শব্দ ধরুন মুঠোফোনে

>তরুণেরা এখন মুঠোফোনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন। নিজেদের হাসি–কান্নার অভিজ্ঞতা তুলে ধরছেন ছোট ছোট ভিডিও চিত্রে। এতে ভিডিও যেমন জরুরি, অডিও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। তাই মুঠোফোনে ত্রুটিমুক্ত শব্দ ধারণের উপায় জেনে রাখুন।

মুঠোফোনে খুব যত্ন নিয়ে ভিডিও ধারণ করা হয়েছে। বক্তা বলেছেনও খুব ভালো। ভিডিওর ক্লিপ ডাউনলোড করা হলো কম্পিউটারে। কানে হেডফোন লাগিয়ে ভিডিওটি চালু করতেই আক্কেলগুড়ুম। ভিডিও হয়েছে ঠিকই, তবে তা বোবা। মানে শব্দ ধারণ হয়নি! কারণ? এক্সটারনাল মাইক্রোফোন ছিল বন্ধ। মুঠোফোনে যাঁরা ভিডিও করেন, তাঁদের অধিকাংশেরই ‘কমন’ এই অভিজ্ঞতা আছে। এমন পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগীও ভিডিওর মতো বোবা হয়ে যান। কেউ কেউ মাথার চুল ছেঁড়েন। এ তো গেল অসাবধানতার কারণ। ভিডিওতে শব্দ ধারণের ত্রুটি থাকতে পারে আরও নানান ভুলে। সেসব এড়ানোর উপায় খুঁজেছি আমরা। জানতে চেষ্টা করেছি, কী করে ত্রুটিমুক্ত শব্দ ধারণ করা যায়।

এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের (ইউল্যাব) ক্যাম্পাসে পঞ্চমবারের মতো বসেছিল মুঠোফোনভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রতিযোগিতা ‘ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’। এর উপদেষ্টা ছিলেন ইউল্যাবের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন। নিজে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ক্লাসে তাঁর পড়ানোর বিষয়গুলোর মধ্যে চলচ্চিত্রের শব্দ ধারণের বিষয়টিও থাকে। তাই তাঁর কাছে আমাদের প্রশ্ন ছিল, ‘মুঠোফোনে ভিডিও ধারণের পাশাপাশি শব্দধারণের গুরুত্ব কতটুকু?’

মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন শুরুতেই বলে রাখলেন, ‘ভিডিও চিত্র নির্মাণের বেলায় শব্দ ধারণের বিষয়টি ততটা গুরুত্ব পায় না। অথচ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দর্শকের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য শব্দ খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভিডিও যতটা অপরিহার্য, অডিও ঠিক ততটাই। আজকালকার অধিকাংশ মুঠোফোনের ক্যামেরা বেশ ভালো মানের, কিন্তু শব্দ ধারণের অংশটুকুতে ততটা উন্নতি নজরে পড়ছে না। তারপরও এই সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়ে কিছু বিষয় মাথায় রাখলে ভালো শব্দ ধারণ সম্ভব।’

ভিডিও করার সময় ত্রুটিমুক্ত শব্দ ধারণ করুন। মডেল: শিফা, ছবি: খালেদ সরকার
ভিডিও করার সময় ত্রুটিমুক্ত শব্দ ধারণ করুন। মডেল: শিফা, ছবি: খালেদ সরকার

আমরা ভালো শব্দধারণের জন্য কিছু পরামর্শ চেয়েছিলাম প্রথম আলোর মোবাইল সাংবাদিকতা বিশেষজ্ঞ জামিল খানের কাছে। পরামর্শের শুরুতে বললেন—

১. মুঠোফোনের মাইক্রোফোনের ওপর ভরসা না করে সব সময় একটি বাড়তি মাইক্রোফোন সঙ্গে রাখুন।

২. ল্যাপেল মাইক্রোফোন ব্যবহার করতে পারেন।

৩. ফ্যানটম মাইক্রোফোনের জন্য আলাদা ব্যাটারি সঙ্গে রাখুন।

৪. ঘরের বাইরে শব্দ ধারণের বেলায় আশপাশের আওয়াজ যেন বিঘ্ন না ঘটায়, তা খেয়াল রাখুন। বিশেষ করে উচ্চমাত্রা শব্দের বেলায় সচেতন থাকতে হবে। যেমন: কাকের ডাক, জেনারেটরের আওয়াজ, টাইলস কাটার শব্দ ইত্যাদি। অনেক সময় পরিবেশ বোঝানোর জন্য এসব শব্দ দরকার, কিন্তু মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে মূল শব্দ বিঘ্নিত হয়। তাই প্রয়োজনের বাইরে উচ্চমাত্রার শব্দ এড়ানোই ভালো।

৫. মাইক্রোফোন যেন ব্যক্তি বা শব্দের উৎসের কাছে থাকে। ভিডিওতে মাইক্রোফোন দেখতে ভালো লাগে না। এ ক্ষেত্রে মাইক্রোফোন রাখতে হবে পোশাকের আড়ালে বা ফ্রেমের বাইরে।

৬. ভিডিও ধারণের সময় অবশ্যই ফোনের এয়ারপ্লেন মোড চালু করতে হবে। নাহলে ভিডিওর মাঝে ইনকামিং কল সবকিছু ভেস্তে দিতে পারে।

৭. ঘটনাস্থল ছাড়ার আগে শব্দ ঠিকভাবে ধারণ হয়েছে কি না পরীক্ষা করুন।

৮. ঘটনাস্থল থেকেই ঠিকঠাকভাবে শব্দ ধারণ করতে হবে। ভাববেন না, পরে আপনি শব্দটা ঠিকঠাক করে ফেলতে পারবেন।

আর লাইভে এলে যে শব্দের সমস্যা হয়, সেটির বেলায় কী করণীয়? জামিল খানের পরামর্শ, ‘অনেক সময় ইন্টারনেট সংযোগ ভালো না হলে শব্দে ত্রুটি থাকতে পারে। আরেকটি বিষয় হলো মাইক্রোফোন, লাইভে এটি ব্যবহার করলে ভালো শব্দ পাওয়া যায়।’

লাইভের বাইরে ভিডিও ধারণের সময় মাইক্রোফোনের প্রয়োজনীয়তার কথা তো আগেই বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বয়া (Boya) ব্র্যান্ডের মাইক্রোফোনের বেশ সুনাম। যেকোনো ক্যামেরা বা মুঠোফোনের দোকানেই আজকাল পাওয়া যায়। দাম পড়ে এক হাজার থেকে বারো শ টাকার মধ্যে। আরও ভালো মানের এবং দামে বেশি মাইক্রোফোনের মধ্যে আছে রোড (Rode) ব্র্যান্ডের স্মার্টল্যাভ (SmartLav) মাইক্রোফোন। আইওএস–অ্যান্ড্রয়েড—দুই ধরনের ফোনেই মানানসই। দাম সাড়ে ৬ হাজার টাকা থেকে শুরু। এ ছাড়া বাব (BUB) ব্র্যান্ডের শটগান মাইক্রোফোনও বেশ কেজো।

মাইক্রোফোন সঙ্গে না থাকলে ইয়ারফোন দিয়েও শব্দ নেওয়া যেতে পারে নিশ্চিন্তে। ইয়ারফোনের কন্ট্রোলার অংশে শব্দ ধারণের একটি চিপ বসানো থাকে। ফলে এতেও কাজ হয়ে যায়। আরেকটি উপায় হলো দ্বিতীয় মুঠোফোন। ভিডিও ধারণের সময় দ্বিতীয় ফোন দিয়ে শব্দ ধারণ করে সম্পাদনার সময় ভিডিওর সঙ্গে জুড়ে দিলেই ভালো ফল মেলে।

মুঠোফোনে শব্দধারণের জন্য কিছু অ্যাপ বেশ কাজে আসে। এর মধ্যে আইফোনের জন্য ভালো ভয়েস রেকর্ডার প্রো। অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ব্যবহার করা যেতে পারে ওয়েবপ্যাড। এই অ্যাপটি আইফোনেও জুতসই। এ ছাড়া অ্যাংকর অ্যাপটি দিয়ে একই সঙ্গে শব্দ ধারণ, সম্পাদনা, পডকাস্টে আপলোড ও শেয়ারের সুবিধাও আছে।