১৮ কোটির বেশি সিম সক্রিয়, স্মার্ট ফোনের ব্যবহার বাড়েনি

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ নিয়ে আলোচনা সভায় বক্তারা

‘প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে। অর্থনীতিকে স্মার্ট অর্থনীতিতে পরিণত করতে হবে। সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে। মুঠোফোন বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু এখনো দেশের সব নাগরিক মুঠোফোনের সব সুবিধা ব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছেন না। স্মার্ট ফোনের ব্যবহারও বাড়েনি। ৫৪ শতাংশ গ্রাহককে স্মার্ট নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করতে না পারলে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা সম্ভব নয়।’ বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে টেলিযোগাযোগ সেবার মান উন্নয়নে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আজ শনিবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব এস এম ফরহাদ বলেন, বর্তমানে মোবাইল অপারেটরদের সম্মিলিত বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে টেলিকম অপারেটররা ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে। সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এখনো দেশের বড় একটি অংশের মানুষ স্মার্ট নেটওয়ার্কের বাইরে রয়েছেন। যদিও ১৮ কোটির ওপর সক্রিয় সিম রয়েছে, যা মোট জনসংখ্যার চাইতেও বেশি। তবে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে টেলিযোগাযোগ ইকোসিস্টেম বাস্তবায়নসহ সবার জন্য টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট–সেবা নিশ্চিত করা না গেলে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা সম্ভব হবে না।

সভায় টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ টি আই এম নুরুল কবির বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্য ২০৪১ হলেও সময় খুব বেশি নেই। সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে (বিটিআরসি) দ্রুত সব পক্ষের সঙ্গে বসে সমস্যা সমাধান করতে হবে। কেবল নিয়ন্ত্রণ আর লাইসেন্স প্রদান করলেই হবে না। চাই সমন্বিত উদ্যোগ।

মোবাইল ফোন সংযোগদাতা প্রতিষ্ঠান রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড কর্পোরেট অফিসার শাহেদ আলম বলেন, ‘আমরা সরকার ও কমিশনের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। গ্রাহকদের ভালো সেবা দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়তই বিনিয়োগ করছি। বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকার কারণে গ্রাহকেরা মানসম্পন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। উন্নত বিশ্বের মতো আমাদের টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের মানোন্নয়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তাই আমাদের হাত–পা বেঁধে কাজ করার অনুরোধ করবেন না।’

মোবাইল ফোন সংযোগদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলালিংক লিমিটেডের চিফ রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড কর্পোরেট অফিসার তাইমুর আলম বলেন, ‘আমরা মানসম্পন্ন সেবা দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি।’

ফাইবার অপটিক কেব্‌ল নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাট হোমের চিপ রেগুলেটরি অ্যান্ড গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্স আব্বাস ফারুক বলেন, ‘অনেক দেশেই ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে সরকার প্রণোদনা দিয়ে থাকে‌। কিন্তু আমরা কোনো প্রণোদনা পাই না। ২০০৯ সালে ফাইবার গাইডলাইন প্রণয়ন করা হলেও এখন পর্যন্ত এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি।’

আয়োজক বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীজন হিসেবে সরকারকে সহায়তা করতে চাই।’ টেলিযোগাযোগ ও নেটওয়ার্ক খাতে থাকা প্রতিবন্ধকতাগুলো শনাক্ত করে সবার সঙ্গে বসে একযোগে সমাধান করার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। ঘরে ঘরে মানসম্পন্ন সেবা পৌঁছে দেওয়া নিশ্চিত করার কথাও বলেন তিনি।

আলোচনা সভায় কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিকসহ অনেকে বক্তব্য দেন।