পরীক্ষাগারে তৈরি হলো হৃৎপিণ্ডের টিস্যু

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাগারে একটি পাত্রে রাখা হয়েছে স্টেম সেল থেকে তৈরি হৃৎ​পিণ্ডের টিস্যু l ছবি: সিবিএস নিউজ
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাগারে একটি পাত্রে রাখা হয়েছে স্টেম সেল থেকে তৈরি হৃৎ​পিণ্ডের টিস্যু l ছবি: সিবিএস নিউজ

মানুষের হৃৎপিণ্ডের টিস্যু এবার পরীক্ষাগারে সফলভাবে তৈরি করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিজ্ঞানী স্টেম সেল থেকে তৈরি করেছেন হৃৎপিণ্ডের পেশিকোষের এসব টিস্যু। এতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে পারে বলে তাঁরা আশা করছেন। এমনকি একদিন হয়তো রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপনও করা যাবে এ ধরনের টিস্যু।
নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাইয়ের আইকান স্কুল অব মেডিসিনের হৃৎপিণ্ড-কোষ এবং টিস্যুপ্রকৌশল বিভাগের পরিচালক কেভিন কস্টা সিবিএস নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তাঁরা মানুষের হৃৎপিণ্ডের জীবন্ত কোষগুলো গবেষণাগারে তৈরি করার চেষ্টা করছেন।
কস্টা ও তাঁর সহযোগীদের এই উদ্ভাবন চিকিৎসা গবেষণার ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। তবে তাঁরা আপাতত চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণাকে আরও ক্রিয়াশীল করতে এই টিস্যুগুলো ব্যবহার করতে চান।
নতুন কোনো চিকিৎসা বা পরীক্ষামূলক ওষুধ ব্যবহার করার ব্যাপারটি বেশ দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। কারণ, গবেষক ও ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ জন্য কঠোর নিয়মকানুন অনুসরণ করে ওষুধের বহু রকমের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়। এসব প্রক্রিয়ার মধ্যে অনেকগুলোই ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
কস্টা বলেন, সবচেয়ে বেশি মাশুল দিতে হয় যখন বড় কোনো প্রাণী বা রোগীর ওপর প্রাথমিক পরীক্ষায় ব্যর্থতা আসে। তাই তাঁরা চেষ্টা করছেন গবেষণাগারে কোনো নতুন উপায়ে সেই পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা যায় কি না, তা আবিষ্কারের। এতে বড় ব্যর্থতার আগেই নির্দিষ্ট নতুন ওষুধ বা চিকিৎসাপদ্ধতির কার্যকারিতা সম্পর্কে ধারণা মিলবে। গবেষণাগারে হৃৎপিণ্ডের টিস্যু তৈরির মধ্য দিয়ে সেই সম্ভাবনাই জোরালো হয়েছে। এটি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা আগেই জানতে পারবেন কোন চিকিৎসাপদ্ধতি বা ওষুধ ব্যবহারে সাফল্যের সম্ভাবনা কতটুকু। এতে পশুপাখির ওপর বারবার পরীক্ষা চালানোর প্রয়োজনীয়তা কমে আসবে।
এখানেই প্রক্রিয়াটির শেষ নয়; হৃৎপিণ্ডের টিস্যুগুলো গবেষণাগারের একটি পাত্রে দলা পাকিয়ে থাকবে। পরে সেই কোষগুলো একটি কোলাজেন ম্যাট্রিক্স উপাদানের সঙ্গে মিশে যাবে, যেমনটা মানুষের ত্বক ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গে দেখা যায়। কস্টা বলেন, সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে ওই মিশ্রণ নিজে নিজেই হৃৎপিণ্ডের পেশিকোষের আদলে একটি টিস্যু উৎপাদন করবে। এই প্রক্রিয়ায় বেশ কয়েকটি পর্যায় রয়েছে। তবে টিস্যুটিকে কেবল দেখতে হৃৎপিণ্ডের টিস্যুর মতো হলেই হবে না, সে রকম বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলিও অর্জন করতে হবে।
এখন পর্যন্ত হৃদ্রোগের প্রচলিত নানা ওষুধ বা অ্যাড্রেনালিন দিয়ে টিস্যুটির কার্যকারিতা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। গবেষক ইরিন টার্নবুলের নেতৃত্বে গত জানুয়ারিতে এফএএসইবি জার্নাল সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়, গবেষণাগারে তৈরি টিস্যুগুলো প্রতি মিনিটে ৭০ বার স্পন্দিত হয়। এটা প্রায় মানুষের আসল হৃৎপিণ্ডের মতোই। পরীক্ষায় দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্ক ও নবজাতকের হৃৎপিণ্ডের স্পন্দনের অনুরূপ বৈশিষ্ট্য রয়েছে এই গবেষণাগারের টিস্যুর।
এফএএসইবি জার্নাল-এর প্রধান সম্পাদক গেরাল্ড ওয়েইসমান বলেন, এই গবেষণা বেশ আশাব্যঞ্জক। নতুন টিস্যুটি ভবিষ্যতে প্রয়োজন অনুযায়ী স্পন্দিত হবে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
এই গবেষক দলের মূল লক্ষ্য হৃদ্রোগ নিয়ে ভবিষ্যৎ গবেষণায় অগ্রগতি অর্জন। তাঁরা হৃদ্রোগের উন্নততর চিকিৎসা আবিষ্কারের লক্ষ্যেই এ টিস্যুগুলো ব্যবহার করতে চান। একটি হার্ট অ্যাটাকের পরে কীভাবে হৃৎপিণ্ডের পেশিগুলোকে শক্তিশালী করা যায়, তাঁরা সেই পদ্ধতি আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন। আরেক দল গবেষক ট্যাকিকার্ডিয়ার (হৃদ্স্পন্দনের গতি যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে যায় এবং খেলাধুলা করতে গিয়ে সুস্থ লোকজনও আকস্মিক হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়) কারণ নিয়ে গবেষণা করছেন। তাঁরাও ওই গবেষণাগারে তৈরি টিস্যুগুলো কাজে লাগাতে পারবেন। এ ছাড়া অসামঞ্জস্যপূর্ণ ওষুধে হৃৎপিণ্ডের ওপর কী রকম প্রভাব পড়ে, তা নিয়ে গবেষণায়ও প্রভাব পড়বে। যেমন ক্যানসারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপি দেওয়া হলে মাংসপেশির নানা ক্ষতি হয়। তবে কস্টা বলেন, হৃৎপিণ্ডে এ ধরনের টিস্যু প্রতিস্থাপনের আগে আরও বহু রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। সূত্র: সিবিএস নিউজ।