ডুমস ডে ক্লকে এখন ১২টা বাজতে কত সেকেন্ড বাকি

ফাইল ছবি

মাত্র ১০০ সেকেন্ড, মানে দেড় মিনিটের সামান্য বেশি। বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী ডুমস ডে ক্লকে রাত ১২টা বাজতে মাত্র ১০০ সেকেন্ড বাকি। এরপরই আমাদের এই পৃথিবীর বারোটা বেজে যাবে। কথাটা সত্যি, তবে ঘাবড়াবেন না। প্রায় দুই বছর ধরেই এই ১০০ সেকেন্ড আগে এসে ঘড়ির কাঁটা থেমে আছে। অপেক্ষা করছে ১২টা বাজে কি না।

অবশ্য ১২টা বাজলেই যে সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে, ব্যাপারটা সে রকম নয়। এটাই যদি হয়, তাৎক্ষণিক ব্যাপার যদি এটা না হয়, তাহলে কোথাকার কোনো ডুমস ডে ক্লকে ১২টা বাজল কি না, সেটা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর দরকার কী? আর ডুমস ডে ক্লকই-বা কী জিনিস? এ ঘড়িতে চাবি দেয় কে? এ প্রশ্নগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ।

গুরুত্বপূর্ণ এ জন্য যে করোনা মহামারির পর থেকেই একটা কথা মুখে মুখে চলছে, এরপর আরও ভয়ংকর ভাইরাস আসছে। এর টিকা আবিষ্কারের আগেই সারা বিশ্বের মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। আবার অন্যদিকে লেগে গেল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমেরিকা-ইউরোপ প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াল। আবার যদি ঠান্ডাযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, তাহলে তো পারমাণবিক অস্ত্র সবার জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এর চেয়েও বড় বিপদ জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা। সবাই বলছে, পৃথিবী বোধ হয় ধ্বংসের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে! সে জন্যই এখন ডুমস ডে ক্লকের কথা মানুষের মুখে মুখে ফিরছে।

ডুমস ডে ক্লক বানানোর চিন্তা কীভাবে এল

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা হিসাব করে দেখলেন, যদি এ ধরনের ধ্বংসাত্মক বিশ্বযুদ্ধ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে হয়তো পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। বিশেষভাবে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে আণবিক বোমা বিস্ফোরণের পর এ ধরনের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর আণবিক বিজ্ঞানীরা ১৯৪৭ সালে তাঁদের বুলেটিনে প্রথম এ ধরনের একটি কল্পিত ঘড়ির বিষয় প্রকাশ করেন। তাঁরা পৃথিবীর জন্য মহাদুর্যোগের সময় চিহ্নিত করার জন্য বেছে নেন রাত ১২টা। এরপর তাঁরা পারমাণবিক বিশ্বযুদ্ধ, ঠান্ডাযুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিসহ যাবতীয় হুমকি বিবেচনায় নিয়ে এ সিদ্ধান্তে আসেন যে ডুমস ডে ক্লকে রাত ১২টা বাজতে মাত্র ৭ মিনিট বাকি! এটা ১৯৪৭ সালের বিশ্বপরিস্থিতি বিবেচনার ভিত্তিতে প্রণীত হিসাব।

এরপর পরিস্থিতি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ ঘড়িতে রাত ১২টা বাজতে কত সময় বাকি, তা পরিবর্তন করা হতে থাকে। বিজ্ঞানীরা বাস্তব হুমকি বিবেচনায় নিয়ে ঘড়ির কাঁটার অবস্থা নির্ধারণ করেন। এটা অনেকটা পৃথিবী ধ্বংসের মুহূর্ত আসতে কত বাকি, তার কাউন্ট ডাউন!

ডুমস ডে ক্লকের কাঁটা কি আগে-পিছে করে

হ্যাঁ করে। বিজ্ঞানীরা সব হিসাব-নিকাশ করে প্রতিবছর প্রয়োজনমতো ঘড়ির কাঁটা বাড়ান-কমান। ১৯৪৭ সালে ছিল রাত ১২টা বাজতে ৭ মিনিট বাকি। এরপর গত ৭৫ বছরে ডুমস ডে ঘড়ির কাঁটা ২৪ বার আগে-পিছে করা হয়েছে। এর মধ্যে পেছনে সরেছে ৮ বার আর সামনে এগিয়ে এসেছে ১৬ বার। সবচেয়ে বেশি দূরত্ব ছিল ১৯৯১ সালে, সে সময় ১২টা বাজতে বাকি ছিল ১৭ মিনিট। অর্থাৎ ওই সময় পৃথিবী তুলনামূলক বেশি নিরাপদ মনে হচ্ছিল। কিন্তু দ্রুতই অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। ২০১৭ সালে বিজ্ঞানীরা মহাবিপর্যয়ের মুহূর্তটি মাত্র আড়াই মিনিট দূরত্বে নিয়ে আসেন। ২০১৯ সালে আরও কমে দাঁড়ায় ২ মিনিটে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ডুমস ডের সময় আরও ঘনিয়ে আসে। মাত্র ১০০ সেকেন্ড বাকি। সেই থেকে ২০২১ ও ২০২২ সালেও সেই ১০০ সেকেন্ড বিপৎসীমার মধ্যেই পৃথিবী স্থির হয়ে আছে।

ডুমস ডে ক্লকেটি কোথায়

ঘড়িটি আছে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে। ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো হ্যারিস স্কুল অব পাবলিক পলিসির কেলার সেন্টারের বুলেটিন সেন্টারে। পরমাণুবিজ্ঞানীরা সমবেতভাবে পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে ডুমস ডে ক্লকের সময় নির্ধারণ করেন। তবে এটা কিন্তু বাস্তব কোনো ঘড়ি নয়; বলা যায় কল্পিত ঘড়ি। তবে বিজ্ঞানীরাই এটা পরিচালনা করেন এবং ঘড়িটি বিশ্বস্বীকৃত।

যদি ১২টা বেজে যায়, তখন কী হবে

আসলে ১২টা বেজে যাওয়া মানে পরিস্থিতির ক্রমাবনতির ধারা অপরিবর্তনীয় হয়ে দাঁড়াবে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এ রকম দুর্যোগ নেমে এলে হাজার খানেক বছরের মধ্যে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ৯৫ শতাংশ। যদি কারও সন্দেহ থাকে, উইকিপিডিয়া পড়ে দেখুন।

*আব্দুল কাইয়ুম, বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক ও প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক