ভারতে ফেসবুক বিতর্ক তুঙ্গে

ফেসবুক স্বীকার করেছে যে তাদের প্ল্যাটফর্মে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য রোধ করতে আরও ভালো করতে হবে। সম্প্রতি ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতাদের ঘৃণ্য বক্তব্যকে উপেক্ষা করার অভিযোগ উঠেছে ফেসবুকের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে কঠোর সমালোচনাও হচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ফেসবুক ঘৃণ্য বক্তব্য রোধে তাদের আরও ভালো কাজের কথা বলেছে। আল–জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

গত সপ্তাহে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক প্রতিবেদনে জানায়, ভারতে ফেসবুকের একজন শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেপি নেতাদের বিদ্বেষমূলক ঘৃণ্য মন্তব্য মুছতে অস্বীকার করেন। এতে ফেসবুকের ব্যবসায়িক স্বার্থ নষ্ট হবে বলে তিনি এসব পোস্টের পক্ষে অবস্থান নেন। ফেসবুকের ওই কর্মীর নাম আঁখি দাস। তিনি ফেসবুকের ভারতের পাবলিক পলিসি এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোয় বলা হচ্ছে, ভারতের মতো বড় বাজারকে কবজায় রাখতে গিয়ে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির ক্ষেত্রে পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগ উঠছে ফেসবুকের বিরুদ্ধে। আঁখি দাসের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই দায়ের হয়েছে মামলা। ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো এবং উসকানির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে চণ্ডীগড়ে মামলা করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের পক্ষে সাফাই দিতে গতকাল মুখ খুলেছেন ফেসবুক ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর অজিত মোহন।

পক্ষপাতের অভিযোগ অস্বীকার করে অজিত বলেন, ‘আমাদের প্ল্যাটফর্মে ঘৃণ্য বক্তব্য ঠেকাতে উন্নতি করেছি। আমাদের আরও অনেক কিছু করতে হবে।’

ভারতের হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, ফেসবুকের ভারত, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ‘পাবলিক পলিসি’-র কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন আঁখি দাস। তিনি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনটির সারমর্ম ফেসবুকে পোস্ট করায় এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দিল্লিতে মামলা করেছিলেন। এরপর গতকাল আঁখি দাসের বিরুদ্ধে ছত্তিশগড় পুলিশ একটি এফআইআর করেছে।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল লিখেছে, বিজেপি নেতা টি রাজা সিং ফেসবুক পেজে রোহিঙ্গা ও মুসলমানদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন। আঁখি দাস ফেসবুক কর্মীদের বলেছিলেন, বিজেপি নেতাদের ক্ষেত্রে ঘৃণ্য বক্তব্যের নীতি প্রয়োগ করা যাবে না। ফেসবুকের কর্মীরা বিজেপি ও তাঁদের ঘনিষ্ঠদের পোস্টে ফ্ল্যাগ দেখালেও তা সরানো যাবে না।

অজিত মোহন বলেছেন, ‘গত কয়েক দিনে আমাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্টের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু আমরা এটা স্পষ্ট করে দিতে চাই, বিদ্বেষ রুখতে আমরা সর্বদা উদ্যোগী হয়েছি। কোনো রকম পক্ষপাত করা হয়নি কখনো।’

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনের পর ভারতীয় রাজনীতিতে ঝড় উঠেছে। এ বিষয়ে ফেসবুকের কাছে জবাবদিহি চেয়েছে কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলো। টুইটে ‘দেশে ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ বিজেপি-আরএসএস কুক্ষিগত করেছে’ বলে তোপ দেগেছেন রাহুল গান্ধী।

আগামী ২ সেপ্টেম্বর ভারতের সংসদীয় তথ্যপ্রযুক্তি কমিটির সামনে ফেসবুকের নির্বাহী কর্মকর্তাদের হাজির হতে বলা হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স অভ্যন্তরীণ সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, আঁখি দাস (৪৯) অভ্যন্তরীণভাবে কর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। ফেসবুক নেতৃবৃন্দের কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন ১১ জন কর্মী। ওই চিঠিতে কোম্পানির নেতৃত্বকে ‘মুসলিমবিরোধী গোঁড়ামি’ নিন্দা জানাতে আরও নীতিগত ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। চিঠিতে ভারতসহ অন্য দেশেও নীতিমালা টিমে সব ধরনের মানুষকে যুক্ত করতে বলা হয়েছে।

বর্তমানে বিশ্বে বৃহৎ সামাজিক যোগাযোগের নেটওয়ার্ক হিসেবে ঘৃণ্য বক্তব্য, ভুয়া খবর, রাষ্ট্রসমর্থিত ভুয়া তথ্য, সহিংস কনটেন্ট ছড়ানো রোধে ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুধু ফেসবুক নয়, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের বিরুদ্ধেও ভুয়া তথ্য ছড়ানোয় ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।