শুধু প্রশ্নোত্তরের মধ্যেই এটি সীমাবদ্ধ নয়। আপনি একজন মানুষের সঙ্গে ঠিক যেভাবে কথা বলতে পারেন, চ্যাটজিপিটির সঙ্গেও সেভাবে কথা বলতে পারবেন। যেকোনো কাজে সাহায্যও নিতে পারেন। পরীক্ষার প্রস্তুতি দরকার? কোন বিষয়ে প্রস্তুতি নেবেন, তা জানালে সে সাহায্য করবে। কোনো কঠিন একটা বিষয় বুঝতে পারছেন না? চ্যাটজিপিটিকে বলুন, আপনাকে সহজ ভাষায় সে বুঝিয়ে বলবে। যেমন Explain quantum computing in simple terms লিখে এন্টার করলে সে আপনাকে খুব সহজ ভাষায় কোয়ান্টাম কম্পিউটিং বুঝিয়ে দেবে।
কিছু ব্যবহারিক দিক
চ্যাটজিপিটি আপনার ডিজিটাল সহকারী হিসেবে কাজ করবে। যেমন একজন লেখক হয়তো কোনো একটা বিষয়ে নিবন্ধ লিখবেন। এখন চ্যাটজিপিটিকে বললে সে লিখে দেবে। কত শব্দের মধ্যে লিখতে হবে, কত অনুচ্ছেদ হবে, সবই বলে দেওয়া যাবে।
একজন প্রোগ্রামার হয়তো একটা প্রকল্পে কাজ করছেন। কিছু সংকেত বা কোড লেখার ব্যপারে তাঁর সাহায্য দরকার। তিনি সহজেই চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে কোড লিখে নিতে পারবেন। যেমন সিএসভি ফাইল পড়ার জন্য পাইথনে কোড লিখতে হবে। চ্যাটজিপিটিকে বললে কীভাবে একটা সিএসভি ফাইল পড়া (রিড) যায়, পাইথন প্রোগ্রামিং ভাষায় সেটির কোড লিখে দেবে। প্রোগ্রামিংয়ের কোনো কনসেপ্ট না বুঝলে তা–ও সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দিতে পারবে।
জরুরি কোনো সাহায্য লাগলে তা–ও পাওয়া যাবে চ্যাটজিপিটির কাছে। যেমন দুর্ঘটনায় পড়ে কারও শরীর থেকে রক্তপাত হচ্ছে। সে যদি জানতে চায়, কীভাবে রক্তপাত বন্ধ করা সম্ভব, চ্যাটজিপিটি উপায়গুলো বলে দেবে।
কেউ চাইলে চ্যাটজিপিটির সঙ্গে গেমও খেলতে পারবে। লুডু বা যেকোনো লেখা বা টেক্সটভিত্তিক কোনো গেম খেলা যাবে।
চ্যাটজিপিটির অসুবিধা
চ্যাটজিপিটি ইন্টারনেটে থাকা লেখা ব্যবহার করে প্রশিক্ষিত হয়েছে। যেহেতু ইন্টারেন্টে প্রচুর ভুল তথ্য রয়েছে, তাই চ্যাটজিপিটির সব লেখা সঠিক না–ও হতে পারে।
এটি প্রশিক্ষণ তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই তথ্যগুলো তৈরি করে। তাই এটি যেসব তথ্য তৈরি করে, সেগুলো পুরোপুরি মৌলিক না–ও হতে পারে।
যে কাজ বা চাকরির বিকল্প হয়ে উঠতে পারে চ্যাটজিপিটি
কিছু কিছু কাজ আছে, যেগুলোর পুনরাবৃত্তি হয়। বারবার একই ধরনের যেসব কাজ করতে হয়, সেসব কাজ খুব সহজেই চ্যাটজিপিটি বা এমন প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত হয়ে যাবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে অনেকেই এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করা শুরু করেছেন। যেমন গ্রাহকসেবার মতো কাজগুলো। বিভিন্ন পণ্যের বিক্রয়োত্তর কাজগুলো এখন খুঁজে নেবে চ্যাটজিটিপি, এমন কোনো আশঙ্কা নেই।
বাংলাদেশে চ্যাটজিপিটির প্রভাব কেমন পড়বে
বাংলাদেশের অনেক এজেন্সি ও ফ্রিল্যান্সার যেহেতু অ্যাডমিন সাপোর্ট, গ্রাহকসেবা এবং কল সেন্টারের সেবা দিয়ে আসছে, তাদের চাকরির বাজার ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসবে। আবার সফটওয়্যার তৈরির কাজ যাঁরা করছেন, তাঁদের কাজের পরিধি বাড়বে। যেহেতু এই চ্যাটজিপিটি এবং এ ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সফটওয়্যার জনপ্রিয় হচ্ছে, তাই এগুলো ব্যবহার করে নতুন নতুন অ্যাপ তৈরি করা যাবে। বাজারে এ ধরনের অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের চাহিদা তৈরি হবে। তাই কেউ যদি নিজেকে এসব বিষয়ে দক্ষ করে তোলেন, তাহলে ভবিষ্যতে ভালো করতে পারবেন।
জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট ফাইভআর কাজের নতুন বিভাগ যুক্ত করেছে গত সপ্তাহে। এই বিভাগের মধ্যে রয়েছে চ্যাটজিপিটি অ্যাপ্লিকেশন, মিডজার্নি আর্টিস্ট, চ্যাটবট ডেভেলপার ইত্যাদি। এসবই হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি নতুন প্রযুক্তি।
গুগলও এই সপ্তাহে চ্যাটজিপিটির মতো বার্ড নামের একটি চ্যাটবটের ঘোষণা দিয়েছে। এত বছর যাঁরা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন নিয়ে কাজ করতেন, তাঁদের এখন এআই–সম্পর্কিত কাজগুলোর জন্যও অপটিমাইজেশন করতে হবে। তাই কাজের পরিধি কিছু ক্ষেত্রে কমলেও অনেক ক্ষেত্রেই বেড়ে যাবে। দরকার শুধু নিজেকে নতুন বিষয়ে দক্ষ করে তোলা।
চ্যাটজিপিটি মানুষের বন্ধু হবে না শত্রু, তা বলার সময় এখনো আসেনি। আপাতত বন্ধুই ভাবা যাক।
লেখক: ফ্রিল্যান্স সফটওয়্যার প্রকৌশলী