অনেকের মতো সাম্মি ইসলাম নীলার আগ্রহ নতুন নকশার পোশাকের প্রতি। কিন্তু বাজারে বেশির ভাগই গতানুগতিক ডিজাইনের ওড়না, কুর্তি, শার্ট ও স্কার্ট। নতুন ও একটু ভিন্ন নকশার কিছু করার চেষ্টা সব সময়ই ছিল নীলার। ছোটবেলা থেকে মায়ের শাড়ি কেটে কেটে নকশা করা, নিজের পোশাকে সুই–সুতা বা রংতুলি দিয়ে নতুন কিছু করার চেষ্টা ছিল। বড় হয়ে সেদিকেই হাঁটেন তিনি।
২০২২ সাল। করোনা–পরবর্তী সময়। সাম্মির কথা হয় বান্ধবী জাহেরা চৌধুরীর সঙ্গে। জাহেরা জানতে পারেন সাম্মির ডিজাইন ও পোশাকের আইডিয়া সম্পর্কে। জাহেরারও আগ্রহ জাগে। ২০১৪ সালে নতুন ধরনের নকশায় ওড়না তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন। সহযোগিতার অভাবে কাজটি এগিয়ে নিতে পারেননি।
সাম্মি ও জাহেরা—দুজনেরই মনে হয়, এই ভাবনা নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু করা যেতে পারে। নেমে পড়েন তাঁরা। দুজনে ফেসবুকভিত্তিক ফ্যাশন উদ্যোগ ফ্যাশনীল চালু করেন। হয়ে ওঠেন এফ–কমার্স (ফেসবুকভিত্তিক বাণিজ্য) উদ্যোক্তা। ফ্যাশনীল ছোট পরিসরে শুরু হলেও এখন তাদের মাসিক বিক্রি ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা।
ফ্যাশনীলের প্রথম পণ্য ছিল ফ্যাশনেবল ওড়না। গতানুগতিক ওড়নার চেয়ে এগুলো আলাদা। গোলাকার রিংয়ের মতো দেখতে ওড়নাগুলো। গলা থেকে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে, রিকশা বা অন্য কোনো যানে ঝুঁকিমুক্ত চলা যায়। ওড়নাগুলো কয়েক ধরনের। বিভিন্ন রকম কাপড়ে তৈরি। কিছু ওড়নায় গয়নাও বসানো আছে। ফলে এর সৌন্দর্যে বাড়তি মাত্রা যুক্ত হয়েছে। ওড়নার পর ফ্যাশনীলের পণ্য তালিকায় যুক্ত হয়েছে কুর্তি, স্কার্ট, শার্ট ইত্যাদি।
জাহেরা চৌধুরী ফার্মাসি বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে কোনো ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের চাকরি করবেন, এমনই ভেবেছিলেন। পরে ভাবেন, এতে নিজে অর্থনৈতিকভাবে সফল হলেও অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে না। তাই বন্ধুর সঙ্গে ফ্যাশন নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন।
সাম্মি ইসলাম একজন কবি। তিনি বলেন, ‘কবিতার মতোই পোশাককে শৈল্পিক মানে উন্নীত করতে পারলে দেশের পোশাক বিদেশেও সুনাম বয়ে আনবে। বৈচিত্র্যময় পোশাক বিদেশে পাঠালে দেশে অর্থ ও খ্যাতি দুই-ই মিলবে।’ নীলা একসময় কবিতা নিয়েই পড়ে থাকতেন। তিনি এখন ফ্যাশনীলের সহপ্রতিষ্ঠাতা।
ফ্যাশনীলে শুধু নারীদের পোশাকই তৈরি ও বিক্রি হয়। তবে এই ধারায় পরিবর্তন আসছে। জাহেরা চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ভাবছি, পুরুষদের পোশাক নিয়েও কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তাই পুরুষদের পাঞ্জাবি, পায়জামা, ট্রাউজার, টি-শার্ট নিয়ে শিগগিরই আমরা স্টাইনীল নামে আরেকটি ফ্যাশন উদ্যোগ শুরু করতে যাচ্ছি।’
রাজধানীর বনশ্রীতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে ফ্যাশনীলের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ছিল মাত্র দুটি সেলাই মেশিন। এখন বনশ্রীতেই নতুন কারখানা চালু করেছেন। ধীরে ধীরে বেড়ে চলছে কর্মী সংখ্যা। ১৭ জন কর্মী এখন কাজ করেন প্রতিষ্ঠানটিতে। ফ্যাশনীলের পেজ থেকেই অনেক উদ্যোক্তা সরাসরি যোগাযোগ করে ব্যবসাও করছেন।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা শাহ জালাল মজুমদারের মেয়ে সাম্মি ইসলাম নীলা। মা হাজেরা বেগম গৃহিণী। ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে ২০২২ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। ২০১৬ সালে বিয়ে করেছেন কবি ও কথাসাহিত্যিক জব্বার আল নাঈমকে। তাঁদের রয়েছে এক কন্যাসন্তান।
জাহেরা চৌধুরীর বাবা সোহরাব উদ্দিন চৌধুরী ব্যবসায়ী এবং মা সামসুন নাহার পেশায় শিক্ষক। স্বামী শাখাওয়াত হামিদ চৌধুরী ব্যবসা করেন। তাঁদের এক মেয়ে। জাহেরা ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (ইওডা) থেকে ২০১৪ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ফার্মাসিতে।
সাম্মি ও জাহেরা—এ দুই এফ–কমার্স উদ্যোক্তা সংসার ও সন্তান সামাল দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের উদ্যোগ ফ্যাশনীল। তাঁরা জানান, দেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের পথচলা খুব সহজ নয়। তবে তাঁরা পরিবার থেকে পূর্ণ সহযোগিতা পাচ্ছেন। আর ফ্যাশনীলকে এগিয়ে নিতে চান অনেক দূর।