টিকটক কিনছে কে?

টিকটক বিক্রির জন্য প্রস্তুত
ছবি: রয়টার্স

টিকটক তাদের যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার ব্যবসা বিক্রির জন্য ক্রেতা বেছে নিয়েছে। তবে এখনো ক্রেতার নাম ঘোষণা করেনি। শিগগিরই এ ঘোষণা আসতে পারে।

পরিস্থিতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি। টিকটককে কেনার দৌড়ে যৌথভাবে রয়েছে মাইক্রোসফট ও ওয়ালমার্ট।

এ ছাড়া ওরাকলও টিকটককে কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এর বাইরে আরও দুটি কোম্পানি টিকটককে কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে।

সিএনবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, টিকটকের দাম হতে পারে দুই হাজার থেকে তিন হাজার কোটি মার্কিন ডলার। অবশ্য টিকটক তাদের ক্রেতা ঠিক করলেও বিক্রির প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে দেরি হবে। কারণ, এ ধরনের চুক্তির ক্ষেত্রে চীন সরকার বিশেষ বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। গত শুক্রবার চীন তাদের প্রযুক্তি রপ্তানি তালিকা হালনাগাদ করেছে, যাতে টিকটকের আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স প্রযুক্তি রপ্তানি করতে অনুমতি নিতে হবে।

টিকটকের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মার্কিন কোনো কোম্পানির কাছে টিকটককে বিক্রি করতে হলে চীন সরকারের লাইসেন্স প্রয়োজন পড়বে।

গত সপ্তাহ হুট করেই টিকটককে কিনতে আগ্রহ দেখায় ওয়ালমার্ট। তারা বলছে, টিকটকের মতো সামাজিক যোগাযোগের অ্যাপ তাদের ই-কমার্স প্রচেষ্টার জন্য কাজে লাগবে।

ওয়ালমার্ট মূলত গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট ও সফটব্যাংকের সঙ্গে কনসোর্টিয়াম করে টিকটকের বেশির ভাগ শেয়ার কিনতে চেয়েছিল। পরে অ্যালফাবেট ও সফটব্যাংক সরে দাঁড়িয়েছে। এরপর মাইক্রোসফটের সঙ্গে জোট বেঁধেছে ওয়ালমার্ট। এখন টিকটকের সঙ্গে চুক্তি হলে ওয়ালমার্টের হাতে থাকবে এর অধিকাংশ শেয়ার।

ট্রাম্প প্রশাসন হুমকি দিয়ে বলেছে, ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে টিকটক কোনো মার্কিন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি না হলে এটি নিষিদ্ধ করা হবে। তারা আশা করছে, কোনো মার্কিন কোম্পানি টিকটককে কেনার জন্য চুক্তি করবে।

গত সপ্তাহে টিকটক বিক্রির চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পর্যায়ে পৌঁছালে এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেভিন মায়ার পদত্যাগ করেন। তিনি মাত্র কয়েক মাস প্রতিষ্ঠানটিতে চাকরি করেছিলেন। বর্তমানে টিকটকের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী ভ্যানেসা পাপ্পাস। সিএনবিসিকে তিনি বলেন, তিনি টিকটকের সঙ্গে ওয়ালমার্টের লক্ষ্যের মিল দেখতে পান।

অবশ্য টিকটকের ক্রেতা নির্বাচন নিয়ে মাইক্রোসফট, ওয়ালমার্ট বা টিকটকের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি এবং কেউ মন্তব্য করেননি।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, আগস্টের মাঝামাঝি টিকটকের সম্ভাব্য ক্রেতা হিসেবে দৃশ্যপটে হাজির হয় মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওরাকল। টুইটারের পক্ষ থেকেও টিকটককে কেনার আগ্রহ দেখানো হয়। তবে তাদের আর্থিক সংগতি নেই।

ওরাকলের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানায়, টিকটকের মালিক প্রতিষ্ঠান চীনের বাইটড্যান্স ইনকরপোরেশনের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করেছে ওরাকল। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি বাইটড্যান্সে শেয়ার থাকা একাধিক বিনিয়োগকারীর সঙ্গেও কাজ করার কথা বলেছে।

আরও পড়ুন

গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টিকটকের সমর্থনে যে সম্পদ ছিল, তা যুক্তরাষ্ট্রের অনুকূলে আনতে বাইটড্যান্সকে নির্দেশ দেন। এ জন্য ৯০ দিনের সময় বেঁধে দেন তিনি। ট্রাম্প দাবি করেন, টিকটক অ্যাপটির তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া তাঁদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

যুক্তরাষ্ট্রের মাইক্রোসফট করপোরেশনের পক্ষ থেকে আগেই বলা হয়, তারা জনপ্রিয় সংক্ষিপ্ত ভিডিও তৈরির অ্যাপ টিকটককে বাইটড্যান্সের কাছ থেকে কিনে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ চুক্তি সম্পন্ন করে ফেলতে চায় তারা। টিকটক কেনার জন্য চলছে দর-কষাকষি।

মাইক্রোসফট টিকটককে কিনতে চাইছে পানির দামে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট বলছে, মাইক্রোসফট টিকটককে কেনার জন্য যে দর হাঁকাচ্ছে, তাতে টিকটককে কেনা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।

গত ৬ আগস্ট ট্রাম্পের সই করা নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, টিকটক যে তথ্য সংগ্রহ করে, তা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কাছে চলে যায় এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ব্যক্তিগত ও প্রতিষ্ঠানের তথ্যে নজরদারি করতে পারে। চীনা কোম্পানিগুলো যে অ্যাপ তৈরি করছে, তা জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য হুমকি। ট্রাম্প বলেন, ‘টিকটক আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। আমরা এটা বন্ধ করে দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছি।’ এর আগে মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আশঙ্কা করেন, এই অ্যাপ ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে চীন। টিকটক কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই এমন আশঙ্কাকে ভিত্তিহীন বলে আসছে। তারা বলছে, এই অ্যাপ চীন সরকারের নিয়ন্ত্রিত নয় এবং তারা চীন সরকারের সঙ্গে তথ্য বিনিময় করে না।

টিকটকের মূল কোম্পানি বাইটড্যান্সের প্রধান কার্যালয় বেইজিংয়ে এবং এটি চীনে জনপ্রিয় হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। এর জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমালোচনাও বেড়েছে। টিকটকের সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির কয়েকজন সিনেটর এর বিরুদ্ধে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

ভারত ৩০ জুন টিকটক, উইচ্যাটসহ চীনা ৫৯টি অ্যাপ বন্ধ করে দেয়। নয়াদিল্লি এসব অ্যাপকে দেশের জন্য বিপজ্জনক বলে অভিযোগ তুলে তা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়; যদিও ১৫ জুন লাদাখে চীনের সঙ্গে সীমান্ত-সংঘর্ষে ভারতের ২০ সেনা নিহত হওয়ার পর দিল্লি ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। গত বছরের অক্টোবরে ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন ভিউয়ের সিলিকন ভ্যালিতে অফিস খুলেছে টিকটক। ফেসবুকের কার্যালয়ের কাছাকাছি অফিস নিয়ে ফেসবুকের কর্মীদের ভাগিয়ে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে টিকটকের নির্মাতা বাইটড্যান্সের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে ফেসবুকের বেশ কয়েকজন কর্মী টিকটকে যোগও দিয়েছেন। ফেসবুকের চেয়েও বেশি বেতনের অফারে কর্মী নিয়োগ দিয়েছে টিকটক।

বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগেই টিকটক ছেড়ে দিয়েছেন চীনা মালিকানাধীন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেভিন মেয়ার। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জেরে দায়িত্ব নেওয়ার দুই মাসের মাথায় পদত্যাগ করেছেন তিনি। গত জুনে টিকটকের প্রধান নির্বাহী হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে ডিজনির স্ট্রিমিং সেবার শীর্ষ নির্বাহী হিসেবে কর্মরত ছিলেন মেয়ার।

কর্মীদের উদ্দেশে এক চিঠিতে মেয়ার বলেন, ‘সম্প্রতি রাজনৈতিক পরিস্থিতির ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে করপোরেট কাঠামোতে কী ধরনের পরিবর্তন আনা প্রয়োজন এবং আমার কাজে তা কীভাবে প্রতিফলিত হবে, সে বিষয়ে আমি কাজ করেছি। এমন এক পরিস্থিতিতে যখন আমরা দ্রুতই একটি পরিণতির দিকে এগোনোর আশা করছি, তখন দুঃখের সঙ্গে আমি আপনাদের জানাতে চাই যে আমি কোম্পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’