ধানের দানার চেয়ে ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের ইমপ্ল্যান্ট উদ্ভাবন

ধানের দানার চেয়ে ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের ইমপ্ল্যান্ট উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরাছবি: কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র

নিউরো প্রযুক্তির অগ্রগতিতে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছেন একদল গবেষক। ধানের দানার চেয়ে ছোট একটি মস্তিষ্কের ইমপ্ল্যান্ট তৈরি করা হয়েছে। এটি মস্তিষ্কের ভেতরের বৈদ্যুতিক সংকেত পর্যবেক্ষণ ও তারহীন তথ্য পাঠাতে সক্ষম। মাইক্রোস্কেল অপটোইলেকট্রনিক টেথারলেস ইলেকট্রোড বা মোট নামের এই যন্ত্র আকারে ক্ষুদ্র। এর কার্যক্ষমতা ও নির্ভুলতা ভবিষ্যতের স্নায়ুবিজ্ঞানের নতুন সম্ভাবনা বলে বিবেচিত হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী অ্যালিওশা মলনার বলেন, ‘আমাদের জানামতে, এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ছোট স্নায়ু ইমপ্ল্যান্ট। এটি মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ মাপতে ও তথ্য তারহীন প্রেরণ করতে পারে। মানবচুলের প্রস্থের প্রায় সমান বা মাত্র ৩০০ মাইক্রোমিটার লম্বা ও ৭০ মাইক্রোমিটার চওড়া এই ইমপ্ল্যান্ট। এটি ইনফ্রারেড আলোর মাধ্যমে স্নায়ুসংকেত কোডে রূপান্তর করে। পরে সেই সংকেত মস্তিষ্কের টিস্যু ও হাড় ভেদ করে নির্দিষ্ট রিসিভারে পৌঁছায়।

বিজ্ঞানী মলনার ২০০১ সালে এই ধারণা প্রথম উপস্থাপন করেন। প্রায় দুই দশকের গবেষণা ও পরীক্ষার পর সেটি বাস্তব রূপ পেল। অ্যালুমিনিয়াম গ্যালিয়াম আর্সেনাইড নামের সেমিকন্ডাক্টর উপাদান দিয়ে তৈরি এই ডায়োডভিত্তিক যন্ত্রটি একই সঙ্গে আলো ব্যবহার করে শক্তি আহরণ ও তথ্য প্রেরণ করতে পারে।

গবেষকেরা জানান, ইমপ্ল্যান্টে ব্যবহৃত প্রযুক্তি আধুনিক মাইক্রোচিপের নীতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। অপটিক্যাল এনকোডার ও লো নয়েজ অ্যামপ্লিফায়ারের মাধ্যমে এটি সংকেতকে আরও পরিষ্কারভাবে প্রেরণ করতে পারে। ডেটা পাঠাতে ব্যবহৃত হয়েছে পালস পজিশন মড্যুলেশন। বিজ্ঞানী মলনার বলেন, এই ইমপ্ল্যান্ট অত্যন্ত অল্প বিদ্যুৎ ব্যবহার করেই নির্ভুলভাবে তথ্য পাঠাতে পারে।

গবেষণার প্রাথমিক পর্যায়ে যন্ত্রটি ল্যাবরেটরিতে প্রস্তুত সেল কালচারে পরীক্ষা করা হয়েছে। ইঁদুরের মস্তিষ্কের ব্যারেল কর্টেক্সে প্রতিস্থাপন করেছেন বিজ্ঞানীরা। ইমপ্ল্যান্টটি এক বছরের বেশি সময় ধরে ইঁদুরের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ ও স্নায়ুসংযোগের ধরন স্থিতিশীলভাবে ধারণ (রেকর্ড) করেছে। বিজ্ঞানী মলনার আরও বলেন, ‘প্রচলিত ইলেকট্রোড ও ফাইবার অনেক সময় মস্তিষ্কে জ্বালা বা প্রদাহ সৃষ্টি করে। টিস্যু ক্রমাগত নড়াচড়া করে বলে শরীরের প্রতিরোধব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে। আমরা এমন এক ইমপ্ল্যান্ট তৈরি করতে চেয়েছি, যা বেশ ক্ষুদ্র হলেও মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন না ঘটিয়ে দ্রুত ও নির্ভুলভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে পারছে। অন্যান্য সংবেদনশীল অঙ্গে, যেমন মেরুদণ্ডে এটি ব্যবহারের সুযোগ আছে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস