বাজেটে আগে ঘোষিত প্রণোদনার বাস্তবায়ন চান ফ্রিল্যান্সাররা

তরুণ প্রজন্মের অনেকেই ঝুঁকেছেন ফ্রিল্যান্সিংয়ের দিকেফাইল ছবি

আগামী অর্থবছরের বাজেট–ভাবনা শুরু হয়ে গেছে বিভিন্ন খাতে। দেশে মুক্ত পেশজীবী বা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের কাজ করেন অনেক তরুণ। বিভিন্ন উৎসের হিসাবে, দেশে এখন প্রায় ১০ লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। বছরে তাঁরা প্রায় ১৯০ কোটি মার্কিন ডলার (প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা) আয় করছেন। রাজধানী তো বটেই, দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় ছড়িয়ে আছেন অনেক ফ্রিল্যান্সার। বাজেট ঘিরে তাঁদেরও কিছু চাওয়া-পাওয়া রয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে এই খাতের উন্নয়নের জন্য ফ্রিল্যান্সাররা কী ভাবছেন? তা নিয়েই এ আয়োজন। বলেছেন দেশের বিভিন্ন স্থানের সফল কয়েকজন ফ্রিল্যান্সার।

সুবীর নকরেক
সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের মধুপুরের ফ্রিল্যান্সার সুবীর নকরেক বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের বাজেটে যা চেয়েছিলাম, এবারও সেটি চাই। ফ্রিল্যান্সারদের প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু সেটি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এই প্রণোদনার ব্যবস্থা যাতে আগামী অর্থবছরে করা হয়, সেই অনুরোধ থাকবে। পাশপাশি ফ্রিল্যান্সারদের আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত সব ধরনের কর আরোপ থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কম্পিউটার ফ্রিল্যান্সারদের মৌলিক চাহিদার মতো। এসবের দাম এখন প্রায় দ্বিগুণ। এসব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে এলে ফ্রিল্যান্সিং খাত এগিয়ে যাবে।’ গ্রামপর্যায়ে দ্রুতগতির ইন্টারনেট ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের কথাও বলেছেন তিনি।

আরও পড়ুন
সুমন সাহা
সংগৃহীত

রাজধানীতে বসে দল বানিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করেন সুমন সাহা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে যাঁরা তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ের ফ্রিল্যান্সার এবং যাঁরা ছোট উদ্যোক্তা, তাঁরা কিন্তু ঢাকা বা অন্য বিভাগীয় শহরগুলোতে থাকতে চান না। তাঁদের আগ্রহ নিজের জেলায় বা শহরে বসে কাজ করা। তাঁরা চান, স্থানীয় তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে, কিন্তু পারছেন না নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের অভাবে। এ ছাড়া উচ্চগতির (ব্রডব্যান্ড) ইন্টারনেট সংযোগের সমস্যা অনেক স্থানেই। এই দুটি বিষয়ের উন্নয়নের একটা দিকনির্দেশনা বাজেটে থাকা উচিত। ফ্রিল্যান্সারদের আয়ের ওপর কর আরোপ করা হলে বৈদেশিক মুদ্রা আসার গতি ধীরে ধীরে কমে যাবে। কারণ, ফ্রিল্যান্সাররা ব্যাংকিং চ্যানেলের পরিবর্তে অন্য মাধ্যমে আয়ের অর্থ দেশে আনবেন। এর ফলে ডলার বিদেশেই থেকে যাবে।’

আরও পড়ুন
আমির হোসেন
সংগৃহীত

খাগড়াছড়ির ফ্রিল্যান্সার আমির হোসেন বলেন, ‘এবারের বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করা ও এই খাতকে করমুক্ত রাখার জোর দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি এ দেশে পেপলের মতো কোম্পানিগুলোকে নিয়ে আসতে পারলে এই খাতে আরও সফল উদ্যোক্তা ও ফ্রিল্যান্সার তৈরি হবে।’

তানজিবা রহমান
সংগৃহীত

ফ্রিল্যান্সারদের উন্নয়নে কাজ করা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (বিএফডিএস) চেয়ারম্যান তানজিবা রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের ফ্রিল্যান্সিং খাতে কাজ করেন মোট ১০ লাখ ফ্রিল্যান্সার। তবে দক্ষতার অভাবে প্রতিবছর ১০ হাজার ফ্রিল্যান্সার ঝরে যান। আমরা ফ্রিল্যান্সারদের প্রণোদনার বিষয়টি নিয়েও কাজ করছি। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঘোষিত হলেও সেটি বাস্তবায়িত হয়নি। শীঘ্রই একটা ভালো খবর পাব বলে আশা করছি। এটা হলে ফ্রিল্যান্সারা বৈধ পথে টাকা আনতে উৎসাহিত হবেন।’

ফ্রিল্যান্সিং একটি উঠতি পেশা। তাই এই মুহূর্তে ফ্রিল্যান্সাদের কোনো শুল্ক ও করের আওতায় আনা উচিত হবে না বলে মনে করেন তানজিবা রহমান।