অপরিচিত জায়গায় কেন স্মার্টফোনের ওয়াই–ফাই বন্ধ রাখবেন

অপরিচিত ওয়াই–ফাইয়ের সঙ্গে যুক্ত না হওয়া ভালোছবি: ফ্রিপিক্স

স্মার্টফোন ব্যবহার না করলেও এটি আশপাশের ওয়াই–ফাই নেটওয়ার্ক খুঁজতে পারে। সুবিধার জন্য বা অভ্যাসবশত কেউ কেউ সব সময় ফোনের ওয়াই–ফাই চালু রাখেন। সাধারণত ব্যবহারকারীরা ধরে নেন এতে কোনো ঝুঁকি নেই। কিন্তু বাস্তবে অপরিচিত স্থানে ওয়াই–ফাই সক্রিয় থাকলে স্বয়ংক্রিয় স্ক্যানিংয়ের কারণে ফোন নানা নিরাপত্তাঝুঁকির মুখোমুখি হতে পারে। অটোমেটিক নেটওয়ার্ক শনাক্তকরণ, ব্যাকগ্রাউন্ড সংযোগ বা অজানা হটস্পটে অজান্তে যুক্ত হয়ে যাওয়া এসব সুযোগ কাজে লাগিয়ে সাইবার অপরাধীরা সহজেই ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারে।

যেহেতু দৈনন্দিন কাজের বড় অংশ এখন অনলাইনে সম্পন্ন হয়, তাই গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর নিরাপত্তা পদক্ষেপ হলো অপরিচিত স্থানে থাকলে স্মার্টফোনের ওয়াই-ফাই বন্ধ করে নেওয়া। একটি পিয়ার রিভিউড গবেষণায় দেখা গেছে, সব সময় সক্রিয় থাকা ওয়াই–ফাই স্ক্যানিং ডিভাইসকে ‘ভুয়া অ্যাক্সেস পয়েন্ট’ ধরনের আক্রমণের জন্য আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। এসব আক্রমণে ব্যবহারকারীর অজান্তেই সংবেদনশীল তথ্য হাতিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ফোনের স্বয়ংক্রিয় ওয়াই–ফাই অনুসন্ধান প্রক্রিয়া থেকে তথ্য ফাঁস হতে পারে।

অপরিচিত জায়গায় ওয়াই-ফাই বন্ধ রাখার প্রধান উপকারিতা

অপরিচিত জায়গায় ওয়াই–ফাই বন্ধ রাখলে অনিরাপদ নেটওয়ার্কে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। ওয়াই–ফাই চালু থাকলে ফোন পাবলিক নেটওয়ার্কে ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই সংযোগের চেষ্টা করতে পারে। ক্যাফে, বিমানবন্দর বা রেলস্টেশনের মতো স্থানে ব্যবহৃত পাবলিক নেটওয়ার্ক সাধারণত এনক্রিপশনবিহীন হয়। অজান্তে এসব নেটওয়ার্কে যুক্ত হলে পাসওয়ার্ড, বার্তা, ব্যাংকিং তথ্য বা ব্রাউজিং ডেটা চুরি হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। ভুয়া বা ক্ষতিকর হটস্পটের ফাঁদ থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়।

অনেক সাইবার অপরাধী এমন নেটওয়ার্ক তৈরি করে, যার নাম প্রকৃত নেটওয়ার্কের মতোই দেখায়। যেমন ‘এয়ারপোর্ট ফ্রি ওয়াই–ফাই’ বা ‘হোটেল গেস্ট ওয়াই–ফাই’। ফোনে আগে যুক্ত থাকা নেটওয়ার্কের সঙ্গে নাম মিললে সেগুলোকে পরিচিত মনে করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত হতে পারে। একবার সংযোগ স্থাপিত হলে হামলাকারী ব্যবহারকারীর ডেটা পর্যবেক্ষণ করতে পারে অথবা ভুয়া লগইন পেজে পাঠিয়ে তথ্য চুরি করতে পারে। অপরিচিত জায়গায় ওয়াই–ফাই বন্ধ রাখলে প্রতিটি সংযোগই ব্যবহারকারীকে যাচাই করে নিতে হয়, ফলে ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে কমে। এ ছাড়া ওয়াই–ফাই বন্ধ থাকলে ট্র্যাকিং ও অবস্থান নজরদারিও কমে যায়।

শপিংমল, পরিবহনকেন্দ্র বা বিজ্ঞাপনদাতারা প্রায়ই ওয়াই–ফাই সিগন্যাল পর্যবেক্ষণ করে মানুষের চলাচলের ধরন বিশ্লেষণ করেন। ব্যবহারকারী নেটওয়ার্কে সংযুক্ত না থাকলেও ফোনের স্ক্যানিং সিগন্যাল থেকে একটি ইউনিক পরিচয় শনাক্ত করা যায়। ওয়াই–ফাই বন্ধ রাখলে এ ধরনের প্যাসিভ ট্র্যাকিংয়ের ঝুঁকি কমে এবং ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবসায়িক নজরদারি থেকে সুরক্ষিত থাকে। ওয়াই–ফাই সব সময় চালু থাকলে ফোন আশপাশের নেটওয়ার্ক খুঁজতে গিয়ে অতিরিক্ত ব্যাটারি খরচ করে। ফলে যন্ত্রের সার্বিক কার্যক্ষমতাও কমে যায়। অপ্রয়োজনীয় সময়ে ওয়াই–ফাই বন্ধ রাখলে ব্যাটারি সাশ্রয় হয় এবং ব্যাকগ্রাউন্ডের কাজ কমে, ফলে ফোনের গতি ও কার্যক্ষমতা বজায় থাকে।

গোপনীয়তা রক্ষায় যা করা জরুরি

অপরিচিত নেটওয়ার্কে স্বয়ংক্রিয় সংযোগ বা ‘অটো–জয়েন’ ফিচার বন্ধ রাখলে বাড়তি সুরক্ষা পাওয়া যায়। ব্যবহারকারীর প্রয়োজন নেই এমন পুরোনো নেটওয়ার্ক তালিকা থেকে মুছে ফেললে স্বয়ংক্রিয় সংযোগের ঝুঁকি কমে। বাইরে ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় মোবাইল ডেটা বা অথেনটিক ভার্চুয়াল ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক ব্যবহার করাই উত্তম। পাবলিক ওয়াই–ফাই ব্যবহার করে ব্যাংকিং বা সংবেদনশীল অ্যাকাউন্টে লগইন না করাই নিরাপদ। পাশাপাশি যে নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হচ্ছেন, তার নাম মিলিয়ে দেখাও জরুরি।

কখন ওয়াই-ফাই চালু রাখা নিরাপদ

বাড়ি বা কর্মস্থলের মতো নিরাপদ পরিবেশে ওয়াই–ফাই ব্যবহার করা সাধারণত ঝুঁকিমুক্ত। এসব নেটওয়ার্কে সাধারণত শক্তিশালী নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকে। অধিকাংশ ঝুঁকি তৈরি হয় অপরিচিত স্থানে, যেখানে পাবলিক হটস্পট বেশি এবং সাইবার অপরাধীরা ডিভাইসের স্বয়ংক্রিয় আচরণকে কাজে লাগাতে পারে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া