বাংলা ১ম পত্র

আঁকাঃ কাইয়ুম চৌধুরী
আঁকাঃ কাইয়ুম চৌধুরী

বঙ্গভূমির প্রতি
প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ বাংলা ১ম পত্রের কবিতাংশ থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্ন দেওয়া হলো।
১.
আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে
—এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয় হয়তো বা
শঙ্খচিল শালিকের বেশে
হয়তো ভোরের কাক হয়ে
এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে
একদিন আসিব এ কাঁঠাল-ছায়ায়;
২.
রেখো মা দাসেরে মনে, এ মিনতি করি পদে
সাধিতে মনের সাধ, ঘটে যদি পরমাদ,
মধুহীন করো না গো তব মনঃকোকনদে।
প্রশ্ন:
ক. বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম মহাকাব্যের নাম কী?
খ. কবি বর প্রার্থনা করেন কেন—ব্যাখ্যা করো।
গ. কবিতাংশ দুটিতে কী অমিল লক্ষ করা যায়?
ঘ. কবিতাংশ দুটির মূল সুর একই—মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: ক. বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম মহাকাব্যের নাম ‘মেঘনাদবধ’ কাব্য।
উত্তর: খ. কবি যেন দেশমাতৃকার স্মৃতিতে জেগে থাকতে পারেন, সে জন্য বর প্রার্থনা করেন।
দেশের প্রতি ভালোবাসা যেন মানুষের কাছে একটি শাশ্বত বিষয়। কবিও তাঁর দেশকে শাশ্বত ভালোবাসেন। কবি যে ভুল করেছেন, তা ভুলে যেন স্বদেশমাতা কবিকে তাঁর হূদয়ে স্থান দেন। পদ্মফুল যেমন সরোবরে ফুটে থাকে, কবিও তেমনি, দেশমাতার স্মৃতিতে ফুটে থাকতে চান—এ জন্য কবি বর প্রার্থনা করেন।
উত্তর: গ. স্বদেশের প্রতি ভালোবাসার কথা থাকলেও প্রকাশের ভিন্নতার জন্যই কবিতাংশ দুটিতে অমিল সৃষ্টি করেছে।
উদ্দীপকে প্রথম কবিতাংশের কবি মৃত্যুর পরও আবার এই বাংলাতেই ফিরে আসার যে ইচ্ছা পোষণ করেছেন, তার সাথে প্রকাশগত কিছু পার্থক্য দেখা যায় উদ্দীপকের দ্বিতীয় অংশে। উদ্দীপকের দ্বিতীয় অংশে কবি শ্রদ্ধা ও বিনয়ের সঙ্গে দেশমাতৃকার কাছে একটি অনুরোধ করছেন—যেন তিনি স্বদেশের স্মৃতিতে ঠাঁই পান।
উদ্দীপকের কবিতা দুটির প্রথমাংশে দেখা যায়, কবি বাংলায় মৃত্যুর পরও ফিরে আসতে চান এই বাংলার প্রকৃতি ভালোবেসে। মানুষ হয়ে না হলেও শঙ্খচিল কিংব শালিকের বেশে এ বাংলার কাঁঠাল ছায়ায় কবি স্থান পেতে চান। আর উদ্দীপকের দ্বিতীয়াংশের কবির প্রার্থনা, জন্মভূমি মাতা যেন তাকে মনের মণিকোঠায় স্থান দেন। তিনি যেন দেশমাতার মন থেকে কোনোভাবেই হারিয়ে না যান। প্রথমাংশের ফিরে আসার সাথে উদ্দীপকের দ্বিতীংশের যে চাওয়া তা বেশ অমিলের বিষয়। কারণ স্বদেশের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ দুই কবিতাংশে দুই ভাবে ফুটে উঠেছে; এখানেই মূলত অমিল লক্ষ্য করা যায়।
উত্তর: ঘ. স্বদেশের প্রতি বিনম্র প্রেমই উদ্দীপকের উভয় কবিতার মূল সুর এক করেছে।
স্বদেশপ্রেম হলো মানুষের মহৎ গুণ। উদ্দীপকের কবিতাংশের দুটি ধারাতেই দেশের প্রতি ভালোবাসা বিনম্রভাবে ফুটে উঠেছে। প্রথমাংশের কবি যেমন দেশপ্রেমে মুগ্ধ; তেমনি দ্বিতীয়াংশের কবি দেশের প্রতি আনুগত্য।
উদ্দীপকের দুটি কবিতাংশে দেশপ্রেমের মূল আবেগটি একই সুরে মিলে গেছে। উভয় ক্ষেত্রেই স্বদেশের বুকে জায়গা পাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশিত হয়েছে। উভয় কবি যেন এই দেশকে ভালোবেসে এই দেশেই থেকে যেতে চান। উদ্দীপকের প্রথমাংশের কবি মৃত্যুর পরও যেমন এখানে আবার ফিরে আসতে চান ঠিক তেমনি মাইকেল মধুসূদন দত্তও দেশের হূদয়ে স্থান পেতে ব্যাকুল।
স্বদেশের প্রতি আবেগ-অনুভূতির প্রকাশই উদ্দীপকের কবিতাংশ দুটির মূল কথা। উভয় কবির মাঝে দেশের প্রতি এক বিরাট টান অনুভব করা যায়। তাতে প্রকাশের ভিন্নতা যেভাবেই আসুক না কেনো উভয় কবিতাতে প্রকাশ পেয়েছে দেশমাতৃকার প্রতি বিমুগ্ধ টান। উদ্দীপকের প্রথম কবি যেভাবেই হোক এই বাংলায় ফিরে আসতে চেয়েছেন।
উদ্দীপকের দ্বিতীয়াংশের কবিও কখনো দেশমাতাকেই বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করেছেন স্মৃতিতে একটু ঠাঁই দেওয়ার জন্য। যেকোনো ভাবেই হোক উভয় কবিতাতেই ফুটে উঠেছে স্বদেশের প্রতি প্রগাঢ় ও বিনম্র শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা; যা উভয় কবিতাংশকেই এই সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়েছে।
মোস্তাফিজুর রহমান লিটন, শিক্ষক
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ঢাকা