বিদ্যুৎ-রেলের তিন প্রকল্প উদ্বোধন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার বিকেলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একযোগে তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। গণভবন, ঢাকা, ১০ সেপ্টেম্বর। ছবি: ফোকাস বাংলা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার বিকেলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একযোগে তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। গণভবন, ঢাকা, ১০ সেপ্টেম্বর। ছবি: ফোকাস বাংলা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা পূরণের জন্য ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা করেছে। আশা করা হচ্ছে, এ প্রক্রিয়ায় ভারত পাশে থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী সোমবার বিকেলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একযোগে বিদ্যুৎ ও রেল যোগাযোগের তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় এ কথা বলেন।

প্রকল্পগুলো হলো: কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় নবনির্মিত ৫০০ মেগাওয়াট এইচভিডিসি (২য় ব্লক) প্রকল্পের নির্মাণকাজ এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের ‘কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন’ ও ‘আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেলসংযোগ নির্মাণ (বাংলাদেশ অংশ)’।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে এবং নরেন্দ্র মোদি নয়াদিল্লিতে তাঁর কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা থেকে এবং ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আগরতলা থেকে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

ই-সুইচ টিপে দুই প্রধানমন্ত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী একযোগে প্রকল্প তিনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

বাংলাদেশের উন্নয়ন অন্বেষায় সহযোগিতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব চিরস্থায়ী হোক, আমরা সেটাই চাই। এর ফলে দুই দেশ আরও একসঙ্গে কাজ করে দুই দেশের জনগণের উন্নতি সাধন করতে পারবে।’ তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে আমাদের যৌথ প্রচেষ্টায় অনেক সাফল্যগাথা আগামীতে আমাদের সামনে উপস্থাপিত হবে, যা আমরা উদযাপন করতে পারব।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাশাপাশি আমরা আমাদের অন্য সমস্যাগুলোরও সমাধান করতে সক্ষম হয়েছি। কাজেই আমি আশা করি, আমাদের এই বন্ধুত্ব অটুট থাকবে। ভবিষ্যতে আরও সহযোগিতার নতুন নতুন ক্ষেত্র নিয়ে আমরা দুই দেশের জনগণের সামনে উপস্থিত হতে পারব।’

প্রধানমন্ত্রী সোমবার বিকেলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একযোগে তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। সেই কনফারেন্সে যোগ দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার। ছবি: ফোকাস বাংলা
প্রধানমন্ত্রী সোমবার বিকেলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একযোগে তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। সেই কনফারেন্সে যোগ দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার। ছবি: ফোকাস বাংলা

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাত আমাদের দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বর্তমানে ভারত থেকে আমরা ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছি। ভারত থেকে আরও ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা গত সাড়ে ৯ বছরে ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট থেকে ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে মমতা আমন্ত্রণ গ্রহণ করে বলেন, ‘পরবর্তী নির্বাচনে আপনি জিতুন, তখন আমি বাংলাদেশে যাব।’

‘রেলওয়ে খাতেও আমাদের দুই দেশের সহযোগিতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মালামাল পরিবহনের জন্য আমরা ১৯৬৫-পূর্ব রেল সংযোগ পুনরায় চালু করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, আমরা শীঘ্রই লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় ভারতীয় অর্থায়নে যৌথভাবে ঢাকা ও টঙ্গীর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েল গেজ রেললাইন এবং টঙ্গী ও জয়দেবপুরের মধ্যে ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণের ভিত্তিফলক স্থাপন করতে পারব।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের দুই দেশের মধ্যে প্রভূত অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ব্লু-ইকনোমি, সামুদ্রিক সহযোগিতা, পারমাণবিক শক্তি, সাইবার নিরাপত্তা, মহাকাশ গবেষণার মতো নতুন নতুন ক্ষেত্রগুলোতেও কাজ আমরা শুরু করেছি।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর ভাষণে ১৯৬৫ সালের আগে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে বিদ্যমান রেল যোগাযোগ পুনঃস্থাপনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘আখাউড়া-আগরতলা রেল কানেকটিভিটির কাজ পুরো হলে আমাদের আন্তর্দেশীয় সংযোগের ক্ষেত্রে আরেকটি যোগসূত্র স্থাপিত হবে।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য যে মহৎ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন—২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলা, তাঁর লক্ষ্য সফল করার ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা করতে পারাটা একটি গর্বের বিষয়।’

মোদি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যেভাবে আমরা আমাদের সম্পর্ককে দৃঢ় করব এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে হৃদ্যতা শক্তিশালী করব, সেভাবেই আমরা উন্নতি এবং সমৃদ্ধির নবদিগন্ত উন্মোচিত করতে সক্ষম হব।’ এরপর তিনি বাংলায় উচ্চারণ করে বলেন, ‘আজ থেকে আমরা আরও কাছে এলাম, আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর হলো।’
প্রধানমন্ত্রী পরে আখাউড়া, ভেড়ামারা ও কুলাউড়ার স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের মধ্যে ৩০০ মেগাওয়াট সরবরাহ করবে ভারতের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত ন্যাশনাল থার্মান পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং ২০০ মেগাওয়াট সরবরাহ করবে প্রাইভেট পাওয়ার ট্রেডিং করপোরেশন অব ইন্ডিয়া। এই ৫০০ মেগাওয়াট যোগ হওয়ায় ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের পরিমাণ দাঁড়াবে ১১৬০ মেগাওয়াট।

বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্নির্মাণে ব্যয় হবে ৬৭৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ভারতের এলওসির আওতায় এই নির্মাণ ব্যয়ের ৫৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা দেওয়া হবে। ব্রিজ, প্যাসেঞ্জার প্ল্যাটফর্ম, শেড, কাস্টমস, ইমিগ্রেশন ভবন এবং অন্যান্য স্থাপনা এই প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হবে।