হার্ভার্ডের ছাত্রাবাস থেকে শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানি হওয়ার গল্প

ফেসবুকের লোগো
ছবি রয়টার্স

আগামী বুধবার শেয়ারবাজারে প্রবেশের ১০ বছর পূর্ণ করছে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক। প্রতিষ্ঠানটি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। শুরু থেকে এ পর্যন্ত ফেসবুকের বিভিন্ন ঘটনা পেছন ফিরে দেখেছে বার্তা সংস্থা এএফপি।  

শুরুর গল্প

ঘটনা ২০০৩ সালের। ১৯ বছর বয়সী মার্ক জাকারবার্গ তখন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ছাত্রাবাসের রুমে বসেই অনলাইন নেটওয়ার্কের কাজ শুরু করেন তিনি। প্রাথামিক লক্ষ্য ছিল, প্ল্যাটফর্মে হার্ভার্ডের শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা। ২০০৩ সালেই তিনি ফেসবুকডটকম শুরু করেন। জাকারবার্গের সঙ্গী ছিলেন হার্ভার্ডের তিন রুমমেট ও ক্লাসমেট—ক্রিস হিউজ, এডুয়ার্ডো সাভেরিন ও ডাস্টিন মসকোভিৎজ।

উত্তর আমেরিকার অন্য কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য ফেসবুকের সদস্যপদ উন্মুক্ত করে দিয়ে পড়ালেখায় ইস্তফা দেন জাকারবার্গ। হার্ভার্ড থেকে তিনি চলে যান সিলিকন ভ্যালিতে।

নতুন কোম্পানি ফেকবুক প্রথম বিনিয়োগ পায় পেপালের সহপ্রতিষ্ঠাতা পিটার থিয়েলের কাছ থেকে। বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল পাঁচ লাখ ডলার। ২০০৫ সালে কোম্পানির নাম বদলে ফেসবুক করা হয়।

বিক্রির জন্য নয়

বিনিয়োগ পাওয়ার পরের বছরেই ফেসবুক কেনার প্রস্তাব দেয়। ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া একসঙ্গে ভায়াকম ও ইয়াহু ফেসবুক কেনার জন্য আলাদা প্রস্তাব দেয়। দুই প্রস্তাবই ফিরিয়ে দেওয়া হয়। মাইক্রোসফট ২৪ কোটি ডলার দিয়ে ২০০৬ সালে ফেসবুকের সঙ্গে যুক্ত হয়। তখন ফেসবুকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল পাঁচ কোটি।

একই বছর জাকারবার্গ প্রথমবার ব্যক্তিগত গোপনীয়তাসংক্রান্ত ‘ভুল’ স্বীকার করেন। ঘটনাটি ঘটায় বিকন নামের এক বিজ্ঞাপনী সংস্থা। ফেসবুক ব্যবকারকারীরা কী কিনছেন সেটি অনুসরণ করে তাদের বন্ধুদের জানায় কোম্পানিটি। পরের বছরগুলোতে ফেসবুকের বিস্তৃতি আরও বাড়তে থাকে। ২০০৮ সালে মাইস্পেসকে টপকে ফেসবুক পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হয়। একই বছর কোম্পানিটি প্রথমবারের মতো মোবাইল অ্যাপ চালু করে।

প্রতিবাদের প্ল্যাটফর্ম ফেসবুকের যাত্রা শুরুর গল্প নিয়ে ডেভিড ফিনচার নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র দ্য সোশ্যাল নেটওয়ার্ক। ২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটি সেরা অ্যাডাপ্টেড চিত্রনাট্য, সেরা সংগীত ও সেরা সম্পাদনা বিভাগে অস্কার পুরস্কার পায়। একই বছর টাইম সাময়িকী মার্ক জাকারবার্গকে ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা করে।

সদস্য সংখ্যা যখন দ্রুত বাড়ছিল, ফেসবুক চলমান বিতর্কের নতুন মাধ্যমে পরিণত হয়। ২০১১ সালে তিউনিসিয়ায় শুরু হওয়া ‘আরব বসন্ত’ এবং মোহভঙ্গ হওয়া আরব তরুণদের প্রতিবাদ তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি।

স্টক মার্কেটে প্রবেশ

২০১২ সালে ফেসবুক ১ বিলিয়ন ডলার দিয়ে ছবি শেয়ারিং অ্যাপ ইনস্টাগ্রাম কিনে নেয়। টেক ক্ষেত্রের আইপিও বেড়ে ১৬ বিলিয়ন হয়, কোম্পানির মূল্য দাঁড়ায় ১০৪ বিলিয়ন ডলার। ২০১২ সালে ফেসবুকের সদস্যসংখ্যা ১ বিলিয়ন হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সমষ্টি

২০১৪ সালে ফেসবুক তরুণ স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা বাড়াতে উদ্যোগ নেয় ফেসবুক। এ জন্য বার্তা আদান–প্রদানের অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপ কিনে নেয় কোম্পানিটি। এ জন্য নগদ ও স্টক মূল্য দাঁড়ায় ১৯ বিলিয়নে। দুনিয়াজুড়ে ব্যাপক প্রসারের পর সিলিকন ভ্যালিতে ফেসবুকের নতুন সদর দপ্তর চালু হয়। প্রখ্যাত নকশাকার ফ্রাঙ্ক গেহরির নকশা করা সদর দপ্তরের ছাদে পার্ক রয়েছে।

কংগ্রেসের প্রশ্নবাণে জর্জরিত

২০১৬ সালে ফেসবুক বিতর্কে জড়ায়। অভিযোগ ওঠে, রাশিয়া ফেসবুক ব্যবহার করে নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাব ফেলার চেষ্টা করছে। যে কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়ী হতে পেরেছেন।

গত বছর মার্ক জাকারবার্গ ফেসবুক ইনকরপোরেটেডের নাম বদলে ‘মেটা’ রাখার ঘোষণা দেন
ছবি: রয়টার্স

২০১৮ সালে ব্রিটিশ একটি কনসাল্টিং ফার্ম রাজনৈতিক উদ্দেশে লাখ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ ওঠে। ফেসবুকের তথ্য ব্যবহার নিয়ে জাকারবার্গকে মার্কিন কংগ্রেসের মুখোমুখি হতে হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ফেসবুক ব্যবহার করে গণতন্ত্রকে অবমূল্যায়ন করার চেষ্টা করেছেন।

ফেসবুক থেকে মেটা

২০২১ সালে জাকারবার্গ ফেসবুকের কোম্পানির নাম বদলে ‘মেটা’ করার ঘোষণা দেন। জাকারবার্গ জানান, তিনি মনে করেন ভবিষ্যতে ভার্চু৵য়াল দুনিয়ায় মেটা নেতৃত্ব দেবে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কোম্পানির শেয়ারের দাম কিছুটা পড়ে যায়। তরুণ ব্যবহারকারীরা ক্রমেই ফেসবুক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে টিকটক অথবা স্নাপচ্যাটের মতো দ্রুত বর্ধনশীল অ্যাপগুলোকে পছন্দ করছে। কোম্পানি যে লাখ লাখ সক্রিয় ব্যবহারকারী হারাচ্ছে, সেটি ফেসবুকও স্বীকার করে। তবে সে যা–ই হোক, ১৯৬ কোটি সদস্য সংখ্যা নিয়ে ফেসবুক এখনো দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম।