বা ং লা ২ য় প ত্র

প্রশ্নোত্তর 
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আজ বাংলা ২য় পত্র থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।
সন্ধি
প্রশ্ন: বাংলা ভাষায় সন্ধির প্রয়োজনীয়তা ব্যাখা করো।
উত্তর: সন্ধির প্রয়োজনীয়তা: সন্ধি ভাষার শ্রুতিমধুরতা আনে, সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। সন্ধির ফলে ভাষা সংক্ষিপ্ত হয়। তা ছাড়া সন্ধির মাধ্যমে নতুন নতুন শব্দ গঠন হয়। ফলে ভাষা নির্মাণে সন্ধির প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।
অনেকে বাংলা ভাষায় সন্ধির প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেন না। বাংলা উচ্চারণরীতির সঙ্গে বাংলা সন্ধির নিয়ম জড়িত। সংস্কৃতের অনুসরণে বাংলা ভাষায় সন্ধি এসেছে। সংস্কৃত শব্দের সন্ধি সংস্কৃত নিয়ম অক্ষুণ্ন রেখেই বাংলা ভাষায় প্রচলিত। সাধারণত তৎসম শব্দের সঙ্গে তৎসম শব্দের সন্ধি হয়। বাংলা শব্দের সঙ্গে সংস্কৃত শব্দের সন্ধি হয় না। বাংলা ভাষায় প্রচলিত বিদেশি শব্দের সন্ধি করা বিধেয় নয়। বাংলা ক্রিয়াপদের সঙ্গে অন্য শব্দের সন্ধি হয় না। তা ছাড়া ভাষা যেখানে দুর্বোধ্য ও শ্রুতিকটু হয়ে পড়ে, সেখানে সন্ধি না করাই শ্রেয়।
সন্ধি উচ্চারণের সরলীকরণ করে, ভাষার সহজ ও স্বচ্ছন্দ গতি নিশ্চিত করে। সুতরাং সন্ধির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
প্রশ্ন: সন্ধি কাকে বলে? সন্ধির সাহায্যে কীভাবে শব্দ গঠন করা যায়, উদাহরণসহ বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: সন্ধির সংজ্ঞা: সন্ধি অর্থ মিলন। পরস্পর সন্নিহিত দুটি বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে। সন্ধিতে পূর্বপদের বর্ণের সঙ্গে পরপদের প্রথম বর্ণের মিলন ঘটে। যেমন: বিদ্যা+আলয় = বিদ্যালয়, শুভ+ইচ্ছা = শুভেচ্ছা।
সন্ধির সাহায্যে শব্দ গঠনের পদ্ধতি: সন্ধির কাজ হচ্ছে বর্ণের সঙ্গে বর্ণ মিলিয়ে নতুন শব্দ গঠন করা। যেমন: নরাধম। এখানে ‘নর’ এবং ‘অধম’—এ দুটি পদের মিলন হয়েছে। ‘নর’-এর অন্ত্যস্বর ‘অ’ আর ‘অধম’-এর আদ্যস্বর ‘অ’ উভয়ে মিলে আ-কার হয়েছে। আর এই ‘আ’-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হওয়ার ফলে নতুন শব্দ ‘নরাধম’ সৃষ্টি হয়েছে। অনুরূপভাবে—অ বা আ-কারের পর ই-কার থাকলে ‘অ’ বা ‘আ’-এর স্থানে ‘এ’ হয়। এ-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয়। যেমন: শুভ+ইচ্ছা = শুভেচ্ছা। এমনিভাবে পরস্পর সন্নিহিত দুটি ধ্বনির মিলনে সন্ধি নতুন শব্দ গঠন করে।
পারিভাষিক শব্দ প্রয়োগবিধি
প্রশ্ন: পারিভাষিক শব্দ কাকে বলে? পারিভাষিক শব্দের প্রয়োজনীয়তা কী?
উত্তর: পরিভাষা: স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে রাষ্ট্রভাষা বাংলা সর্বস্তরে চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশ মোতাবেক বাংলা ভাষা সর্বত্র ব্যবহারের প্রচেষ্টা চলছে। কিন্তু বাংলা ভাষা ব্যবহারে কিছু সমস্যা দেখা যায়। কারণ, দীর্ঘদিন ধরে অফিস-আদালত ও উচ্চ শিক্ষাক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার বহুল প্রচলন থাকায় কতিপয় শব্দ ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়ে গেছে। এই প্রচলন আমাদের দৈন্যদশাকেই প্রমাণ করে। এই যে প্রচলিত ইংরেজি শব্দ, যার সঠিক প্রতিশব্দ বাংলায় আবিষ্কৃত হয়নি বা ব্যবহূত হয় না, তাকেই পরিভাষা বলা হয়। যেমন—Appeal, Bank, Boiler ইত্যাদি।
পরিভাষার প্রয়োজনীয়তা: পরিভাষা ব্যবহারের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়তা পরিলক্ষিত হয় তখন, যখন প্রচলিত শব্দটির কোনো বাংলা প্রতিশব্দ পাওয়া যায় না। আর পাওয়া গেলেও সেটি যদি অপ্রচলিত থাকে, তবে পরিভাষার প্রয়োজন দেখা দেয়। মনে রাখা দরকার, ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়। ভাষা প্রবহমান নদীর মতো। পরিভাষা সুনির্দিষ্ট অর্থবহ বলেই তা প্রচলিত হয়েছে। অনেক সময় মূল ভাষার শব্দ টেকসই থাকে না বলেও পরিভাষা ব্যবহার করা হয়। মনে রাখতে হবে, পরিভাষা, বিকল্প ভাষা ও সহজবোধ্যতার জন্যই ব্যবহূত হয়। যেমন: পুলিশ, ফ্যান-এর প্রতিশব্দ অদ্যাবধি অনাবিষ্কৃত বলেই পরিভাষা ব্যবহার করতে হয়।
# পরবর্তী অংশ ছাপা হবে আগামীকাল