কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভুলভাবে ক্যানসার শনাক্ত করতে পারে

নতুন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রোগ্রাম বিকশিত হচ্ছে, যা ক্যানসার কোষ নির্ভুলভাবে শনাক্ত করতে পারে। চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ প্রোগ্রাম বা টুল ক্যানসার নির্ণয়ের প্রক্রিয়াকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।

একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, বিদ্যমান ব্যবস্থার চেয়ে এআইয়ের ওই অ্যালগরিদম বেশ কার্যকরভাবে ক্যানসার শনাক্ত করতে পারে। সিটি স্ক্যানে যেমন ক্যানসারযুক্ত কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি দেখা যায়, তেমনি এআই টুলও তা শনাক্ত করতে পারে।

ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের দ্য ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্চ ও রয়্যাল মার্সডেন এনএইচএস ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের বিশেষজ্ঞরা এআই টুলটি নকশা করেন, যা ক্যানসার কোষ দ্রুত শনাক্ত করে রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে এক কোটি মানুষের ক্যানসারে মৃত্যু হয়। আর বিশ্বজুড়ে প্রায় ছয়জনের একজন ক্যানসারে মারা যান।

রয়্যাল মার্সডেনের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি রেজিস্ট্রার ডা. বেঞ্জামিন হান্টার বলেন, ‘ক্যানসারের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের ওপর দৃষ্টি রেখে শুরুতেই ক্যানসার শনাক্ত করে এই টুল ভবিষ্যতে প্রাথমিক স্তরে ক্যানসার শনাক্ত করার হার বাড়িয়ে এর চিকিৎসা সফল করবে বলে আমরা আশা করি।’

গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষক দলটি রেডিওমিক্সের মাধ্যমে প্রায় ৫০০ রোগীর ফুসফুসে শনাক্ত কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির সিটি স্ক্যান ব্যবহার করে এআই অ্যালগোরিদম সমৃদ্ধ করেন। রেডিওমিক্স কৌশল ওই সব সিটি স্ক্যান থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের করে, যা সাধারণত মানুষের চোখে ধরা পড়ে না। পরে নির্ভুলভাবে ক্যানসারযুক্ত কোষ এআই মডেলটি শনাক্ত করতে পারে কি না, তা পরীক্ষা করা হয়।

ক্যানসার পূর্বানুমানে মডেলটি কতটা কার্যকর, তা যাচাই করতে সমীক্ষায় একটি মান ব্যবহার করা হয়, যার নাম ছিল বক্ররেখার নিচের এলাকা (এইউসি-এরিয়া আন্ডার দ্য কার্ভ)। এইউসি মান ১ মানে হলো মডেলটি নিখুঁত ও নির্ভুলভাবে কাজ করে এমনটা নির্দেশ করে। আর দশমিক ৫ যথেচ্ছভাবে কাজ করে নির্দেশ করে। সমীক্ষায় দেখা যায়, ক্যানসার ঝুঁকিতে থাকা প্রতিটি কোষ শনাক্তে এআই মডেলটির স্কোর ছিল এইউসি দশমিক ৮৭। ক্লিনিকে ব্যবহৃত পরীক্ষা ব্রক স্কোরের কর্মক্ষমতা আরও বাড়ে এবং স্কোর হয় দশমিক ৬৭।

লিব্রা স্টাডির প্রধান তদন্তকারী ডা. রিচার্ড লি বলেছেন, ‘এর মধ্য দিয়ে এআইয়ের মতো উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ব্যবহার করে রোগ শনাক্তের সীমারেখা আরও সামনে নিয়ে যাবে বলে আমরা আশা করি। এর আগে ক্যানসারের আগ্রাসী ধরনের জন্য মাত্র ৩০ দিনের মধ্যে একটি চিকিৎসাপদ্ধতি বিকশিত করে এআই। এ ছাড়া এটি চিকিৎসকের নোট ব্যবহার করে রোগীর বেঁচে থাকার হারও ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে।’

ফার্মা নামের ওষুধ আবিষ্কারের একটি এআই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমার (এইচসিসি) সম্ভাব্য চিকিৎসা বিকাশের জন্য ইনসিলিকো মেডিসিনের সঙ্গে ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর গবেষকেরা কাজ করেছেন। এইচসিসি হলো একধরনের লিভার ক্যানসার। এআই নতুন এক চিকিৎসাপথ উদ্ভাবন করেছে এবং একটি ‘নভেল হিট মলিকিউল’ নকশা করেছে, যা লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম।

সূত্র: ডেইলি মেইল