তুলা চাষে জীবন মসৃণ

তুলা চাষ করে সফল কদভানু বেগম। ছবি: প্রথম আলো
তুলা চাষ করে সফল কদভানু বেগম। ছবি: প্রথম আলো

গল্পটার শুরু হয়েছিল অনেক আগে। সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার মেয়ে কদভানু বেগম। মা-বাবার একমাত্র মেয়ে। মাত্র ১২ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়। স্বামী আবুল হোসেন শেখ ছিলেন দরজি। সবই ভালোভাবে চলছিল। তাঁদের পরিবারে জন্ম নেয় এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে ফারুক হোসেন শেখের বয়স তিন আর মেয়ে ফেরদৌসী খাতুনের বয়স যখন আট মাস, তখন শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন তাঁর স্বামী। এক যুদ্ধ থেকে শুরু হয় কদভানু বেগমের আরেক যুদ্ধ। ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে শুরু হয় তাঁর নতুন পথচলা। আবার জীবনে এল বিপদ।

একমাত্র মেয়ে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় সাপের কাপড়ে মারা যায়। মেয়ের শোক ভুলতে তিনি নতুন করে আবার কাজে বেশি মনোযোগ দেন। এভাবে নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তুলা চাষ করে আজ তিনি সফল। সেই কাহিনি জানা গেল কদভানু বেগমের কাছে।

তিনি বলেন, ‘বিয়ের পর আর লেখাপড়া হয়নি। স্বামীর কাছ থেকে সেলাইয়ের কাজ শিখেছিলাম। সেলাই করে তিন বিঘা জমি কিনি। এর মধ্যে ছেলে বিএ পাস করে। আর মেয়ে মারা যাওয়ার পর সব ভুলতে বেশি বেশি করে কাজ করতাম। পুরো শ্রমটা দিয়েছি তুলা চাষের পেছনে।’

কদভানুর এলাকায় তুলা চাষের প্রচলন ছিল অনেক আগে থেকে। তুলা চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের ভদ্রঘাট কার্যালয়ের মাঠকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। এক সপ্তাহ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি। নিজের জমিসহ বাবার কাছ থেকে নেওয়া জমিসহ পাঁচ বিঘা জমিতে তুলা চাষ শুরু করেন।

তুলা উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে দেওয়া বীজ, সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে ফলন ভালো হয়। ওই বছর তুলা বিক্রি করে খরচ বাদে প্রায় ৬০ হাজার টাকা উপার্জন করেন কদভানু। ধীরে ধীরে দেখতে থাকেন সাফল্যের মুখ।
তাঁকে দেখে এলাকার পাঙ্গাসী, নলকা, ভদ্রঘাট ও শিয়ালকোল ইউনিয়নের দুই শতাধিক কৃষক তুলা চাষ শুরু করেছেন। কদভানু বেগম বলেন, ‘গত বছরও তুলা চাষ করে ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। এ বছর ফলন ভালো হয়েছে, তাই বেশি লাভ হবে বলে আশা করছি।’

ব্যক্তিগত জীবনের কথায় তিনি জানান, ছেলে ফারুক হোসেন শেখ বিয়ে করেছেন। সবাইকে নিয়ে ভালোভাবেই দিন কাটছে। যত দিন বেঁচে থাকবেন, কাজের মধ্যেই থাকতে চান তিনি।