অক্টোবরেই ফাইজারের করোনা টিকার ফল

ফাইজারের টিকা নিয়ে কাজ করছেন গবেষকেরা
ছবি: রয়টার্স

অক্টোবরের শেষ নাগাদ ফাইজারের করোনার টিকার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার বিষয় জানা যাবে। গতকাল মঙ্গলবার এনবিসির ‘টুডে’ প্রোগ্রামে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে টিকা প্রস্তুতকারক এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আলবার্ট বোরলা বলেন, তিনি আশা করছেন, শিগগিরই এই টিকার কার্যকারিতার বিষয়ে জানা যাবে।

সিএনএনের খবরে জানানো হয়, অনুষ্ঠানে বোরলা সম্প্রতি নয়টি টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের সই করা ‘ঐতিহাসিক চুক্তি’ নিয়েও কথা বলেন। চুক্তিতে টিকা প্রস্তুতকারীরা যথাযথ পরীক্ষা শেষ না করে টিকা অনুমোদনের জন্য তড়িঘড়ি অনুমোদন পাওয়ার লড়াইয়ে না নামার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। তবে ফাইজার ও বায়োএনটেকের টিকা যদি যথেষ্ট নিরাপদ ও কার্যকর হিসেবে প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে তারা অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে পারবে।

বোরলা বলেন, টিকার কার্যকারিতা বুঝতে অনেক বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। কিন্তু এ পর্যন্ত যে মডেল, এতে ফাইজার অক্টোবরের মধ্যে টিকা কার্যকরের বিষয়টি জেনে যাবে। তবে তা টিকা বণ্টনের প্রকৃত সময় হবে না। ওই সময়ের মধ্যে টিকা আসার সম্ভাবনা ৬০ শতাংশ। তাদের টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা খুব ভালোভাবে এগোচ্ছে।

বোরলা বলেন, তাঁরা এর মধ্যে ২৫ হাজার ব্যক্তিকে টিকা দেওয়ার জন্য ঠিক করেছেন।

জার্মানির বায়োএনটেকের সঙ্গে মিলে ফাইজার যে টিকা প্রস্তুত করছে, এতে ট্রাম্প প্রশাসন অর্থ সহায়তা করেছে। গত সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আগামী মাসের মধ্যেই টিকা বাজারে চলে আসতে পারে।

গত জুলাইয়ে কোভিড-১৯ রোধে পরীক্ষামূলক টিকাটির ইতিবাচক ফল পাওয়ার তথ্য জানায় মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফাইজার। ওই সময় টাইম অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বোরলা বলেছিলেন, তাঁরা আশা করছেন, আগামী অক্টোবর মাস নাগাদ তাঁদের ভ্যাকসিনের জন্য ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাছ থেকে অনুমোদন পেয়ে যাবেন। সেপ্টেম্বরেই তাঁরা টিকার কার্যকারিতার ফল জেনে যাবেন।

গত ১ জুলাই ফাইজার তাদের টিকার ইতিবাচক ফল জানিয়ে দাবি করে, এটি স্বাস্থ্যবান মানুষের মধ্যে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। তবে এটি বেশি মাত্রায় দেওয়া হলে জ্বরসহ অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ফাইজারের তৈরি ভ্যাকসিনের প্রথম ক্লিনিক্যাল তথ্য ‘মেডআরএক্সআইভি’ সাময়িকীতে প্রকাশ করা হয়। ইতিবাচক ফল প্রকাশ হওয়ার পর থেকে বার্ষিক ভ্যাকসিন ডোজ তৈরির লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ১০ কোটি করেছে।

বোরলা বলেন, তাঁরা এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে প্রয়োজনীয় ডোজ বিক্রি নিয়ে বাণিজ্যিক আলোচনা করছেন। তাঁর কোম্পানি এফডিএর অনুমোদন পাওয়া আগেই উৎপাদনপ্রক্রিয়া শুরু করবে। তাঁরা ঠিক পথেই এগোচ্ছেন। এটি অপ্রচলিত পদ্ধতি বলে এতে ঝুঁকি বেশি। জার্মান জৈবপ্রযুক্তি সংস্থা বায়োএনটেককে সহযোগী করে মেসেঞ্জার আরএনএ (এমআরএনএ) পদ্ধতিতে এ ভ্যাকসিন তৈরি করছে ফাইজার।

বোরলা স্বীকার করেছেন, এর আগে কখনো কোনো সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে এমআরএনএ–ভিত্তিক ভ্যাকসিন অনুমোদন পায়নি।

ফাইজারের সিইও বোরলা (৫৮) গ্রিসে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ফাইজারের প্রধান নির্বাহী হওয়ার আগে চিকিৎসক হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তিনি ভ্যাকসিন বিক্রি করার কথা বললেও সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা মানুষের মধ্যে এটি বিনা মূল্যে দিতে বিভিন্ন দেশের সরকারকে উদ্যোগী হতে বলছেন।

টিকার কার্যকারিতা নিয়ে টাইমসের প্রশ্নের জবাবে বোরলা বলেন, ‘মানুষের ক্ষেত্রে তাঁদের টিকাটি ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। যাঁরা এটি নিয়েছেন, সবার ক্ষেত্রেই এ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সবার ক্ষেত্রেই ভাইরাসটি মারা গেছে।

বোরলা বলেন, ‘টিকা তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে আমরা যদি এর কার্যকারিতা নিয়ে নিশ্চিত হতে পারি এবং এফডিএর অনুমোদন পাওয়া যায়, তবে তখন টিকা প্রস্তুত থাকবে। এটা আগে কখনো হয়নি। অনুমোদনের আগেই টিকা তৈরি করে রাখা হচ্ছে। এর জন্য ১০০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে ফাইজার।’
টিকা যদি নিরাপদ ও কার্যকর বলে প্রমাণিত না হয়, তবে কী হবে? এ প্রশ্নের জবাবে বোরলা বলেন, ‘সব টিকা ছুড়ে ফেলে দিতে হবে। এতে কেবল আমাদের পয়সা পানিতে ফেলা হবে।’