যেসব জীবনী অনুসরণ করেন বিল গেটস

বিল গেটসছবি: রয়টার্স

মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস প্রচুর বই পড়েন। প্রতিবছরই বিভিন্ন বইয়ের তথ্য প্রকাশ করেন তিনি। সবাইকে বই পড়তে নিজের ব্লগ সাইটে বিভিন্ন বই নিয়ে আলোচনা করেন। এবারের গ্রীষ্মের ছুটিতে পাঁচটি বই পড়তে নিজের ব্লগ সাইটে তালিকা প্রকাশ করেছেন। এবারে তিনি পাঁচটি স্মৃতিকথা বা আত্মজীবনী ঘরানার বই সুপারিশ করেছেন। তালিকায় লেখক ক্যাথারিন গ্রাহাম ও দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মার্কিন কমেডিয়ান ট্রেভর নোয়ার আত্মজীবনী দেখা যায়। বিল গেটস তাঁর ব্লগে এসব বই পড়ে তিনি যা শিখেছেন, সে কথা প্রকাশ করেছেন।

বিল গেটস এ বছরের শুরুতে তাঁর নিজের স্মৃতিকথা ‘সোর্স কোড’ প্রকাশ করেছেন। সেখানে বই তাঁর জীবনে কতটা প্রভাব রেখেছে, এ নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। নিজের স্মৃতিকথা ‘সোর্স কোড’ লেখার জন্য এসব বই তাঁর জন্য সোর্স কোড ছিল বলে বিল গেটস লিখেছেন। বিল গেটস বিভিন্ন স্মৃতিকথাকে অসাধারণ জীবনের জানালা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

পারসোনাল হিস্টোরি
গেটসনোটস

তালিকার প্রথমেই দেখা যায়, ক্যাথারিন গ্রাহামের জীবনী ‘পারসোনাল হিস্টোরি’। ওয়াশিংটন পোস্টের সাবেক প্রকাশক তিনি। এই বই পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্ত আত্মজীবনী। তিনি ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারিসহ আমেরিকান সাংবাদিকতা ও রাজনীতির বেশ গুরুত্বপূর্ণ সময়ের তথ্য প্রকাশ করেছেন। বিল বলেন, ‘আমি ১৯৯১ সালের ৫ জুলাই ওয়াশিংটন পোস্টের কিংবদন্তি প্রকাশক কে গ্রাহামের সঙ্গে দেখা করি। একই দিনে আমি ওয়ারেন বাফেটের সঙ্গে দেখা করি। তখন থেকে আমরা ভালো বন্ধু হয়ে উঠি। কের অসাধারণ জীবনের কথা শুনতে আমার খুব ভালো লেগেছে। এমন একসময়ে তিনি ওয়াশিংটন পোস্টের দায়িত্ব নেন, যখন খুব কম নারী নেতৃত্ব দিতেন। ওয়াটারগেট ও পেন্টাগন পেপারস–সম্পর্কিত প্রতিবেদন রক্ষা করার জন্য তিনি রাষ্ট্রপতি নিক্সনের বিরুদ্ধে দাঁড়ান। সাংবাদিকদের ধর্মঘট অবসানের জন্য আলোচনা করাসহ অনেক কিছু করেন। তাঁর আত্মজীবনী বেশ চিন্তাশীল।’

চেজিং হোপ
গেটসনোটস

নিকোলাস ক্রিস্টফের ‘চেজিং হোপ’ নামের একটি বই দেখা যায়। বইটিতে বিখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক ক্রিস্টফ তাঁর অভিজ্ঞতা ও চ্যালেঞ্জের কথা প্রকাশ করেছেন। বিল লিখেছেন, ‘“চেজিং হোপ” বইটি নিকোলাস ক্রিস্টফের লেখা। ১৯৯৭ সালে নিক ক্রিস্টফ একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। সেই লেখা আমার জীবনের গতিপথ বদলে দিয়েছিল। দরিদ্র দেশে ডায়রিয়ায় মারা যাওয়া বিপুলসংখ্যক শিশু সম্পর্কে ছিল সেই লেখা। তাঁর লেখা আমার জনহিতকর দানকে কোন দিকে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছিল। আমি তখন থেকেই নিকের কাজ অনুসরণ করে আসছি। আমরা পরস্পর যোগাযোগের মধ্যে রয়েছি। তিনি ১৫০টির বেশি দেশ থেকে যুদ্ধ, দারিদ্র্য, স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার সম্পর্কে রিপোর্ট করেছেন। তাঁর অসাধারণ স্মৃতিকথায় নিক কীভাবে সবকিছু দেখেও বিশ্ব সম্পর্কে আশাবাদী থাকেন, তা লিখেছেন। তাঁর বইটি আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছে। পৃথিবীতে আরও নিক ক্রিস্টফ থাকলে আরও ভালো হতো।’

এডুকেটেড
গেটসনোটস

গেটসনোটসের তালিকায় বিল গেটস ‘এডুকেটেড’ নামের একটি বইয়ের কথা লিখেছেন। ওয়েস্টওভারের লেখা এই বইটিকে বেশ শক্তিশালী বই বলা যায়। এই স্মৃতিকথায় ওয়েস্টওভার তাঁর গ্রামীণ জীবনের কঠোর গল্প তুলে ধরেছেন। শত বাধা পেরিয়ে কীভাবে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করেছেন, তার যাত্রা তুলে ধরা হয়েছে। বিল গেটস লিখেছেন, তাঁর পরিবার বাইরের বিশ্বের সঙ্গে যতটা সম্ভব কম যোগাযোগ করা উচিত বলে মনে করত। একসময় সে মা–বাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজের পথ বেছে নেয়। তাঁর এই অবিস্মরণীয় স্মৃতিকথায় আত্ম–আবিষ্কারের প্রক্রিয়াটি সুন্দরভাবে ধারণ করেছেন।

বর্ন আ ক্রাইম
গেটসনোটস

দ্য ডেইলি শো নামের কমেডি শোর সাবেক উপস্থাপক ট্রেভর নোয়া, তাঁর জীবনী ‘বর্ন আ ক্রাইম’। বর্ণবাদ যুগের দক্ষিণ আফ্রিকায় বেড়ে ওঠার গল্প এই বইয়ে আছে। বিভিন্ন হাস্যকর ঘটনা বইয়ের পাতায় প্রকাশ করা হয়েছে। বিল গেটস নোয়ার ব্যক্তিগত ভাবনা ও বলার ধরনের প্রশংসা করেন। নোয়ার তীক্ষ্ণ সামাজিক ভাষ্যকে গুরুত্ব দিয়েছেন বিল গেটস। বিল গেটস লিখেছেন, ট্রেভর নোয়ার লেখা বই ‘বর্ন আ ক্রাইম’। শিরোনাম অনুসারে নোয়ার জন্মই যেন সেখানে। এই বইয়ে ও তাঁর কমেডিতে ট্রেভর দৃষ্টিভঙ্গিকে বিশেষভাবে ব্যবহার করেছেন। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি সীমানা অতিক্রম করে বলা যায়।

সারেন্ডার
গেটসনোটস

‘সারেন্ডার’ বইটির কথা লিখেছেন বিল গেটস। বইটি লিখেছেন বোনো, তিনি ইউ২ ব্যান্ডের শীর্ষব্যক্তি। তাঁর স্মৃতিকথায় জীবন, কর্মজীবন আর শৈশবের নানা বিষয়কে দেখা যায়। বিভিন্ন কারণে বোনোর বিশ্বব্যাপী প্রভাব রয়েছে। বোনোর জীবনী বিল গেটসের নিজস্ব আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা ও বিশ্বে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য আগ্রহকে প্রতিফলিত করেছে বলা যায়। বিল লিখেছেন, ‘বোনো তাঁরই বইয়ে আশ্চর্যজনকভাবে খোলামেলা সব স্মৃতিকথা লিখেছেন। যেখানে অনেক দুর্বলতা প্রকাশ করেছেন। তাঁর যা প্রয়োজনের জন্য প্রয়োজন ছিল, তা তুলে ধরেছেন। আমার “সোর্স কোড” বইয়ে আমি কীভাবে নিজের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে খোলামেলা লিখতে পারি, তার জন্য এটি একটি দুর্দান্ত মডেল ছিল।’

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, গেটসনোটস