আবারও প্রণোদনা চান মার্কিনরা

  • নতুন করে নগদ নাগরিক প্রণোদনার জন্য একটি আবেদনে প্রতি সপ্তাহে ৫০ হাজার নাম যুক্ত হচ্ছে।

  • গত সপ্তাহ পর্যন্ত নতুন প্রণোদনা পেতে আবেদনে ২ কোটি ৭০ লাখ লোক স্বাক্ষর করেছেন।

  • সিনেটে ডেমোক্রেটিক দলের ২১ সদস্য করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রিত না হওয়া পর্যন্ত হোয়াইট হাউসকে নাগরিক সহযোগিতা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

ছবি: রয়টার্স

করোনার সংক্রমণ আবার বৃদ্ধি পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে আরেক দফা নগদ নাগরিক প্রণোদনা পাওয়ার দাবি তীব্র হয়ে উঠেছে।

মার্কিন সিনেটে ডেমোক্রেটিক দলের ২১ সদস্য আগেই হোয়াইট হাউসকে দেওয়া এক চিঠিতে মহামারি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রিত না হওয়া পর্যন্ত ক্রমাগত নাগরিক সহযোগিতা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। মহামারিতে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের জন্য কংগ্রেসে আনা আইন প্রস্তাবে বিষয়টি সরাসরি অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। প্রতিনিধি পরিষদের উদারনৈতিক সদস্যরাও সরাসরি এমন দাবি জানিয়ে আসছেন। নতুন করে নগদ নাগরিক প্রণোদনা নিয়ে একটি আবেদনে প্রতি সপ্তাহে ৫০ হাজার নাম যুক্ত হচ্ছে। গত সপ্তাহ পর্যন্ত নতুন প্রণোদনার জন্য খোলা আবেদনপত্রে দুই কোটি ৭০ লাখ লোক স্বাক্ষর করেছেন।

আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই এক কোটির বেশি মার্কিন কর্মজীবীর বেকার ভাতার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। করোনার ডেলটা ধরনের সংক্রমণের কারণে এসব কর্মজীবীর উল্লেখযোগ্য অংশই কাজে ফিরে যাওয়া নিয়ে এখন ভীত। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য বর্ধিত খাদ্য সহযোগিতার (ফুড স্ট্যাম্প) মেয়াদও শেষ হচ্ছে দ্রুত। ফুড স্ট্যাম্প হিসেবে বর্ধিত সহযোগিতা কমে মহামারির আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। বাড়ি ভাড়া না দেওয়া লোকজনের উচ্ছেদের মেয়াদও আগামী ৩ অক্টোবরের পর আর থাকছে না।

বার্কলে ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও সাবেক লেবার সেক্রেটারি রবার্ট রেইচ বলেছেন, গত সপ্তাহে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের দারিদ্র্যের হার কমছে ৪৫ শতাংশ। এটা সুখবর। কিন্তু দুঃসংবাদ হচ্ছে, যেসব সুবিধার কারণে দারিদ্র্য কমেছে, সেসব সুবিধা শিগগির বন্ধ বা সংকুচিত করা হচ্ছে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের সঙ্গে দারিদ্র্য টিকে থাকার সম্পর্ক নিবিড় বলে মন্তব্য করেছেন উদারনৈতিক মার্কিন বুদ্ধিজীবী রবার্ট রেইচ।

সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া দিতে না পারা লোকজনকে উচ্ছেদে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও এ নিয়ে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। মাত্র চার সপ্তাহ পর ভাড়া দিতে না পারা লোকজনকে বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।

করোনার ডেলটা ধরনের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়া এবং টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। ফেডারেল নির্দেশনায় ভাড়া দিতে অক্ষম লোকজনকে উচ্ছেদ না করার নির্দেশনা কয়েক দফা বৃদ্ধির পর হোয়াইট হাউস থেকে এই দফা কোনো সরাসরি উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আইনপ্রণেতাদের এ নিয়ে বিভক্ত মনোভাব বিরাজ করছে। বাড়ি ভাড়ার জন্য দেওয়া প্রণোদনা বিতরণে স্থানীয় পর্যায়ে জটিলতা বিরাজ করছে। ফলে রাজ্য পর্যায়ে ফেডারেল বরাদ্দ পৌঁছালেও বাড়ির মালিক বা ভাড়াটিয়াদের কাছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এখনো এ সহযোগিতা পৌঁছে দেওয়া হয়নি।

‘আমেরিকান জব প্ল্যান’ নামে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পরিকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন। ২ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের আইন প্রস্তাব প্রথমে ঘোষণা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। টানা বিতর্ক ও প্রভাবশালী রিপাবলিকানদের বিরোধিতার পর এক ট্রিলিয়ন ডলারের পরিকল্পনা নিয়ে দুই দলের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। আসছে সপ্তাহেই কংগ্রেস মাসব্যাপী ছুটিতে চলে যাওয়ার কথা। এ সময়ের মধ্যে দুই হাজার ৭০২ পৃষ্ঠার এ আইন প্রস্তাবটি নিয়ে কংগ্রেসে আলোচনা ও পাস করা নিয়ে উদ্বেগ বিরাজ করছে।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘আমেরিকান জব প্ল্যান’ নামের আইন প্রস্তাবে নাগরিকদের জন্য সরাসরি কোনো নগদ প্রণোদনার উল্লেখ নেই। ব্যাপক কর্মসংস্থান হবে এবং উদারনৈতিক নানা উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য এ আইন প্রস্তাবে বরাদ্দ দেখানো হয়েছে।

করোনার ডেলটা ধরনের সংক্রমণ এবং অর্থনৈতিক বাস্তবতার কারণে আরেক দফা নাগরিক সহযোগিতার জন্য জনগণের দাবি তীব্র হয়ে উঠেছে। ডেমোক্রেটিক দলের কিছু আইনপ্রণেতা ‘আমেরিকান জব প্ল্যান’ আইন প্রস্তাবের সঙ্গে আরেক দফা প্রণোদনা যুক্ত করার চেষ্টা করলেও এ নিয়ে রিপাবলিকানদের তীব্র বিরোধিতা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও এ নিয়ে কোনো ইঙ্গিত প্রদান করেননি।

যদিও কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে দেওয়া বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছিলেন, মহামারি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সরকার জনগণের পাশে থাকবে।

আরবান ইনস্টিটিউটের গবেষণা জরিপের প্রকাশিত ফলাফলে বলা হয়েছে, নগদ প্রণোদনাই দারিদ্র্য মোকাবিলার প্রধান অস্ত্র হিসেবে কাজ করেছে।

আরবান ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো ইলেইন ওয়াক্সম্যান বলেছেন, নগদ নাগরিক প্রণোদনা প্রদান না করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত এক কোটি ২৫ লাখের বেশি মানুষকে এখন চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করতে হতো।