সাত উদ্ভাবককে দেওয়া হলো আর্থিক সহায়তা

বিজয়ী উদ্ভাবকদের সঙ্গে অতিথিরা

গৃহস্থালি ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পানি ব্যবহারের জন্য স্মার্ট মিটার ও সাব–মিটার তৈরি, ডিজিটাল উপায়ে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের শারীরিক তথ্য পর্যবেক্ষণ, সরকারি অফিসের নথির জন্য ফরমাশপত্র তৈরি—এমন সাতটি উদ্ভাবনী ধারণা দিয়ে সেরা উদ্ভাবক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন দেশের সাত উদ্ভাবক। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিএএফ শাহীন হলে এটুআই (অ্যাস্পায়ার টু ইনোভেশন) প্রকল্প আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিজয়ী উদ্ভাবকদের আর্থিক সহায়তা (সিডমানি) ও পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। উদ্ভাবকদের সাড়ে ১৮ লাখ থেকে ৯০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প অর্জনে উদ্ভাবনকে প্রাধান্য দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের ছোট আয়তনের দেশে জনসংখ্যা অনেক বেশি। এই মানুষগুলোকে উন্নত জীবন দেওয়া, ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার পাশাপাশি উন্নত করার লক্ষ্যে অনেকগুলো বিষয় সামনে আনতে হবে। যাতায়াত, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, পানিসহ নানা বিষয়ে আরও উন্নয়ন প্রয়োজন।’

অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ বলেন, ‘আমরা সরকারি-বেসরকারি এবং একাডেমিয়ার অংশীদারত্বের ভিত্তিতে নতুন উদ্ভাবনকে অনুপ্রাণিত করছি। পাশাপাশি সেই উদ্ভাবকের স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে সব ধরনের সহযোগিতা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আইডিয়াকে বাণিজ্যিকভাবে সফল করতে কী করা যায়, তা নিয়ে কাজ করছি। আমরা ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করব নগর পরিকল্পনায়, পরিবেশ রক্ষায়, পানির গুণগত মান নিশ্চিতকরণে ও পণ্য সরবরাহে। সেই ড্রোনটা আমরা বানাতে চাই বাংলাদেশের মাটিতেই।’

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এটুআইয়ের প্রকল্প পরিচালক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এয়ার ভাইস মার্শাল এ এস এম ফখরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান ও এটুআইয়ের পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী প্রমুখ।

নির্বাচিত সাত উদ্ভাবনী প্রকল্প—

১. আশিকুর রহমানের প্রস্তাবিত সমাধানটি বাসাবাড়ির আইওটিভিত্তিক স্মার্ট মিটারিং ও সাব-মিটারিং ব্যবহার করে পানির গুণমান এবং কী পরিমাণ পানি ব্যবহার করা হয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করবে এবং পানির অপচয় কমাতে মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডেটা অ্যানালাইটিকস ব্যবহার করে পানির সাশ্রয়ী ব্যবহার সম্পর্কে উৎসাহিত করার সুযোগ থাকবে এ উদ্ভাবনে। এর জন্য দেওয়া হয়েছে ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

২. আহমেদ নাসিফ হোসাইনের উদ্ভাবনের মাধ্যমে পানির স্মার্ট পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব এবং এর ফলে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে পানিসম্পদ বিতরণ করতে পারবে। অ্যাডভান্সড মিটারিং ইনফ্রাস্ট্রাকচারের (এএমআই) মাধমে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো দূর থেকে (রিমোটলি) গ্রাহকের পানি ব্যবহারের তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। ২০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে এই উদ্ভাবনী ভাবনার জন্য।

৩. মো. খালেদ হাসান মোর্শেদুল বারি বস্ত্র ও চামড়াশিল্পের জন্য একটি ড্যাশবোর্ড তৈরি করবেন, যার মাধ্যমে শিল্পক্ষেত্রে পানির ব্যবহার, পরিশোধন, পুনরায় ব্যবহার এবং অপচয়ের তথ্য চাহিদা অনুযায়ী পর্যবেক্ষণ করা যাবে। এতে ২৮ লাখ ৩২ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।

৪. এএইচএম রেজওয়ানুল ইসলাম পানির অপচয় রোধে ডিজিটাল মিটার এবং শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য ‘ওয়াটার টুল অ্যানালিটিকস’ তৈরি করবেন। তাঁর প্রস্তাবিত টুলটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পানি ব্যবহারের পরিমাণ দূরবর্তীভাবে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হবে। টুলটিতে থাকবে প্রিপেইড ও পোস্টপেইড বিলের ব্যবস্থা, কী পরিমাণ পানি ব্যবহার করা হচ্ছে, তার বিশ্লেষণ ইত্যাদি। এই ধারণা জন্য ২৫ লাখ টাকা দেওয়া হচ্ছে।

৫. খালিদ আশরাফ তাঁর উদ্ভাবনের মাধ্যমে গর্ভাবস্থার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন ড্যাশবোর্ড ও ডেটা আইল্যান্ডগুলো সংযুক্ত করবেন। এর মাধ্যমে চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে দ্বিমুখী সংযোগ স্থাপন করা যাবে। ৯০ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা পাচ্ছে এই উদ্ভাবনী ধারণা।

৬. মেহেদী হাসান একটি ডিজিটাল মাধ্যম তৈরি করবেন, যার মাধ্যমে গর্ভাবস্থার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলো পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং স্মার্ট ওয়াচের মাধ্যমে এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পর্যবেক্ষণ করে স্বাস্থ্যসুবিধা প্রদানকারীর কাছে সচেতনতামূলক বার্তা পাঠাবে। মেহেদী হাসান পেয়েছে ৬০ লাখ টাকা পুরস্কার।

৭. হাসিব উদ্দীন একটি ওয়েবভিত্তিক ডায়নামিক কম্পোনেন্ট লেটার বিল্ডার তৈরি করবেন, যা সরকারি অফিসগুলো ব্যবহার করবে। টেমপ্লেটগুলো বারবার ব্যবহার করা যাবে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সিস্টেম যেমন নথি, জাতীয় তথ্য বাতায়ন, মাইগভ ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত করা যাবে। এর জন্য পুরস্কার ৩৩ লাখ ২০ হাজার টাকা।