গেজি পার্ক আন্দোলনের রেশ

আন্দোলনের সময় গেজি পার্ক
আন্দোলনের সময় গেজি পার্ক

চলতি আগস্ট মাসের এক রৌদ্রকরোজ্জ্বল দুপুর। তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের গেজি পার্কের ঘাসে অলস ভঙ্গিতে শুয়ে আছে একটি নেড়ি কুকুর। এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছেন কয়েকজন নারী-পুরুষ। তাঁদের কারও কারও সঙ্গে শিশু। চারপাশে এক ধরনের প্রশান্তি। অথচ মাত্র দুই মাস আগে এই পার্ক পরিণত হয়েছিল রণক্ষেত্রে। উদ্যানের একাংশে বিপণিবিতান নির্মাণের সরকারি পরিকল্পনায় খেপে ওঠে নগরবাসী। এ নিয়ে শুরু হওয়া প্রতিবাদ-বিক্ষোভ পরিণত হয় বৃহত্তর সরকারবিরোধী আন্দোলনে। গেজি পার্ক হয় এর কেন্দ্র।আন্দোলনের সময় গোটা গেজি পার্ক ছিল তাঁবুতে ছাওয়া। উদ্যানজুড়ে ছিল ব্যানার আর প্রচারপত্রের ছড়াছড়ি। বিক্ষোভকারীদের স্লোগান, গান আর কবিতায় গোটা এলাকা ছিল মুখরিত। তবে বেশি দিন এখানে থাকতে পারেনি তারা। পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে তারা সরে যেতে বাধ্য হয়। তার আগে বেশ কয়েকবার পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আন্দোলনকারীরা। এতে আহত হয়েছে বহু মানুষ। মারা গেছে কমপক্ষে পাঁচ বিক্ষোভকারী।এরপর দুই মাস পেরিয়ে গেলেও গেজি পার্ক এখনো বহন করছে সেই সহিংস ঘটনার চিহ্ন। পার্কের দেয়ালে আঁকা রয়েছে একটি গ্যাস মাস্ক। একটু দূরেই লেখা, ‘এই বিপ্লবের শহীদেরা অমর’।গেজি পার্ক আন্দোলনের একপর্যায়ে ইসলামপন্থী প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের পদত্যাগের দাবি ওঠে। সে আন্দোলনে অংশ নেয় হাজার হাজার মানুষ। ইস্তাম্বুলের সীমা ছাড়িয়ে রাজধানী আঙ্কারাসহ প্রায় গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ।গেজি পার্কের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন হাজাল। ইস্তাম্বুলের শীর্ষস্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডিরত এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘এই পার্ক অনেকের কাছে সুন্দর মনে হতে পারে। কিন্তু এটা আর নিছক একটি পার্ক নেই।... ওই বিক্ষোভে অংশ নেওয়াটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো অভিজ্ঞতা।’হাজাল জানান, সাদা পোশাকের পুলিশেরা এখন সেখানে টহল দেয়। তাদের একমাত্র কাজ হচ্ছে উদ্যানে আসা লোকজনকে হয়রানি করা। পুঁজিবাদবিরোধী আধ্যাত্মিক নেতা ইহসান এলিয়াসিক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নিজের সমালোচনা একেবারেই সহ্য করতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে যাঁরা টুইটারে বক্তব্য দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে তিনি মামলা করেছেন। জনগণ নেতাদের সমালোচনা করবে, এটাই স্বাভাবিক।’

তবে কঠোর নীতি গ্রহণ করেও রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এখনো দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক। দেশটির সাধারণ নির্বাচনে পরপর তিনবার বিজয়ী হয়েছে তাঁর দল। অন্যদিকে বিরোধী দলের অবস্থান ততটা শক্ত নয়। এরই মধ্যে দলে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রশ্ন হচ্ছে, গেজি পার্কের আন্দোলনকারীরা ভবিষ্যতে কি আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি বিশ্বাসযোগ্য রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হতে পারবে? পারবে কি এরদোয়ানের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করতে?

মারগুলিস নামে একজন বিক্ষোভকারীর মতে, গেজি পার্ক আন্দোলনে যে লাভটা হয়েছে তা হলো, ভয়ের প্রথম ধাপটা কেটে গেছে। জনগণ এখন আর মরিচের গুঁড়া ও কাঁদানে গ্যাসকে ভয় পায় না। কাজেই সরকারকেও হিসাবনিকাশ করে পা ফেলতে হবে।

l রোকেয়া রহমান

সূত্র: বিবিসি