প্রচ্ছদ আঁকিয়ে তাঁরা দুজন

সারার অাঁকা বইয়ের প্রচ্ছদ ও  শিখার অাঁকা বইয়ের প্রচ্ছদ
সারার অাঁকা বইয়ের প্রচ্ছদ ও শিখার অাঁকা বইয়ের প্রচ্ছদ

সারা তৌফিকা

সারা তৌফিকা
সারা তৌফিকা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা সারা তৌফিকা ২০১২ সাল থেকে রয়েছেন এ পেশায়। ভালো লাগা থেকেই শুরু বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকা। এখন একে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি। এ পর্যন্ত তাঁর আঁকা প্রচ্ছদে প্রায় ৫০টি বই প্রকাশিত হয়েছে। জানতে চাইলাম, প্রচ্ছদের কাজটি কি বইমেলানির্ভর হয়ে পড়েছে? বললেন, ‘সে কিছুটা তো বটেই। বাংলাদেশে বই পড়া এখনো সংস্কৃতি হিসেবে গড়ে ওঠেনি, এটা এখনো মৌসুমি বিলাসিতার পর্যায়ে রয়ে গেছে। তাই বইমেলার এক মাসে বের হয় বছরের ৯০ ভাগ বই আর সারা বছরে বাকি ১০ ভাগ। সে কারণেই প্রচ্ছদের কাজটাও এ সময়ে বেড়ে যায়।’
তবে সারা তৌফিকা বছরজুড়ে ছোটদের বইয়ের অলংকরণ করেন। আর পত্রপত্রিকার জন্য কার্টুন আঁকা তো আছেই। প্রথম দিকে সাদা কাগজে নানান বাহারি রঙে তুলি ভিজিয়ে এঁকে যেতেন বইয়ের গল্পগুলো। ইদানীং ডিজিটাল মাধ্যমেই তিনি বেশি স্বচ্ছন্দ। মূলত পাণ্ডুলিপি পড়ার পর তিনি ঠিক করেন কাজের মাধ্যম। যেমন বইটি সম্পর্কে জেনে নিয়েই ঠিক করেন বইটির প্রচ্ছদ জলরঙে আঁকবেন, নাকি টাইপোগ্রাফি বা আলোকচিত্র ব্যবহার করবেন। এভাবে প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে বিষয় বুঝে মাধ্যম বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। পেশা নিয়ে ভবিষ্যৎ ভাবনার কথা জানতে চাইলে সারা বলেন, ‘ভবিষ্যৎ আলাদা করে ভাবি না। বর্তমানে যখন যা করি তা অন্তর দিয়ে করতে পারলে সেটাই আমাকে আরও ভালো কাজের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এখন তো ইউটিউব দেখার সুযোগ আছে। সেখানে টিউটোরিয়াল পাচ্ছি। ধীরে ধীরে কাজের ক্ষেত্রও বাড়ছে। এখন ছাপা ও প্রকাশনাশিল্প প্রযুক্তির দিক দিয়ে অনেকখানি এগিয়ে গেছে।’ শিল্পীদের জন্য একে একটা সুবিধা বলেই মনে করেন। তবে ইন্টারনেটে অজস্র শিল্পকর্ম দেখতে পাওয়ার সুবিধা যেন কোনোভাবেই শিল্পীদের সৃজনশীল ভাবনা ও মৌলিকত্ব নষ্ট না করে, তরুণদের কাছে সেটাই সারা তৌফিকার প্রত্যাশা।

শিখা
শিখা

শিখা
বইয়ের প্রচ্ছদ নেশা ও পেশা হলেও শাহানারা নার্গিস শিখা একাধারে কার্টুনিস্ট, গ্রাফিক ডিজাইনার ও ডিজিটাল চিত্রশিল্পী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। ছবি আঁকার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি না থাকলেও বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এই পেশায় রয়েছেন। ২০০৩ সাল থেকে পত্রপত্রিকায় কার্টুনিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ারের শুরু।
২০০৭ সালের দিকে শুরু করেন বইয়ের অলংকরণ। প্রায় ২০টির বেশি বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন তিনি। জানালেন, নিজের আঁকা ছবি আছে এমন বই হাতে পাওয়ার অনুভূতি অসাধারণ।
শিখা মনে করেন শিল্পী হওয়ার সৃজনশীল চেতনা থাকা প্রয়োজন। তবে অবয়ব, অনুপাত, পরিপ্রেক্ষিত, রং ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান সৃজনশীল কাজে বিশুদ্ধ মাত্রা যোগ করে। এখন তো ইউটিউবের টিউটোরিয়ালগুলোই শ্রেষ্ঠ শিক্ষক শিখার কাছে। তিনি বলেন, ‘বাস্তবধর্মী ছবি আঁকায় দক্ষ হওয়া আমার স্বপ্ন। যেন কোনটি আঁকা আর কোনটি আলোকচিত্র তা দর্শক বুঝতে না পারেন।’ পেশাগত ক্ষেত্রটি নিয়ে আশাবাদী এই শিল্পী নবীন ডিজাইনারদের উদ্দেশে বলেন, ‘তরুণদের জন্য এটা বেশ ভালো কর্মক্ষেত্র, ভবিষ্যতে আরও ভালো হবে।’

শিখা মনে করেন প্রচ্ছদের গুণগত মান আরও ভালো হওয়া প্রয়োজন। আর এ জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিল্পনির্দেশক থাকাটা জরুরি। এতে আরও ভালো প্রচ্ছদ ও অলংকরণ পাওয়া যায়।