সমুদ্রে সবচেয়ে জোরে শব্দ করা বিশেষ প্রজাতির চিংড়ি নিয়ে বিপত্তি

স্ন্যাপিং শ্রিম্পছবি: সংগৃহীত

সমুদ্রে সবচেয়ে জোরে শব্দ করা প্রাণী কোনটি? এই প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই হয়তো নীল তিমির কথা বলবেন। কারণ, নীল তিমি বা স্পার্ম হোয়েল বেশ জোরে শব্দ করে। তবে সমুদ্রে সবচেয়ে জোরে শব্দ করা প্রাণী নীল তিমি বা কোনো দানবীয় জীব নয়। আঙুলের সমান ছোট বিশেষ প্রজাতির একদল চিংড়ি দলগতভাবে অবস্থানের সময় সমুদ্রে সবচেয়ে জোরে শব্দ করে।

বিশেষ প্রজাতির এই চিংড়ি স্ন্যাপিং শ্রিম্প বা পিস্তল চিংড়ি নামে পরিচিত। আকারে ছোট এই চিংড়ি সাঁড়াশির মতো একটি দাঁড়াকে অস্ত্রের মতো ব্যবহার করে। এ সময় চিংড়িগুলো এত দ্রুত দাঁড়া বন্ধ করে যে সেখান থেকে পানির একটি তীব্র প্রবাহ বা জেট নির্গত হয়। এই প্রক্রিয়ায় একটি ক্যাভিটেশন বাবল বা বুদ্‌বুদ তৈরি হয়ে সেটি সশব্দে ফেটে যায়। এই ঘটনাকে বলা হয় শ্রিম্প লুমিনেসেন্স। এ বিষয়ে জীববিজ্ঞানী ইশা বোপারডিকার জানিয়েছেন, রক কনসার্টের শব্দ ১১০-১২০ ডেসিবেল হলেও যখন হাজার হাজার চিংড়ি একসঙ্গে শব্দ করে, তখন সেই শব্দের মাত্রা ২১০ ডেসিবেল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। একটি জেট ইঞ্জিনের শব্দ হয় ১৪০-১৫০ ডেসিবেল। ফলে এই খুদে চিংড়ি জেট ইঞ্জিনের চেয়েও অনেক বেশি শব্দ করতে পারে।

বিশেষ প্রজাতির চিংড়ির করা তীব্র শব্দ সামুদ্রিক গবেষণার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজ্ঞানী রামেশ আইয়ারের মতে, সমুদ্রের নিচে এই চিংড়ির আওয়াজ মাঝেমধ্যে জাহাজের ইঞ্জিনের চেয়েও জোরালো হয়। চিংড়িগুলোর অনবরত শব্দের কারণে উপসাগরে সমুদ্রের তলদেশের ম্যাপিং বা মানচিত্র তৈরির কাজ ব্যাহত হয়। অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ ও ফ্লোরিডা উপকূলে ডলফিন ও তিমির পরিযায়ী পথ পর্যবেক্ষণেও এই চিংড়ির শব্দ বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন ইউনিভার্সিটির গবেষক ক্রিস্টিন এরবে জানিয়েছেন, বিষয়টি অনেকটা আতশবাজি প্রদর্শনীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে কারও সাক্ষাৎকার নেওয়ার মতো অবস্থা তৈরি করছে। উদ্বেগের বিষয় হলো, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়ায় এই প্রজাতির চিংড়ির শব্দ করার হার বেড়ে যাচ্ছে। তবে চিংড়ির জোরালো শব্দের ইতিবাচক দিকও রয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের এক্সেটার ইউনিভার্সিটির গবেষক লুসিল চ্যাপুইস। সমুদ্রে চিংড়ির এই সরব উপস্থিতি অনেক সময় একটি সুস্থ ও প্রাণবন্ত প্রবাল প্রাচীর বা রিফের সংকেত দেয় বলেও মনে করেন তিনি।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া