আবু সাঈদ খানের শূন্যস্থান সহজে পূরণ হবে না

আবু সাঈদ খানছবি: সংগৃহীত

দেশের টেলিযোগাযোগ বিশ্লেষক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবু সাঈদ খান আর নেই। আজ ২২ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আবু সাঈদ খান ফুসফুসের ক্যানসারে ভুগছিলেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। তাঁর স্ত্রীও কয়েক বছর আগে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

আবু সাঈদ খানের সঙ্গে প্রথম দেখা হয় ঢাকার এডিএন টেলিকমের মহাখালী অফিসে ২০০২-০৩ সালে। তখনই তিনি দেশের টেলিযোগাযোগবিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত। এই খাত নিয়ে তৎকালীন সরকারের কিছু ভুল সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন তিনি, লেখনীর মাধ্যমে। তাঁর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন এডিএনের চেয়ারম্যান আসিফ মাহমুদ। আবু সাঈদ খান এডিএন গ্রুপের টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা ছিলেন।

আবু সাঈদ খান ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। তখন দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি নিয়ে তিনি লেখালেখি করছেন পত্রপত্রিকায়। সে সময়ে ২০০২ সালে মূলত তাঁর জোরালো লেখার জন্য বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ পরিমণ্ডলে এসইএএমইডব্লিউই–৪ নামের আন্তর্জাতিক সাবমেরিন কেবল নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়। এটাই দেশের প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক সাবমেরিন কেব্‌ল নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়া। ফলে বাংলাদেশের মানুষ দ্রুত আধুনিক টেলিযোগাযোগের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। স্বল্প খরচে বিদেশের সঙ্গে টেলিযোগাযোগ সুবিধা পায়। এতে টেলিযোগাযোগের  বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উপকরণের ওপর থেকে সরকারি কর কমতে থাকে। দেশের মুঠোফোনের ব্যাবসা–বাণিজ্যে নতুন নতুন সম্ভাবনা দেখা যায়।

ঢাকার পর তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ হয়েছিল সিঙ্গাপুরের কমুনিক এশিয়া মেলায়। আমি সেই মেলা কাভার করার জন্য সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলাম। মেলার একটি সেমিনারে আবু সাঈদ খান এশিয়ায় টেলিযোগাযোগ নিয়ে মূল প্রবন্ধ পড়েন। তিনি তখন এরিকসন মালয়েশিয়ায় কর্মরত। সেমিনার শেষে আমরা বেশ কিছুক্ষণ মেলা ঘুরলাম, দেখলাম। মেলার মিডিয়া সেন্টারে মধ্যাহ্নভোজ সারার ফাঁকে ফাঁকে তিনি এ অঞ্চলের টেলিযোগাযোগ নিয়ে অনেক কথা বলেছিলেন। তবে সেদিনই তিনি কুয়ালালামপুরে ফেরত যাবেন বলে দ্রুত হোটেলে ফিরে যান।

২০০৬ সালে আবু সাঈদ খান এশিয়া–আমেরিকা গেটওয়েতে (এএজি) যোগদানের জন্য সব ব্যবস্থা করলেও তৎকালীন সরকার তাতে রাজি হয়নি সেই সাবমেরিন কেব্‌ল নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে। এরপর তিনি মোবাইল ফোনের সিমকার্ডে বারবার সরকারি কর আরোপের বিরোধিতা করেন।

আবু সাঈদ খান দেশের মুঠোফোন সংযোগদাতাদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) প্রথম মহাসচিব ছিলেন। এ ছাড়া তিনি জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন, বিশ্বব্যাংক, এরিকসন, হুয়াওয়ে, এডিএন গ্রুপে কাজ করেছেন। তিনি এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় টেলিযোগাযোগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান লার্ন এশিয়ার জ্যেষ্ঠ পলিসি ফেলো ছিলেন। আবু সাঈদ খানের মৃত্যুতে দেশের অপরিমেয় ক্ষতি হলো, যা সহজে পূরণ হওয়ার নয়।

লেখক: তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিক ও মাসিক কমপিউটার বিচিত্রার প্রতিষ্ঠাতা