শাওমির ফোন ব্যবহারকারীদের তথ্য সিঙ্গাপুরে পাঠানোর অভিযোগ

শাওমির স্মার্টফোনে ব্যবহারকারীর তথ্যে নজরদারির অভিযোগ উঠেছে
ছবি: রয়টার্স

চীনা স্মার্টফোন কেনা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছে ইউরোপের দেশ লিথুয়ানিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। কারও কাছে থাকলে সেটিও ছুড়ে ফেলতে বলা হয়েছে। দেশটির এক সরকারি প্রতিবেদনে ডিভাইসগুলোতে আগে থেকেই (বিল্ট-ইন) নজরদারির উপাদান থাকে বলে জানানোর পর এমন সুপারিশ করা হলো।

লিথুয়ানিয়ার রাষ্ট্র পরিচালিত সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা গত মঙ্গলবার জানিয়েছে, চীনা স্মার্টফোন তৈরির প্রতিষ্ঠান শাওমি করপোরেশনের ইউরোপে বাজারজাত করা প্রথম সারির স্মার্টফোনগুলোতে নির্দিষ্ট কিছু শব্দ বা শব্দগুচ্ছ চিহ্নিত করে সেগুলো পরিমার্জনের ক্ষমতা রয়েছে। শব্দগুচ্ছগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘ফ্রি তিব্বত’, ‘লং লিভ তাইওয়ান ইনডিপেনডেন্স’ ও ‘ডেমোক্রেসি মুভমেন্ট’।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য শাওমির মি ১০টি ফাইভজি মডেলের স্মার্টফোনের সফটওয়্যারে সেন্সরশিপের অপশন বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে চাইলেই দূর থেকে সেটি সচল করা যায় বলে লিথুয়ানিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা কেন্দ্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শাওমির ফোনগুলো ব্যবহারকারীর তথ্য এনক্রিপ্ট করে সিঙ্গাপুরের একটি ডেটা সার্ভারে পাঠায়। হুয়াওয়ের পি৪০ ফাইভজি মডেলের স্মার্টফোনেও নিরাপত্তাত্রুটি মিলেছে। তবে আরেক চীনা প্রতিষ্ঠান ওয়ানপ্লাসের স্মার্টফোনে কোনো ত্রুটি পায়নি সাইবার নিরাপত্তা সংস্থাটি।

প্রতিবেদনটি তুলে ধরার সময় লিথুয়ানিয়ার প্রতিরক্ষা উপমন্ত্রী মারগিরিস আবুকেভিসিয়াস সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের পরামর্শ হলো নতুন চীনা স্মার্টফোন না কেনা। আর যেগুলো আগেই কেনা হয়েছে, সেগুলো থেকে যত দ্রুত সম্ভব নিস্তার পাওয়া।’

লিথুয়ানিয়ায় তাইওয়ানের দূতাবাসের নাম ‘তাইওয়ানিজ রিপ্রেজেন্টেটিভ অফিস’ রাখার ঘোষণা দিলে চটে যায় চীন। গত মাসে চীন জানায়, লিথুয়ানিয়া থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে আনা হবে। একই সঙ্গে বেইজিং থেকে লিথুয়ানিয়ার রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে নিতে বলা হয়।

তাইওয়ানকে নিজেদের অঞ্চল হিসেবে দাবি করে চীন। ঝামেলা এড়ানোর জন্য ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে তাইওয়ানের দূতাবাসের উল্লেখ করতে চাইলে ‘তাইওয়ান’ না বলে ‘তাইপেই’ উল্লেখ করা হয়।

ইন্টারনেট ব্রাউজারসহ শাওমির সিস্টেম অ্যাপগুলো বর্তমানে ৪৪৯টি চীনা শব্দ সেন্সর করতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ‘এটা কেবল লিথুয়ানিয়ার জন্য নয়, বরং শাওমির যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে এমন সব দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’

শাওমির অস্বীকার

লিথুয়ানিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন ঠিক নয় বলে দাবি করেছে শাওমি। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর গতকাল বুধবার প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর আদান–প্রদান করা তথ্য সেন্সর করে না।

রয়টার্সকে পাঠানো এক বিবৃতিতে শাওমির মুখপাত্র বলেছেন, শাওমি কখনো ওয়েব ব্রাউজিং, কল কিংবা অন্য কোনো যোগাযোগের সফটওয়্যার ব্যবহারের মতো গ্রাহকদের ব্যক্তিগত কোনো কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি বা তা করতে না দেওয়ার মতো কিছু করেনি। ভবিষ্যতেও এ রকম কিছু করবে না।

সব ব্যবহারকারীর আইনি অধিকারের প্রতি শাওমির পূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে এবং তার সুরক্ষা দেওয়া হয়।