'বিশ্বকাপে খেলার শান্তিটাই অন্য রকম'

>তাসকিন আহমেদের নিউজিল্যান্ড সফর শেষ হয়ে গিয়েছিল বিপিএলে চোট পেয়ে। তাসকিন তখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। বিশ্বকাপ স্বপ্নটাও যে ধাক্কা খেয়েছিল। লম্বা পুনর্বাসনপ্রক্রিয়া শেষে আজ রানিং শুরু করার পর হাসি ফিরে এসেছে তাসকিনের মুখে

খর রোদে তাসিকন আহমেদ বিসিবি একাডেমি মাঠে দৌড়াচ্ছেন। দূর থেকে গভীর মনোযোগে সেটি দেখছেন তাঁর বাবা আবদুর রশিদ। একবার বাবাকে জানিয়ে গেলেন, ‘সব ঠিক আছে।’ প্রায় দেড় মাসের পুনর্বাসন শেষে আজ হালকা দৌড় শুরু করেছেন তাসকিন। বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্নটা যে এখনো উজ্জ্বল, তাঁর রানিংয়ে বোঝা গেল।

বারবার চোটে পড়ায় ২০১৮ সালটা তাসকিনের খুব একটা ভালো যায়নি। জাতীয় দলের বাইরে ছিলেন প্রায় ৯ মাস। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে (বিপিএল) বেছে নিয়েছিলেন ফেরার মঞ্চ হিসেবে। টুর্নামেন্টজুড়ে করেছিলেন দুর্দান্ত বোলিং। ২২ উইকেট নিয়ে ছিলেন সেরা দুইয়ে। তাঁর দল সিলেট সিক্সার্স শেষ চার খেলতে পারলে আর তিনি ফিট থাকলে হয়তো শীর্ষ উইকেটশিকারিই হতেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে এবং টেস্ট—দুই সিরিজেই তাসকিনকে দলে রাখতে দুবার ভাবেননি নির্বাচকেরা। সব এলোমেলো হয়ে গেল নিউজিল্যান্ড সফরের পাঁচ দিন আগে পাওয়া চোটে।

অ্যাঙ্কলে চোট পেয়ে ভীষণ ভেঙেই পড়েছিলেন তাসকিন। ক্রাচে ভর দিয়ে মাঠে এসে কেঁদেও ছিলেন। তাসকিনের ভেঙে পড়ার কারণ আছে। দুর্দান্ত ছন্দে থেকেও নিউজিল্যান্ড সফরে যেতে পারেননি। সেটির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, বিশ্বকাপ স্বপ্নটা যে ধূসর হওয়ার উপক্রম। আজ রানিংয়ের পর তাঁর আত্মবিশ্বাসী মুখটা বলে দিচ্ছিল, এ ধাক্কা সামলে উঠেছেন। রানিং শেষে তাসকিন বলেন, ‘কোনো সমস্যা ছাড়াই আধঘণ্টা দৌড়ালাম। শঙ্কা ছিল, একটু ব্যথা লাগতে পারে। লাগেনি। প্রায় দেড় মাস পর রানিং করেছি বলে একটু কষ্ট হয়েছে। মনটা এখন ভালো লাগছে, সমস্যা ছাড়া রানিং সেশন শেষ হয়েছে। এখন ব্যাটিং করব। ভালো অগ্রগতি হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এ মাসেই বোলিং শুরু করব ইনশা আল্লাহ।’

তাসকিনের আশা, ম্যাচ ফিটনেস ফিরে পেতে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের কিছু ম্যাচও খেলবেন। তবে কবে শুরু করতে পারবেন, সেটি এখনই বলার উপায় নেই। প্রিমিয়ার লিগ ছাপিয়ে তাঁর ভাবনাজুড়ে আসলে বিশ্বকাপ। ২০১৫ বিশ্বকাপে উইকেট শিকারে (৯টি) বাংলাদেশের সেরা বোলার ছিলেন তাসকিনই। আরেকটি বিশ্বকাপ যখন সামনে, সেটি রাঙানোর স্বপ্ন তিনি দেখবেন, সেটিই স্বাভাবিক। স্বপ্নাতুর চোখে তাসকিন বলছেন, ‘বিশ্বকাপ খেলা আমার স্বপ্ন। জানি না কাল সকালে ঘুম থেকে উঠে কী হবে। এত বেশি চিন্তা করছি না। এখন একটাই ভাবনা, শতভাগ ফিট হয়ে বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়া। ২০১৫ বিশ্বকাপ খেলেছি। বিশ্বকাপে খেলার শান্তিটাই অন্য রকম। বিশ্বকাপের স্মৃতিগুলো মনে পড়লে খুবই ভালো লাগে। দোয়া চাই, যেন শতভাগ ফিট থেকে ২০১৯ বিশ্বকাপে খেলতে ও ভালো করতে পারি। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ভালো করলে সেটার অনুভূতি অন্য রকম হবে।’

তাসকিন মনে করেন তাঁর প্রতি নির্বাচক, টিম ম্যানেজমেন্টের সুদৃষ্টি আছে। চোট থেকে কতটুকু সেরে উঠছেন, কতটুকু অগ্রগতি হচ্ছে—নিয়মিত খবর নিচ্ছেন কোচ, অধিনায়ক ও দলের সিনিয়র ক্রিকেটাররা। এটা ভীষণ অনুপ্রাণিত করছে তাঁকে। এখন শুধু কঠোর পরিশ্রম করে দলে ফিরতে হবে।