘আমরা এমন নারীদের খুঁজেছি, যাঁরা গত ১২ মাসে সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন বা গুরুত্বপূর্ণ গল্পে প্রভাব রেখেছেন। এসব নারীর অনুপ্রেরণাদায়ক গল্প আছে। ক্লাইমেট পাইওনিয়ার্স, সংস্কৃতি ও শিক্ষা, বিনোদন ও ক্রীড়া, রাজনীতি ও সচেতনতা এবং বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি শ্রেণিতে এবার ১০০ নারীর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।’

বিবিসির ১০০ নারী তালিকায় বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যাঁরা স্থান পেয়েছেন, চলুন তাঁদের সম্পর্কে জেনে নিই। এই শ্রেণিতে যুক্ত কয়েকজন নারীর নাম আবার ক্লাইমেট পাইওনিয়ার্স শ্রেণিতেও দেখা যায়।

কণার খোঁজে আনামারিয়া ফন্ট ভিলারোয়েল
কণা পদার্থবিদ, ভেনেজুয়েলা
কণা পদার্থবিদ্যার গবেষক অধ্যাপক আনামারিয়া ফন্ট ভিলারোয়েল। তিনি সুপারস্ট্রিং তত্ত্ব নিয়ে কাজ করেন। এই তত্ত্ব প্রকৃতির সব কণা ও মৌলিক শক্তিকে ক্ষুদ্র ও স্পন্দিত শক্তিবিশেষ হিসেবে মনে করে। তাঁর গবেষণা পদার্থবিজ্ঞান ও কোয়ান্টাম মাধ্যাকর্ষণ গঠনের ক্ষেত্রে তত্ত্ব সম্পর্কে বুঝতে সহায়তা করছে। আনামারিয়ার গবেষণার মাধ্যমে কৃষ্ণগহ্বর ও বিগ ব্যাংয়ের পরে প্রথম দিকের মুহূর্তগুলোর বর্ণনা সম্পর্কে জানার সুযোগ হচ্ছে। অধ্যাপক আনামারিয়া ফন্ট ভিলারোয়েল আগে ভেনেজুয়েলায় ফান্ডাসিয়ান পোলার পুরস্কার পেয়েছেন। ২০২৩ সালের ইউনেসকো ‘উইমেন ইন সায়েন্স’ পুরস্কারে ভূষিত হন এই বিজ্ঞানী।

দাবানল শনাক্তকারী সোনিয়া কাস্টনার
দাবানল শনাক্ত করার প্রযুক্তির উদ্ভাবক, যুক্তরাষ্ট্র
চলতি বছর বিশ্বের নানা প্রান্তে বেশ কয়েকটি বড় দাবানলের কারণে বনাঞ্চল ও পরিবেশে দুর্যোগ দেখা যায়। অগ্নিনির্বাপণ–কর্মীরা প্রায়ই দাবানলের মাত্রা ও বিস্তারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেন না। সে সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্ভাবক সোনিয়া কাস্টনার নতুন একটি সমাধান তৈরি করেছেন। দাবানল শনাক্ত করতে বিশেষ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন তিনি। এ জন্য বিশেষায়িত একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্যানো এআই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করছে। এই প্রযুক্তি যে স্থানে দাবানল ঘটে, তার প্রাকৃতিক অবস্থান স্ক্যান করে অগ্নিনির্বাপণে সিদ্ধান্ত নিয়ে সহায়তা করে। দাবানল বা অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে জনসাধারণের কাছ থেকে আর ফোনকলের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। কাস্টনার ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন প্রযুক্তি স্টার্টআপে কাজ করেছেন।

‘আমাকে মানুষের উদ্ভাবনের অবিশ্বাস্য শক্তি বেশ আশা জোগায়। জলবায়ু–সংকটের খারাপ প্রভাব মোকাবিলায় সহায়তা করার জন্য আমি প্রযুক্তি ও ডেটাচালিত সমাধান প্রত্যক্ষভাবে কাজ করতে দেখেছি।’

‘আমাকে মানুষের উদ্ভাবনের অবিশ্বাস্য শক্তি বেশ আশা জোগায়। জলবায়ু–সংকটের খারাপ প্রভাব মোকাবিলায় সহায়তা করার জন্য আমি প্রযুক্তি ও ডেটাচালিত সমাধান প্রত্যক্ষভাবে কাজ করতে দেখেছি।’
সোনিয়া কাস্টনার

অভিযাত্রী গাইড মার্সেলা ফার্নান্দেজ
কলম্বিয়া
জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে কলম্বিয়ার হিমবাহ দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। এই হিমবাহ স্থানীয় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্য মিঠা পানির একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য উৎস। এ সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে মার্সেলা ফার্নান্দেজ তাঁর এনজিও কামব্রেস ব্ল্যাঙ্কাস (ইংরেজি নাম হোয়াইট পিকস) প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা হিমবাহ গলে যাওয়ার সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াচ্ছেন। ১৪টি হিমবাহের মধ্যে এখন ৬টি অবশিষ্ট রয়েছে। এগুলোও মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বৈজ্ঞানিক অভিযানের মাধ্যমে মার্সেলা পর্বতারোহী, ফটোগ্রাফার, বিজ্ঞানী ও শিল্পীদের নিয়ে কাজ করছেন। তাঁরা জলবায়ু পরিবর্তনের নানা বিষয় পর্যবেক্ষণ করেন। হিমবাহের ক্ষতি রোধ করার জন্য সৃজনশীল উপায় নিয়ে কাজ করছে মার্সেলা। এ জন্য তিনি পাজাবর্দো বা শান্তির বোর্ড তৈরি করেছেন। তিনি কলম্বিয়ার ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে চলা অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র সংঘাতময় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাতেও কাজ করে চলেছেন।

‘হিমবাহের অনুপস্থিতি আমাকে দুঃখ মোকাবিলা করতে শিখিয়েছে। আপনি যখন তাদের গল্প শুনবেন, তখন আপনি এমন ক্ষতির কথা শুনবেন, যা আমরা আর ঠিক করতে পারব না। তবে আমরা এখনো কিছু কাজ করে তাদের রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে পারি।’
মার্সেলা ফার্নান্দেজ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞ টিমনিট গেব্রু
যুক্তরাষ্ট্র
একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞ কম্পিউটার বিজ্ঞানী টিমনিট গেব্রু। তিনি ডিস্ট্রিবিউটেড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি বড় বড় প্রতিষ্ঠান থেকে প্রভাবমুক্ত স্বতন্ত্র, কমিউনিটিভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তিতে জাতিগত পক্ষপাতের সমালোচনা করেন। গেব্রু একটি অলাভজনক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন, তা কৃষ্ণবর্ণসহ সব মানুষের অন্তর্ভুক্তি উন্নত করতে কাজ করছে। ইথিওপিয়ান বংশোদ্ভূত এই কম্পিউটার বিজ্ঞানী কোডিং শেখানোর প্রতিষ্ঠান অ্যাডিসকোডারের পরিচালনা বোর্ডে রয়েছেন। এই প্রতিষ্ঠানটি ইথিওপিয়ান শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রামিং শেখায়। ২০২০ সালে গুগলের নৈতিক এআই দলের সহ-প্রধান হিসেবে কাজ করেন তিনি। সে সময় একটি একাডেমিক পেপারে সংখ্যালঘু, প্রান্তিক মানুষ এবং অঞ্চলের বিরুদ্ধে কাঠামোগত পক্ষপাতসহ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় ব্যবহৃত ভাষার মডেলের সমস্যা উত্থাপন প্রকাশ করেন। সেই নিবন্ধের জন্য গুগল তাঁকে বরখাস্ত করে। যদিও গুগল তাঁর গবেষণাপত্রটি পূর্ণ না বলে ঘোষণা দেয়। তিনি পদত্যাগ করেন বলে গুগল জানায়। যদিও গেব্রু কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের কারণে বরখাস্ত হয়েছিলেন বলে মনে করেন।

সামাজিক মনোবিজ্ঞানী ফ্যাবিওলা ট্রেজো
মেক্সিকো
সামাজিক মনোবিজ্ঞানী ফ্যাবিওলা ট্রেজো। দুই দশক আগে যখন তাঁর একাডেমিক ক্যারিয়ার শুরু করেন, তখন মেক্সিকোতে নারীরা সামাজিক ন্যায়বিচার পেতেন না। এ বিষয়ে তেমন কোনো গবেষণাও ছিল না। ট্রেজো তাঁর কাজের মাধ্যমে গবেষণার পথ উন্মুক্ত করেছেন। তাঁর গবেষণার মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্য, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা এবং নারীর রাজনৈতিক ভাবনা সম্পর্কে জানা যাচ্ছে। নারীদের জন্য লিঙ্গভিত্তিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন তিনি।

তিনি বিশ্বাস করেন কিছু বৈষম্যের কারণে নারীরা বেশি লিঙ্গগতভাবে দুর্বল হয়ে যায়। সচেতনতার মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও ব্যবহারিক কর্মশালায় তিনি মানুষকে জৈবিক জ্ঞান অন্বেষণ করতে সাহায্য করেন। তাঁর কাজ লাতিন আমেরিকার নানা গোষ্ঠী ও স্প্যানিশ-ভাষীদের কাছে নারীর স্বাস্থ্য ও যৌনজ্ঞান–সম্পর্কিত নানা বিষয় সম্পর্কে জানতে সহায়তা করছে।

পরিবেশবিদ ওয়ানজিরা মাথাই
কেনিয়া
পরিবেশবিদ ওয়ানজিরা মাথাই পুরো আফ্রিকা মহাদেশের জন্য একজন অনুপ্রেরণাদায়ী নেতা। ২০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি সামাজিক ও পরিবেশগত পরিবর্তনের পক্ষে কাজ করছেন। তিনি কেনিয়ার আদিবাসী তৃণমূল সংগঠন গ্রিন বেল্ট মুভমেন্টের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই সংগঠন বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়নে কাজ করে। তাঁর মা ২০০৪ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ওয়াঙ্গারি মাথাই এই প্রতিষ্ঠানটি চালু করেন। ওয়ানজিরা এখন ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউটে আফ্রিকা ও গ্লোবাল পার্টনারশিপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এ ছাড়া ওয়াঙ্গারি মাথাই ফাউন্ডেশনের চেয়ার হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বর্তমানে বেজোস আর্থ ফান্ডের পাশাপাশি ক্লিন কুকিং অ্যালায়েন্স ও ইউরোপীয় জলবায়ু ফাউন্ডেশনের আফ্রিকা–বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন।

‘কাজ করতে হবে স্থানীয়ভাবে। আমাদের স্থানীয় উদ্যোগ সমর্থন করতে হবে। গাছভিত্তিক উদ্যোক্তা ও বন পুনরুদ্ধার, পুন:ব্যবহার যোগ্য শক্তিসহ সার্কুলার অর্থনীতি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। সমাজের নিচ থেকে এমনভাবে প্রচেষ্টা আমাকে আশা দেয়। কী সম্ভব তা আমরা দেখতে পারছি।’
ওয়ানজিরা মাথাই

বিজ্ঞানী সুসান চোম্বা
কেনিয়া
সুসান চোম্বা ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউটের একজন পরিচালক। মধ্য কেনিয়ার কিরিনিয়াগা কাউন্টিতে তাঁর শৈশবে তিনি দারিদ্র্যের অভিজ্ঞতা প্রত্যক্ষ করেছেন। যে কারণে অন্যদের জীবন উন্নত করতে তিনি অনুপ্রাণিত। তিনি প্রধাণত বন রক্ষা, প্রাকৃতিক পরিবেশ পুনরুদ্ধার ও আফ্রিকার খাদ্যব্যবস্থার পরিবর্তন নিয়ে উদ্বিগ্ন। কঙ্গো অববাহিকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন থেকে শুরু করে শুষ্ক পশ্চিম আফ্রিকার সাহেলের পরিবেশগত দুর্যোগ নিয়ে চিন্তিত তিনি। চোম্বা ক্ষুদ্র কৃষকদের সঙ্গে কাজ করছেন। তিনি নারী ও যুবকদের নিয়ে কাজ করছেন। কৃষিজমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে সাহায্য করছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্রতা মোকাবিলায় আরও স্থিতিস্থাপক গোষ্ঠী তৈরি করতে সরকার ও গবেষকদের নিয়ে কাজ করছেন।

‘আমি বিশ্ব নেতাদের নিষ্ক্রিয়তায় বেশি প্রভাবিত হয়েছি। যেসব দেশ বেশি কার্বন নিঃসরণকারী, তাদের পথ পরিবর্তন করার অর্থনৈতিক ক্ষমতাও রয়েছে। কিন্তু তারা অর্থ, ক্ষমতা আর রাজনীতির কূটকৌশলে আটকে আছে। এই কষ্টের অনুভূতি থেকে বাঁচতে আমি নিজে মাঠে কাজ করছি।’
সুসান চোম্বা

বিজ্ঞানী রুমাইথা আল বুসাইদি
ওমান
বিজ্ঞানী রুমাইথা আল বুসাইদি ‘উইমেন অ্যান্ড গার্লস, ইউ আর পার্ট অব দ্য ক্লাইমেট সলিউশন’ নামে ২০২১ সালে একটি বিখ্যাত টিইডি (টেড) টক প্রদান করেন। ১০ লাখের বেশি ভিউ পেয়েছে টেড টকটি। আরব নারীদের অধিকারে বিজ্ঞানী রুমাইথা আল বুসাইদি কাজ করছেন।

রুমাইথা আরব ইয়ুথ কাউন্সিল ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ ও ওমানের এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির মাধ্যমে কাজ করছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান বাইডেন প্রশাসনকে জলবায়ুভিত্তিক বৈদেশিক সহায়তা এবং গ্রিনল্যান্ড সরকারকে টেকসই পর্যটন বিষয়ে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। সর্বকনিষ্ঠ ওমানি নারী হিসেবে তিনি দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছান। আরব নারীদের ব্যবসায়িক আলোচনা ও দক্ষতা বিকাশে সাহায্য করার জন্য তিনি ওমেক্স প্রতিষ্ঠা করেন।

‘জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য ১ নম্বর সমাধান হিসেবে নারী ও কন্যাশিশুদের ক্ষমতায়ন করতে হবে। তাদের বহুমাত্রিক প্রভাবে নানা গোষ্ঠীর ভাবনা পরিবর্তন করে আমাদের পৃথিবীকে রক্ষা করতে হবে।’
রুমাইথা আল বুসাইদি

সাউন্ড রেকর্ডিস্ট ইজাবেলা ডুজিক
পোল্যান্ড
হাতে টেপ রেকর্ডার নিয়ে পৃথিবী বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন সাউন্ড রেকর্ডিস্ট ইজাবেলা ডুজিক। পোল্যান্ডে অবস্থিত ইউরোপের প্রাচীনতম সংরক্ষিত বন বিয়ালোয়েইজার নানা শব্দ ধারণের কাজ করছেন তিনি। শব্দ ধারণের কাজ অস্বাভাবিক নয়। আর এমনিতেই এ কাজে পুরুষদের সংখ্যা বেশি। ইজাবেলা জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন, আর সেই কারণে হাতে টেপ রেকর্ডার নিয়ে তাঁর কাজ সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। মাত্র ১২ বছর বয়সে তাঁর পরিবার তাঁকে একটি টেপ রেকর্ডার উপহার দেয়। সে সময় থেকে ইজাবেলা পাখির গানের প্রতি একটি বিশেষ আকর্ষণ বোধ করেন। ইজাবেলা শুধু শব্দ শুনেই নানা পাখির প্রজাতি শনাক্ত করতে পারেন। শব্দের মাধ্যমে সব ভালো আর সৌন্দর্য সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করার অভিজ্ঞতাকে দারুণ মনে করেন ইজাবেলা।

মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক আইনজীবী জেনিফার উচেন্দু
নাইজেরিয়া
মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক আইনজীবী জেনিফার উচেন্দু তরুণদের সংস্থা সাস্টিভাইবস প্রতিষ্ঠা করেন। উচেন্দু আফ্রিকার নানা অঞ্চলের তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু–সংকটের প্রভাব নিয়ে কাজ করছেন। ২০২২ সালে তিনি গবেষণা, প্রচারাভিযান ও জলবায়ু–সচেতনতানির্ভর সাইকোথেরাপি চালু করেন। এর মাধ্যমে আফ্রিকার তরুণদের জলবায়ুনির্ভর আবেগ সম্পর্কে সচেতনতা বিকাশ করছেন। তিনি দ্য ইকো-অ্যাংজাইটি আফ্রিকা প্রকল্প চালু করেন। উচেন্দু মানসিকতা পরিবর্তন করার কাজ করছেন।

‘জলবায়ু–সংকটের ক্ষেত্রে আমি বিভিন্ন ধরনের আবেগ অনুভব করছি। আমি কখনোই একা একা সব কাজ করতে পারব না, কিন্তু আমার সেরা কাজ করতে পারি। অন্যদের সঙ্গে সংহতি প্রদর্শন করার মাধ্যমে আমি নিজের জলবায়ুসংক্রান্ত ভাবনার প্রচার করছি।’
জেনিফার উচেন্দু

ডায়েরি লেখক ও টেকসই উন্নয়নের প্রচারক বায়াং
চীন
ডায়েরি লেখক ও টেকসই উন্নয়নের প্রচারক বায়াং ২০১৮ সালে ইকো-ডায়েরি বা পরিবেশসংক্রান্ত ডায়েরি লিখছেন। এই ডায়েরিতে তিনি স্থানীয় নানা প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতি ও পানির উৎসে নানা পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করে লিখছেন। এ ছাড়া আবহাওয়ার নানা তথ্যাদি রেকর্ড করছে। পাশাপাশি গাছপালা পর্যবেক্ষণ করে যেসব তথ্য পাচ্ছেন, তা লিখে রাখছেন। চীনের কিংহাই প্রদেশে বাস করেন তিনি। এটি তিব্বত মালভূমি এলাকায় অবস্থিত। উচ্চ তাপমাত্রা, হিমবাহ গলে যাওয়া ও মরুকরণের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে বায়াং চিন্তিত। তিনি সানজিয়াংউয়ান উইমেন এনভায়রনমেন্টালিস্ট নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য ও টেকসই উন্নয়নের পক্ষে কাজ করছেন। পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরির মাধ্যমে পরিবর্তন করার চেষ্টা করছেন তিনি। টেকসই উপায়ে লিপবাম, সাবান, ব্যাগসহ নানা কিছু তৈরি করছেন তিনি। স্থানীয় পানির উৎস রক্ষা করতে সবাইকে সচেতন করছেন তিনি।

মিডওয়াইফ (ধাত্রী) নেহা মানকানি
পাকিস্তান
২০২২ সালে পাকিস্তানে বিধ্বংসী বন্যা আঘাত হানে। তখন ধাত্রী নেহা মানকানি তাঁর দক্ষতার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কাজ করেন। তাঁর দাতব্য সংস্থা মামা বেবি ফান্ডের মাধ্যমে ১৫ হাজারের বেশি বন্যাদুর্গত পরিবারকে জীবন রক্ষাকারী শিশু জন্মের জন্য বিশেষ উপকরণ (কিট) ও ধাত্রীসংক্রান্ত যত্ন প্রদান করে। কম খরচে সাশ্রয়ী উপায়ে শিশু জন্মের জন্য নানা সেবা প্রদান করেন তিনি।

‘জলবায়ু-সম্পর্কিত বিপর্যয়ের মধ্যেও মিডওয়াইফদের কাজ গুরুত্বপূর্ণ। পরিস্থিতি যতই খারাপ হোক না কেন আমরা নারীদের প্রজনন, গর্ভাবস্থা ও প্রসবোত্তর যত্ন চালিয়ে নিতে কাজ করছি।’
নেহা মানকানি

অর্থনীতিবিদ এবং নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ক্লডিয়া গোল্ডিন
যুক্তরাষ্ট্র
একজন আমেরিকান অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ ও শ্রম অর্থনীতিবিদ ক্লডিয়া গোল্ডিন। তিনি নারীদের কর্মসংস্থান ও লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে গবেষণার জন্য অর্থনীতিতে এই বছরের নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তৃতীয় নারী হিসেবে ও একক নারী হিসেবে পুরস্কার পান তিনি। গোল্ডিন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির হেনরি লি প্রফেসর। তিনি আয় বৈষম্য, শিক্ষা ও অভিবাসনের মতো বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন।

পশুচিকিত্সক গ্ল্যাডিস কালেমা-জিকুসোকা
উগান্ডা
একজন পুরস্কার বিজয়ী উগান্ডার পশুচিকিত্সক এবং সংরক্ষণবিদ হিসেবে গ্ল্যাডিস কালেমা-জিকুসোকা অনেক দিন ধরে কাজ করছেন। তাঁর দেশের বিপন্ন গরিলাদের বাঁচাতে কাজ করছেন তিনি। গরিলাদের আবাসস্থল জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে ঝুঁকিতে আছে তারা। তিনি মানুষ, গরিলা ও অন্যান্য বন্য প্রাণীর সহাবস্থান নিয়ে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে কাজ করছেন। তিন দশক কাজ করে তার মাধ্যমে গরিলার সংখ্যা ৩০০ থেকে ৫০০-তে উন্নীত হয়েছে। তাঁকে জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি ২০২১ সালে পৃথিবীর চ্যাম্পিয়ন হিসেবে মনোনীত করে।

‘জলবায়ু–সংকট আমাদের জরুরিভাবে সমাধান করা দরকার। এই সংকট প্রশমিত করে মানিয়ে নেওয়ার জন্য উদ্ভাবনী পদ্ধতি রয়েছে।’
গ্ল্যাডিস কালেমা-জিকুসোকা

উদ্যোক্তা বাসিমা আবদুল রহমান
ইরাক
২০১৪ সালে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠী ইরাকের বিশাল অংশ দখল করে নেয়। যুদ্ধের ফলে অনেক ইরাকি শহর ধ্বংস হয়ে যায়। প্রকৌশলী বাসিমা স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স করার পর যুদ্ধ শেষে দেশে ফিরে আসেন। তিনি ইরাকের নানা শহরে গ্রিন বিল্ডিং তৈরির কাজ শুরু করেন। সাশ্রয়ী শক্তি ও দক্ষ প্রযুক্তি-উপকরণ ব্যবহার করে তিনি গ্রিন বিল্ডিং তৈরি করছেন।

‘আমি প্রায়ই জলবায়ু–সংকট নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকি। আমি বুঝতে পারি না আমরা ঝুঁকি কমানোর জন্য কেন কাজ করছি না?’
বাসিমা আবদুল রহমান

সামুদ্রিক বিজ্ঞানী লিয়ান কালিন-আনসওর্থ
যুক্তরাজ্য
সামুদ্রিক ঘাস বা সিগ্রাস কার্বন সঞ্চয় করতে কার্যকর। মাছের বিকাশের জন্য বেশ উপকারী। নানা কারণে এদের আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সামুদ্রিক বিজ্ঞানী লিয়ান কালিন-আনসওর্থ যুক্তরাজ্যের প্রথম সিগ্রাস পুনরুদ্ধার প্রকল্পে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি সামুদ্রিক ঘাসের বীজ রোপণের জন্য একটি দূর নিয়ন্ত্রিত (রিমোট-কন্ট্রোলড) রোবট ব্যবহার করছেন। বিভিন্ন দেশে পানির নিচের তৃণভূমি পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করছেন। সামুদ্রিক গবেষণায় তাঁর ২০ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা আছে।

‘একা কিছু অর্জন করা যায়। অনেক কিছু করার জন্য সবাই এক হয়ে কাজ করার সুযোগ আছে, এতে জ্ঞান ভাগাভাগি করা যায়। আমার পক্ষ থেকে আমি সামুদ্রিক ঘাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থলকে পুনরুজ্জীবিত করতে কাজ করছি।’
লিয়ান কালিন-আনসওর্থ

শিশু অধিকারকর্মী ওলেনা রোজভাদভস্কা
ইউক্রেন
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনীয় শিশুদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। সেই আতঙ্কের স্মৃতি কমাতে সহায়তা করছেন ওলেনা রোজভাদভস্কা। তিনি ভয়েস অব চিলড্রেন প্রতিষ্ঠাতা করে মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা প্রদান করছেন। ইউক্রেনের ডনবাসে ফ্রন্টলাইনের রোজভাদভস্কা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন। ২০১৯ সালে শিশুদের জন্য কাজ শুরু করেন ওলেনা। এই ফাউন্ডেশনের ১৪টি কেন্দ্রে ১০০ জনের বেশি মনোবিজ্ঞানী কাজ করছেন। রোজভাদভস্কা অস্কার মনোনীত ডকুমেন্টারি ‘এ হাউস মেড অব স্প্লিন্টার’–এ নিজের অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ করেন।

বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবক ক্যানান ড্যাগডেভিরেন
তুরস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) মিডিয়া ল্যাবের সহযোগী অধ্যাপক ক্যানান ড্যাগডেভিরেন। তিনি স্তন ক্যানসারের প্রাথমিক শনাক্তকরণের জন্য একটি পরিধানযোগ্য আলট্রাসাউন্ড প্যাচ উদ্ভাবন করেছেন।

তিনি তাঁর খালার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নেন। সেই খালা নিয়মিত ক্যানসার স্ক্রিনিং করা সত্ত্বেও ৪৯ বছর বয়সে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। খালা ছয় মাস পরে মারা যান। খালার শয্যার পাশে থেকে ড্যাগডেভিরেন ডায়াগনস্টিক ডিভাইসের পরিকল্পনা করেন। নতুন এই প্রযুক্তি লক্ষ লক্ষ নারীর জীবন বাঁচাতে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন।

বন ব্যবস্থাপক সুমিনি
ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ার রক্ষণশীল আচেহ প্রদেশে নারীদের নেতা হওয়াটা স্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। নিজের গ্রামে বন্যার কারণ হিসেবে তিনি বন উজাড়ের বিষয়টি বুঝতে পারেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বন ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ শুরু করে করেন সুমিনি। নিজের গ্রাম ডমরন বারু গ্রামের ২৫১ হেক্টর বনভূমি রক্ষায় কাজ করছেন তিনি। এ ছাড়া তিনি সুমাত্রান বাঘ, প্যাঙ্গোলিন এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ বন্য প্রাণী রক্ষায় ভূমিকা রাখছেন।

‘আজকাল ব্যাপকভাবে বন উজাড় ও বন্য প্রাণী শিকার হচ্ছে। সম্মিলিতভাবে জলবায়ু–সংকট মোকাবিলা করতে বনের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। বন বাঁচাও, প্রাণ বাঁচাও।’
সুমিনি

কার্বন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ আনা হুতুনেন
ফিনল্যান্ড
টেকসই প্রযুক্তির ব্যবহারকে গুরুত্ব দিয়ে আনা হুতুনেন ফিনিশ শহর লাহতিতে কাজ করছেন। তাঁর কাজের কারণে সবুজ ও টেকসই নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ কারণে লাহতি ইউরোপীয় গ্রিন ক্যাপিটাল ২০২১ খেতাব পায়। কার্বন ট্রেডিং মডেল তৈরি করে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। এটি বিশ্বের প্রথম অ্যাপ, যা নাগরিকদের পরিবেশবান্ধব পরিবহন ব্যবহার করলে অর্থ বা ক্রেডিট উপার্জনের সুযোগ দেয়। সাইকেল চালানো বা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করলে নাগরিকেরা ক্রেডিট উপার্জন করার সুযোগ পায়।

‘বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন শহরে নাগরিকদের জন্য আরও টেকসই জীবনযাত্রার বিকাশ করতে হবে। আপনি নিজে যুক্ত হন, রূপান্তরের কাজে অংশগ্রহণ করুন।’
আনা হুতুনেন

শল্যবিদ সারা আল-সাক্কা
ফিলিস্তিন
গাজার প্রথম ফিলিস্তিনি নারী শল্যবিদ (সার্জন) ডা. সারা আল-সাক্কা সেখানকার বৃহত্তম হাসপাতাল আল-শিফাতে কাজ করেন। যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে তাঁর অভিজ্ঞতা নথিভুক্ত করতে তিনি ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করছেন। ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালালে আল-শিফা হাসপাতাল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আল-সাক্কা বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পানি ও খাবারের অভাব সম্পর্কে পোস্ট করেন। আল-সাক্কা গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে মেডিসিন ও লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটিতে সার্জারি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন।

চিকিৎসক নাটালি সাইলা
মাল্টা
গর্ভপাতের বিষয়ে মাল্টায় বেশ কিছু কঠোর নিয়ম রয়েছে। ডা. নাটালি সাইলা নারীদের গর্ভপাত বিষয়ে তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেন। তিনি ডক্টরস ফর চয়েস মাল্টার সহপ্রতিষ্ঠাতা। গর্ভপাতকে অপরাধমুক্তকরণ, বৈধকরণ ও গর্ভনিরোধে সচেতনতা বাড়াচ্ছেন তিনি। তিনি একটি হেল্পলাইন প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা গর্ভপাতের আগে, গর্ভপাতের সময় এবং পরে নারীদের সহায়তা দেয়। দেশে প্রজনন স্বাস্থ্যের জ্ঞান উন্নত করতে মাই বডিস ফ্যান্টাস্টিক জার্নি নামে শিশুদের জন্য একটি বই প্রকাশ করেছেন তিনি।

গল্পকার কিয়ুন উ
সিঙ্গাপুর
পরিবেশবাদী ও আধেয় নির্মাতা (কনটেন্ট ক্রিয়েটর) কিয়ুন উ জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন৷ তিনি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম দ্য উইয়ার্ড অ্যান্ড দ্য ওয়াইল্ড তৈরি করেছেন। জলবায়ুবিজ্ঞানকে আরও প্রচার করতে ও সবার কাছে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছেন তিনি। জলবায়ু পরিবর্তনের নানা বিষয় ও তথ্য তিনি সবার কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন গল্পের মাধ্যমে। ক্লাইমেট চিজকেক নামের একটি পডকাস্ট প্রচার করেন তিনি। দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার পরিবেশগত নানা বিষয় এই পডকাস্টে প্রচার করা হচ্ছে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সাময়িকীর একজন ইয়ং এক্সপ্লোরার হিসেবে তিনি কাজ করছেন।

‘জলবায়ু–সংকট জটিল, অপ্রতিরোধ্য আর ভীতিকর বটে। আমরা ভয়ের পরিবর্তে কৌতূহল তৈরির মাধ্যমে এ বিষয়ে কথা বলতে পারি। পৃথিবীর যত্ন নেওয়ার জন্য আমরা যেন আরও সচেতন হই, সে বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে।’
কিয়ুন উ

জলবায়ু ও প্রতিবন্ধকতা অধিকারকর্মী এলহাম ইউসেফিয়ান
যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান
জলবায়ু ও প্রতিবন্ধকতা অধিকারকর্মী এলহাম ইউসেফিয়ান একজন মানবাধিকার আইনজীবী। একজন দৃষ্টিহীন হয়েও এলহাম ইউসেফিয়ান জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট মোকাবিলা করার জন্য কাজ করছেন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কাজ করছেন তিনি। ইরানে জন্মগ্রহণ করা এই আইনজীবী ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন। তিনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতিনিধিত্বকারী এক হাজারের বেশি সংস্থার বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী জোটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের বিষয়টি নীতিনির্ধারক ও রাজনীতিবিদদের সামনে তুলে ধরছেন তিনি। তিনি জলবায়ু–সংকটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বৈশ্বিকভাবে সচেতন করছেন।

‘আমরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হিসেবে জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সমাধান খুঁজে বের করার ক্ষমতা রাখি। আমরা বারবার প্রমাণ করেছি। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে পারে এবং তাদের দেওয়া উচিত।’
এলহাম ইউসেফিয়ান

মেনোপজ–বিষয়ক সচেতনতা প্রচারক ইসাবেল ফারিয়াস মেয়ার
চিলি
ইসাবেল ফারিয়াস মেয়ার নিজের অনিয়মিত মাসিক চক্র কিংবা মেনোপজের কারণে সমস্যায় পড়বেন বলে কখনোই ভাবেননি। নিজের ১৮ বছর হওয়ার আগে তাঁর প্রাথমিক মেনোপজ বা ওভারিয়ান–সংক্রান্ত সমস্যা ধরা পড়ে। এ অবস্থায় ডিম্বাশয় সঠিকভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ৪০ বছরের কম বয়সী আনুমানিক ১ শতাংশ নারী এই সমস্যায় ভুগছেন। নারীরা মেনোপজের মতো উপসর্গে খুব অল্প বয়সেই ভোগেন। ফারিয়াস অস্টিওপোরোসিস-সহ নারী হিসেবে নানা সংকটের মুখে পড়েছেন। এখন ৩০ বছর বয়সী এই সাংবাদিক লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে আগাম মেনোপজের জন্য আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক চালু করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি নারী স্বাস্থ্যের নানা তথ্য শেয়ার করছেন। বিভিন্ন মিথের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ভূমিকা রাখছে।

ট্রাফিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অ্যাস্ট্রিড লিন্ডার
সুইডেন
ট্রাফিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অ্যাস্ট্রিড লিন্ডার নিজের আগ্রহ থেকে ট্রাফিক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছেন। কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন গাড়ির নিরাপত্তায় পরীক্ষা ডামি পুতুল ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব পুতুল সাধারণভাবে পুরুষ শরীরের আঙ্গিকে তৈরি। গাড়ির দুর্ঘটনা–সম্পর্কিত নানা পরীক্ষায় এসব পুরুষ ডামি ব্যবহার করে গাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। পরিসংখ্যান দেখায় গাড়ি দুর্ঘটনা বা সংঘর্ষের ক্ষেত্রে নারীদের আঘাত বা মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। প্রকৌশলী অ্যাস্ট্রিড লিন্ডার পুরুষ ডামি পরিবর্তন করার জন্য কাজ করেছেন। তিনি বিশ্বের প্রথম নারী ডামি পুতুল তৈরি করে ক্র্যাশ টেস্ট প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সুইডিশ ন্যাশনাল রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ট্রাফিক সেফটির অধ্যাপক ও চালমার ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক লিন্ডার বায়োমেকানিকস ও রাস্তার দুর্ঘটনা প্রতিরোধবিষয়ক একজন বিশেষজ্ঞ।

স্বেচ্ছাসেবক উদ্ধারকর্মী আমিনা আল-বিশ
সিরিয়া
২০১৭ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমিনা আল-বিশ সিরিয়া সিভিল ডিফেন্সের প্রথম নারী স্বেচ্ছাসেবকদের একজন হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হোয়াইট হেলমেট নামেও পরিচিত। সিরিয়ায় জীবন বাঁচানো ও আহত বেসামরিক নাগরিকদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। আমিনা ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিরিয়া ও তুরস্কে আঘাত হানা ভূমিকম্পে উদ্ধারকারী হিসেবে কাজ করেন। আল-বিশ বর্তমানে উত্তর সিরিয়ায় নারীদের জীবন উন্নত করার জন্য কাজ করছেন। ব্যবসায়ে প্রশাসনে উচ্চশিক্ষা নেওয়া আল-বিশ শান্তিপূর্ণ সিরিয়া গড়তে কাজ করছেন।

জৈব গ্যাস উদ্যোক্তা ট্রান গ্যাম
ভিয়েতনাম
২০১২ সালে জৈব গ্যাস উদ্যোক্তা ট্রান গ্যাম ভিয়েতনামের বিভিন্ন খামার জলবায়ুবান্ধব শক্তির উত্স চালুর কাজ শুরু করেন। দুই সন্তানের মা গ্যাম ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে একটি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করে ব্যবসা শুরু করেন। পরে তিনটি প্রদেশে কার্যক্রম বিস্তৃত করেন। তাঁর প্রকল্প কৃষকদের গবাদিপশুর মলকে সার হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ করে দিচ্ছে। পুকুরের আগাছা, কচুরিপানা ও অন্যান্য বর্জ্যকে বায়োগ্যাসে পরিণত করে খরচ কমাতে সাহায্য করছেন তিনি। প্রাকৃতিক গ্যাসের চেয়ে এই গ্যাস অনেক বেশি টেকসই শক্তির উত্স হিসেবে বিবেচিত হয়। রান্না ও যেকোনো পরিবার চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে।

‘আমাদের অবশ্যই বাঁচতে হবে। অবশ্যই ভালোভাবে বাঁচতে হবে। শারীরিক ব্যায়াম, সুষম খাদ্য খাওয়া এবং পরিমিত ঘুমের মাধ্যমে আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারি। আমি মানুষকে অর্গানিক বা জৈব-পণ্যভিত্তিক জীবনযাপন করতে উৎসাহ দিচ্ছি। নিজস্ব ফল ও শাকসবজি চাষ করতে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি। শাকসবজিতে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছি।’
ট্রান গ্যাম