এইচএসসি পরীক্ষার বিশেষ প্রস্তুতি-২১

পল্লীকবি জসীমউদ্দীন
পল্লীকবি জসীমউদ্দীন

সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর  কবর
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আজ বাংলা ১ম পত্র থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।

শুয়েছে ভোরে রোদ ধানের উপরে মাথা পেতে
অলস গেঁয়োর মতো এই খানে কার্তিকের ক্ষেতে
মাঠের ঘাসের গন্ধ বুকে তার,
চোখে তার শিশিরের ঘ্রাণ
তাহার আস্বাদ পেয়ে অবসাদে পেকে ওঠে ধান।

প্রশ্ন:
ক. ‘কবর’ কবিতাটি প্রথম কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়?
খ. ‘মোর জীবনের রোজ কেয়ামত’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. ওপরের কবিতাংশের সঙ্গে ‘কবর’ কবিতার ভাবগত পার্থক্য নিরূপণ করো।
ঘ. অনুচ্ছেদটির সঙ্গে ‘কবর’ কবিতার ভাষাশৈলী কি সাদৃশ্যপূর্ণ? দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে মতামত দাও।

উত্তর: ক. জসীমউদ্দীন রচিত প্রথম কল্লোল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
উত্তর: খ. পল্লীকবি জসীমউদ্দীন রচিত ‘কবর’ কবিতায় ‘মোর জীবনের রোজ কেয়ামত’ বলতে বৃদ্ধের জীবনের শেষ দিনটির কথা বোঝানো হয়েছে।
‘কবর’ কবিতায় প্রধান হয়ে উঠেছে এক গ্রামীণ বৃদ্ধের জীবনের গভীর বেদনাগাথা। জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধ তার জীবনের শোকার্ত অধ্যায়গুলো উন্মোচন করেছেন তার নাতির কাছে। গোরস্থানে গিয়ে তিনি নাতিকে এক এক করে তার স্ত্রীর, পুত্র, পুত্রবধূ, নাতনি ও কন্যার কবর দেখিয়ে বেদনার্ত কণ্ঠে বর্ণনা করেছেন তাদের মৃত্যুর মর্মান্তিক স্মৃতিগুলো। বৃদ্ধ তাঁর জীবনের শেষ দিনটির অপেক্ষা করছেন। মানুষ নিজের জীবনের শেষ কবে তা জানে না। তাই বৃদ্ধ আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
উত্তর: গ. উদ্দীপকের কবিতাংশের সঙ্গে ‘কবর’ কবিতার ভাবগত পার্থক্য হলো—কবিতাংশটিতে আনন্দের ছায়াপাত ঘটেছে আর ‘কবর’ কবিতার সর্বত্রই বিষাদের সুর ধ্বনিত হয়েছে।
পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের ‘কবর’ কবিতাটি বৃদ্ধ দাদুর আর্তহাহাকার এবং স্বজন হারানোর বেদনার মর্মস্পর্শী আলেখ্য। জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধ অতীতের শোকার্ত অধ্যায়গুলো খুলে বলছেন তাঁর একমাত্র অবলম্বন নাতির কাছে। কিন্তু আলোচ্য কবিতাংশটিতে বিষাদের কোনো ছায়াপাত ঘটেনি।
উদ্দীপকের কবিতাংশে আনন্দের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। ভোরের রোদ ধানের ওপর যেন মাথা পেতে শোয়। ধানের বুকে ঘাসের গন্ধ, চোখে যেন তার শিশিরের ঘ্রাণ। তার অস্বাদ পেয়ে যেন ধান সোনালি রঙের হয়ে ওঠে। কৃষকের মুখে হাসি ফোটায়। যেন আনন্দেরই এক নিরবচ্ছিন্ন অংশ।
অপর পক্ষে ‘কবর’ কবিতাটিতে নাতিকে সঙ্গে নিয়ে বৃদ্ধ কবরস্থানে গিয়ে এক এক করে তার স্ত্রী, পুত্র ও পুত্রবধূ, নাতনি ও কন্যার কবর দেখিয়ে অত্যন্ত বেদনার্ত কণ্ঠে তাদের মর্মান্তিক দৃশ্যগুলো সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। আজ থেকে ৩০ বছর আগে বৃদ্ধের স্ত্রী মারা গেছেন। অতঃপর কোনো এক ফাল্গুনে তাঁর একমাত্র পুত্র হঠাৎ ছটফট করতে করতে মারা যায়। স্বামী শোক সহ্য করতে না পেরে পুত্রবধূও অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। তারপর তাঁর আদরের নাতনি শ্বশুরবাড়ির নির্যাতনে অকালে মৃত্যুবরণ করে। সবশেষে সাত বছরের ছোট মেয়েটিও সাপের কামড়ে মারা যায়। তাই বলা যায় যে আলোচ্য কবিতাংশে যেখানে রয়েছে আনন্দের ছোঁয়া, ‘কবর’ কবিতার সর্বত্রই সেখানে রয়েছে বিষাদের ছোঁয়া—এ দিক থেকে কবিতাংশটিতে ‘কবর’ কবিতার ভাবগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
উত্তর: ঘ. উদ্দীপকের কবিতাংশের সঙ্গে ‘কবর’ কবিতার ভাষাশৈলী অনেকটাই সাদৃশ্যপূর্ণ।
‘কবর’ পল্লীকবি জসীমউদ্দীন রচিত এক বিস্ময়কর শোকাবহ কবিতা। জীবন-মৃত্যুর অনিবার্য বাস্তবতার কাছে নতজানু এক শোকার্ত বৃদ্ধের দুঃসহ স্মৃতি, উপযুক্ত শব্দ, উপমা ও অনিন্দ্যসুন্দর চিত্রকল্পের মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছে কবিতাটিতে।
সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার পটভূমিতে রচিত ‘কবর’ কবিতার বৃদ্ধ দাদু জীবনের শেষ সীমায় দাঁড়িয়ে স্বজন হারানোর বেদনাময় হূদয়ের উন্মোচন করেছেন। কবিতার প্রতিটি ছত্রে মিশে আছে প্রিয় মানুষের মৃত্যুর ছবি—বৃদ্ধের হূদয়ে রক্তক্ষরণ করছে। কবি অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় কবিতাটিতে তা ব্যক্ত করেছেন।
অনুচ্ছেদটি উপযুক্ত শব্দচয়ন ও অনিন্দ্যসুন্দর চিত্রকল্পের মাধ্যমে যেমন জীবন্ত হয়ে উঠেছে, আলোচ্য ‘কবর’ কবিতাটিও শব্দ, উপমা ও চিত্রকল্পের মাধ্যমে মূর্ত হয়ে উঠেছে। এদিক থেকে অনুচ্ছেদটির সঙ্গে ‘কবর’ কবিতার ভাষাশৈলীর অনেকাংশেই মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
অনুচ্ছেদটির কবিতাংশে সহজ-সরল ভাষার প্রয়োগ ঘটেছে। সুনিপুণ শব্দ চয়ন করা হয়েছে প্রতিটি পঙিক্ততে। আলোচ্য ‘কবর’ কবিতায় ভাষাশৈলীর চমৎকার সমন্বয় ঘটেছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ পঙিক্তদ্বয় উল্লেখ করা যায়—‘সোনালি ঊষার সোনামুখ তার আমার নয়নে ভরি/ লাঙল লইয়া ক্ষেতে ছুটিতাম গাঁয়ের ওপথ ধরি।’ আলোচ্য পঙিক্তদ্বয়ে শব্দ, উপমা ও অনিন্দ্যসুন্দর চিত্রকল্পের সমন্বয় ঘটেছে। স্ত্রীর কনক লাবণ্যে ভরা মুখ-চোখ ভেবে ভেবে বৃদ্ধ লাঙল নিয়ে ক্ষেতে যেতেন এবং পেছন ফিরে বারবার দেখতেন। কবি এমন সুনিপুণভাবে সহজ-সরল ও প্রাঞ্জল ভাষা ব্যবহার করেছেন কবিতাটির প্রতিটি ছত্রে। সুতরাং সার্বিক বিবেচনায় দেখা যায় যে অনুচ্ছেদটির সঙ্গে ‘কবর’ কবিতার ভাষাশৈলীর অনেকাংশেই সাদৃশ্য বিদ্যমান।

প্রভাষক, রূপনগর মডেল কলেজ, ঢাকা