বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাবে পিঁপড়া!

রেড হার্ভেস্টার অ্যান্ট নামের এক ধরনের পিঁপড়া পাথুরে মাটিতে প্রাকৃতিক কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণের মাত্রা প্রায় ৩৩৫ গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। অন্য কয়েকটি প্রজাতির পিঁপড়াও এ ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে
রেড হার্ভেস্টার অ্যান্ট নামের এক ধরনের পিঁপড়া পাথুরে মাটিতে প্রাকৃতিক কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণের মাত্রা প্রায় ৩৩৫ গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। অন্য কয়েকটি প্রজাতির পিঁপড়াও এ ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে

এমন যদি হতো, আমরা বাড়ির পেছনের উঠোনে একটি দেয়াল তৈরি করতাম আর তা প্রতিদিন আমাদের কাজকর্ম থেকে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইডের কিছু অংশ শোধন করে দিত। পরিবেশ সচেতন সবাই নিঃসন্দেহে এ ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে উঠতেন।
যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক এমনই এক দেয়ালের কথা জানিয়েছেন। আর সেই দেয়ালের মধ্যে থাকবে পিঁপড়ার বসতি (কলোনি)। অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক রোনাল্ড ডর্ন একধরনের বিশেষ খনিজসমৃদ্ধ মাটি ও পিঁপড়ার বসতি বা উপস্থিতির প্রভাবে সেই মাটির কার্বন শোষণ ক্ষমতা নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, পরিকল্পিত এই দেয়াল শুধু পুরোনো ইট দিয়ে তৈরি হবে না, এতে থাকবে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম খনিজের প্রলেপ। দেয়ালটিতে পিঁপড়ার বসবাসের উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যাবে।
দেয়াল দিয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোধনের পরিকল্পনাটি নিশ্চয়ই বেশ অদ্ভুত। গবেষক ডর্ন নিজেও তা স্বীকার করেন। তার পরও তিনি আশা করেন মানুষ একদিন ব্যক্তিগতভাবে প্রাকৃতিক খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ এবং পিঁপড়ার বসবাসোপযোগী এ রকম দেয়াল তৈরি করবে। ফলে পরিবেশে এই গ্যাসের নির্গমন সীমিত থাকবে। এতে বৈশ্বিক উষ্ণতাও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থার গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনবিষয়ক তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মানুষের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের কারণে সবচেয়ে বেশি নির্গত হয় কার্বন ডাই-অক্সাইড। শিল্প বিপ্লবের পর থেকেই এই হার ধীরে ধীরে বেড়েছে।
খনিজ পদার্থের দেয়াল ও সেখানে পিঁপড়ার আবাস তৈরি করে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোধনের বিষয়ে ধারণা পাওয়া গেছে বিজ্ঞান সাময়িকী জিওলজিতে সম্প্রতি প্রকাশিত ডর্নের এক নিবন্ধে। এতে বলা হয়, খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ মাটির মধ্যে পিঁপড়ার আবাস থাকলে এর কার্বন শোষণমাত্রা ৩৩৫ গুণ বেড়ে যায়। ওই গবেষণা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক ডেভিড শুওয়ার্টজম্যান প্রকৃতিতে পিঁপড়ার আবাস বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন।
অধ্যাপক ডর্ন বলেন, মাটিতে থাকা খনিজ ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম প্রাকৃতিকভাবেই কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে কার্বনসমৃদ্ধ লাইমস্টোন (চুনাপাথর) বা ডলোমাইট (কার্বনসমৃদ্ধ খনিজ) তৈরি করে। এই প্রক্রিয়ায় কার্বন শোধন দীর্ঘ সময় ধরেই পৃথিবীতে চলছে।
ডর্ন অনুমান করেন, এই কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণের কারণে গাছের চারপাশে এই গ্যাসের মাত্রা বা পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে। আর খনিজসমৃদ্ধ মাটিতে পিঁপড়ার আবাস থাকলে তা কার্বনের মাত্রা ঠিক রাখার সুযোগ অনেক বাড়িয়ে দেয়। এই রাসায়নিক প্রক্রিয়া পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চুনাপাথর পৃথিবীকে বাসযোগ্য রেখেছে।
খনিজসমৃদ্ধ দেয়াল ও পিঁপড়ার আবাসের সমন্বিত প্রভাবে পরিবেশে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোধন কীভাবে বৃদ্ধি পায়, সেই প্রক্রিয়া সম্পর্কে গবেষকেরা এখনো সুস্পষ্ট ধারণা পাননি। আর খনিজসমৃদ্ধ মাটির মধ্যে পিঁপড়ার আবাসের কারণে কার্বন শোষণমাত্রা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি ডর্ন অনেকটা কাকতালীয়ভাবেই আবিষ্কার করেন বলা চলে। ১৯৯০-এর দশকে তাঁর এক গবেষণার প্রয়োজনে খনিজ পদার্থ সংগ্রহের সময় পিঁপড়া এক ধরনের উৎপাত হিসেবে দেখা দিয়েছিল। তখন মাঝেমধ্যে ড্রিল মেশিন দিয়ে পাথুরে মাটিতে গর্ত খুঁড়তে গিয়ে তাঁকে পিঁপড়ার কামড় খেতে হয়েছে। ২৫ বছর পর তিনি সংগৃহীত ওই খনিজগুলোর কার্বন শোষণমাত্রা নিয়ে গবেষণা করেন। আর তখনই তিনি জানতে পারেন পিঁপড়ার আবাসস্থলের খনিজসমৃদ্ধ মাটির কার্বন শোষণক্ষমতা সম্পর্কে।
ডর্ন ও শুওয়ার্টজম্যান—দুজনেই স্বীকার করেছেন, একবার পিঁপড়ার কার্বন শোষণ প্রক্রিয়া জানা গেলে পরবর্তী সময়ে হয়তো এটির সহায়তার আর প্রয়োজন না-ও হতে পারে। ডর্ন বলেন, বর্তমানে পোকামাকড়ের কার্বন শোষণের প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে তেমন একটা গবেষণা নেই। তবে পিঁপড়া কোন নির্দিষ্ট অঙ্গ বা প্রক্রিয়ায় কার্বন শোষণ করছে এবং সেই প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানা গেলেই এটি ব্যাপকভাবে বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া যাবে। সায়েন্টিফিক আমেরিকান।