অধ্যায়-৩
প্রিয় শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্রের অধ্যায়-৩ থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।
সায়মন পুরোহিত। তিনি সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত। সমাজের নানা ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বিবাদ-মীমাংসা থেকে শুরু করে যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তার মতামত গুরুত্ব পায়। তার মতো অন্যান্য ধর্মগুরু ও যোদ্ধারাও সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তি।
প্রশ্ন:
ক. শ্রেণিসংগ্রাম তত্ত্বের প্রবক্তা কে?
খ. আল আসাবিয়া বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকটি পড়ে সমাজ বিকাশের ক্ষেত্রে অগাস্ট কোঁতের কোন স্তরের কথা তোমার মনে পড়ে?
ঘ. ‘সমাজবিজ্ঞানে অগাস্ট কোঁতের অবদান অসামান্য’—কথাটির যথার্থতা নিরূপণ করো।
উত্তর: ক. শ্রেণিসংগ্রাম তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন কার্ল মার্ক্স।
উত্তর: খ. সহজ অর্থে আল আসাবিয়া বা সামাজিক সংহতি বলতে মানসিক ঐক্যকে বোঝানো হয়, যার দ্বারা মানুষ পরস্পরের সাথে সম্পৃক্ত। অর্থাৎ যে মানসিক চেতনা বা বন্ধনে মানুষ একে অন্যের সাথে একাত্মবোধ করে, একে অন্যকে সাহায্য-সহযোগিতা করে, তা-ই সামাজিক সংহতি। সামাজিক সংহতি ছাড়া সমাজ গঠন হতে পারে না। ইবনে খালদুনই আল আসাবিয়া বা সামাজিক সংহতি নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন। রক্ত, ধর্ম, জাতীয়তা প্রভৃতির মাধ্যমে এ সংহতি গড়ে উঠে বলে তিনি মত দেন। এ সংহতির ক্ষেত্রে তিনি গোষ্ঠী সংহতির ওপর জোর দেন।
উত্তর: গ. উদ্দীপকে সমাজ বিকাশের ক্ষেত্রে অগাস্ট কোঁতের ধর্মতাত্ত্বিক স্তরকে নির্দেশ করা হয়েছে। অগাস্ট কোঁত বিবর্তনের ধারায় মানবসমাজের বিকাশকে তিনটি স্তরে ভাগ করেছে। প্রথম স্তর হিসেবে তিনি ধর্মতাত্ত্বিক স্তরের কথা বলেন। এ স্তর হলো মানবসমাজ বিকাশের প্রাথমিক স্তর। এ স্তরের অন্যতম দিক হলো, এখানে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজের নানা বিষয় ব্যাখ্যা করা হয়। এ স্তরে সমাজজীবনে ধর্মের প্রভাব অত্যধিক। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধর্মগুরু তথা পুরোহিতদের প্রভাব থাকে বেশি। একইভাবে এ ধরনের সমাজে যুদ্ধবিগ্রহ লেগেই থাকে। তাই এ ধরনের সমাজে সামরিক বাহিনী তথা যোদ্ধাদের প্রভাবও বেশি লক্ষ করা যায়।
উদ্দীপকে দেখা যাচ্ছে, সায়মন পুরোহিত। তাই সমাজে তার প্রভাব বেশি। অন্যদিকে, তার মতো সমাজে যোদ্ধারাও প্রভাবশালী ব্যক্তি। এ ধরনের বৈশিষ্ট্য অগাস্ট কোঁত বর্ণিত ধর্মতাত্ত্বিক স্তরেই বিদ্যমান। তাই উদ্দীপকে ধর্মতাত্ত্বিক স্তরকেই নির্দেশ করা হয়েছে।
উত্তর: ঘ. সমাজবিজ্ঞানে অগাস্ট কোঁতের অবদান অপরিসীম। তার অবদান মূল্যায়নের মাধ্যমে কথাটির যথার্থতা নিরূপণ করা হলো।
অগাস্ট কোঁত ১৮৩৯ সালে Sociology শব্দটি ব্যবহারের মাধ্যমে জ্ঞানের রাজ্যে সমাজবিজ্ঞানে আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। তাঁর মাধ্যমেই সমাজবিজ্ঞান একটি বিজ্ঞান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তাই তাঁকে সমাজবিজ্ঞানের জনক বলা হয়। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ Positive Philosophy ও Positive Polity এখনো সমাজ বিজ্ঞানীদের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ।
অগাস্ট কোঁত সমাজের বিকাশকে তিনটি স্তরে ভাগ করেন। প্রতিটি সমাজ এই তিনটি স্তরের মধ্য দিয়ে বিকাশ লাভ করে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। সর্বশেষ স্তর হিসেবে তিনি দৃষ্টবাদী স্তরের কথা বলেন। সমাজ বিকাশের এ স্তরে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশ ত্বরান্বিত হবে। সামাজিক প্রগতি ও যুক্তিনির্ভর সমাজের ভিত্তি রচিত হবে বলে তাঁর ধারণা।
সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়কে তিনি দুই ভাগে ভাগ করেন। এক ভাগের নাম দেন সামাজিক স্থিতি, যা সমাজের স্থিতিশীল বিষয় যেমন পরিবার, ধর্ম, শিক্ষা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। অন্য ভাগের নাম দেন সামাজিক গতি, যা সমাজের গতিশীল বিষয় যেমন সামাজিক পরিবর্তন, প্রগতি, উন্নয়ন প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। এ ছাড়া তিনি সামাজিক পরিবর্তন, সামাজিক গবেষণাপদ্ধতিসহ নানা বিষয় নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা দিয়ে সমাজবিজ্ঞানকে একটি শক্তিশালী বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস চালিয়েছেন।
ওপরের আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে সমাজবিজ্ঞানে অগাস্ট কোঁতের অবদান অসামান্য।
মোহাম্মদ হেদায়েত উল্যাহ, প্রভাষক
এনায়েতবাজার মহিলা কলেজ, চট্টগ্রাম