অনলাইন থেকে অফলাইনে অক্টেভ

এসব গল্প সাধারণত কম লেখা হয়। ঘটনা ঘটতে দেখা যায়, শোনা যায়। কিন্তু স্কুলবন্ধুদের প্ল্যাটফর্ম থেকে এত বড় গানের প্ল্যাটফর্ম গড়ে ওঠার গল্প লিখে শেষ করা যায় না। মূল ঘটনা, ভার্চ্যুয়াল জগৎ থেকে সত্যিকারের পৃথিবীতে আত্মপ্রকাশ করেছে ফেসবুকভিত্তিক গায়কদের প্ল্যাটফর্ম ‘অক্টেভ’। কিন্তু এ ঘটনার পেছনে রয়েছে আরও অনেক ঘটনা।

অক্টেভের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সেতারশিল্পী রীনাত ফৌজিয়া, রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী তপন মাহমুদ, বাচিকশিল্পী আশরাফুল আলম ও অক্টেভ অ্যাডমিন খালেদ আখতার। ছবি: শেখ মাকসুদ আলীর সৌজন্যে
অক্টেভের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সেতারশিল্পী রীনাত ফৌজিয়া, রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী তপন মাহমুদ, বাচিকশিল্পী আশরাফুল আলম ও অক্টেভ অ্যাডমিন খালেদ আখতার। ছবি: শেখ মাকসুদ আলীর সৌজন্যে

গত সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা ভবন মিলনায়তনে ছিল অক্টেভের আত্মপ্রকাশের আনুষ্ঠানিকতা। গত বছর ডিসেম্বরে ফেসবুকে যাত্রা শুরু করে অক্টেভ। এ নিয়ে তাঁরা ছিলেন ভীষণ রোমাঞ্চিত। সে এক অন্য রকম উৎসব। এসেছিল ফুল, সুদৃশ্য কেক। নিজেদের মানুষদের বাইরে মিলনায়তনে কাউকে জায়গা দেওয়ার মতো অবস্থা ছিল না তাঁদের। আমন্ত্রণপত্র যাতে হাতবদল না হয়, সে জন্য কিউআর কোডের মাধ্যমে প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী তপন মাহমুদ, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাচিকশিল্পী আশরাফুল আলম ও সেতারশিল্পী রীনাত ফৌজিয়া।

সংগীত পরিবেশন করেন তালহা বিন আলীর দল
সংগীত পরিবেশন করেন তালহা বিন আলীর দল

শখ করে যাঁরা গান করেন, তাঁরাই এ দলের সদস্য। গান গেয়ে ফেসবুকে গ্রুপের পাতায় আপলোড করা, অন্যদের গান শোনা, মতামত দেওয়া, সংগীত ও বাদ্যযন্ত্র বিষয়ে পরামর্শ চাওয়া, এর সবই এত দিন চলত অনলাইনে। প্রথমবারের মতো তাঁরা উঠে এলেন মঞ্চে। নিজেদের তৈরি ভার্চ্যুয়াল মঞ্চ নিয়ে জনমানুষের মঞ্চে। হেডফোন বা টেবিল স্পিকারের বদলে প্রথমবারের মতো তাঁরা গাইলেন বৃহৎ স্পিকারে।

১৯৯৬ সালে মাধ্যমিক এবং ১৯৯৮ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করা শিক্ষার্থীরা শুরুতে এ দলটি গড়েন। পরে এতে যুক্ত হন নানা বয়সী ও শ্রেণির গানপাগল নারী-পুরুষ। তাঁদের একজন ব্যাংকার তন্ময় শাহরিয়ার। পেশা হিসেবে গানকে নিতে পারেননি, পেশার চাপে নিয়মিত গান করাও হচ্ছিল না। এই দলে যুক্ত হয়ে অনুপ্রাণিত হয়েছেন।

দলটির অ্যাডমিন খালেদ আখতার যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যাংকার। নিজের দেশে এসে অল্প সময়ের মধ্যে বন্ধুদের নিয়ে এ আয়োজন করেছেন তিনি। তিনি বললেন, ‘গত বছর আগস্ট মাসে আমরা এ গ্রুপ করি। সুযোগ কম এ রকম শিল্পীদের প্রমোট করতে চাই আমরা। অন্তত একটি গান রেকর্ড করে বাজারে আনতে যা করতে হয়, সেই সহযোগিতা আমরা করব। আশা করি আগামী বছর দেশে একটি স্টুডিও করব আমরা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এ রকম শিল্পী যাঁরা আছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও আমাদের এ গ্রুপের দরজা খোলা।’ অন্যতম অ্যাডমিন টিনা মনসুর জানান, এখন এই গ্রুপের সদস্য প্রায় ১৯ হাজার। সংগীতচর্চার জন্য এত বড় একটা মঞ্চ তৈরি করতে পেরে তাঁরা ভীষণ আনন্দিত।

অনুষ্ঠানে গান করেন তন্ময় শাহরিয়ার
অনুষ্ঠানে গান করেন তন্ময় শাহরিয়ার

অক্টেভের শিল্পীদের অনেকে পেশাদার শিল্পীর মতো পারদর্শী। অনেকে নিজের মতো চর্চা করেন, কিন্তু গানকে পেশা হিসেবে নেননি। কেউ বা শখে গান করেন। স্মুল, কারাওকি অ্যাপস ব্যবহার করে গান রেকর্ডিং করে আপলোড করেন অক্টেভে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাঁরা গান করেন, বিশেষ করে বাংলা গান ভালোবাসেন, তাঁরাই এ গ্রুপের সদস্য। একে অন্যের কাছ থেকে শিখে, অভিজ্ঞতা বিনিময় করে নিজেদের সমৃদ্ধ করেছেন তাঁরা।

সোমবারের অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, শাস্ত্রীয় সংগীতের পাশাপাশি ছিল গজল ও আধুনিক বাংলা গান। গেয়ে শোনায় তালহা বিন আলী ও তাঁর দল, রিজোয়ান মাহমুদ, তন্ময় শাহরিয়ার, শাহেদ মাহমুদ, জেরিন ফারহানা, নাহিদ কামাল, নিতু হক, ইতু সিংহ, জেরিন ফারহানা, ফারিয়া আহাদ, শাকিল মাহবুব প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সম্মাননা জানানো হয় ‘ফলোয়ার অব দ্য মান্থ’ মার্জিয়ানা বেগমকে।