বাজারের নাম বউবাজার
বাজারের ক্রেতা ও বিক্রেতাদের অধিকাংশই নারী। তাঁরা এলাকার গৃহিণী। এ জন্য এর নাম বউবাজার। গোপালগঞ্জের বানিয়ারচরে এই বাজার।
প্রায় ৩০ বছর আগে এই বউবাজারের যাত্রা শুরু হয়। এ বিষয়ে বাজারের কেব্ল ব্যবসায়ী শান্তনু বৈরাগি প্রথম আলোকে বলেন, আগে লোকজন বানিয়ারচর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে জলিলপাড় বাজারে যেতেন। ১৯৮৮ সালের ঘটনা। একদিন জলিলপাড়ের বাসিন্দাদের সঙ্গে বানিয়ারচরের লোকজনের বচসা হয়। একপর্যায়ে জলিলপাড়ের লোকজন হুমকি দেন, বানিয়ারচরের কেউ জলিলপাড় বাজারে ব্যবসা বা কেনাকাটা করতে এলে তাঁকে বেঁধে রাখা হবে। এরপর বানিয়ারচরের বাসিন্দারা জলিলপাড় বাজারে যাওয়া বন্ধ করে দেন। এর কিছুদিন পর থেকেই বানিয়ারচরে বসে এই বাজার।
এর নাম কেন বউবাজার? এই বাজারের পানের দোকানি দয়মন্তী বৈরাগী বলেন, ‘ঘরের পুরুষেরা সকালে কাজে চলে যান। কেউ যান খেতখামারে, কেউ অফিসে। সকালের রান্নাবান্নার পর গৃহিণীদের তেমন কাজ থাকে না। তাই তাঁরা এই বাজারে সবজিসহ নানা পণ্য বিক্রি করতে আসেন। কিনতেও আসেন অন্য গৃহিণীরা।’
এই বাজারে স্থায়ী দোকান রয়েছে অন্তত ১৫০টি। বেশির ভাগ দোকানের বিক্রেতাই নারী। তবে নিজেদের কাজ শেষ করে তাঁদের স্বামীরাও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। দুধ ও শাকসবজি নিয়ে প্রতিদিন সকালে-বিকেলে তিন শতাধিক বিক্রেতা এই বাজারে আসেন। তবে এখানে মাছ বা মাংস বিক্রির কাজ নারীরা করেন না। এটি পুরুষদের জন্যই বরাদ্দ।
বউবাজারের চা-বিক্রেতা শিলা মণ্ডল বলেন, ‘১৫ বছর ধরে বাজারে চা বিক্রি করছি। প্রায় সবাই নারী। সবই তো চেনা মুখ। এ কারণে আমাদের কখনো কোনো সমস্যা হয় না। আমরা ভালোই আছি।’
বাজারের আরেক বিক্রেতা ডলি রায় প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে এখানে রুটি বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘রুটির সঙ্গে ডিম ভেজে দিই। অনেকেই তৃপ্তিসহকারে খান। দেখেও ভালো লাগে।’
এই বাজারে ব্যবসায়ীদের একটি সমিতিও রয়েছে। নাম ‘বউবাজার বণিক সমিতি’। তবে সমিতির কর্মকর্তারা বেশির ভাগই পুরুষ। বণিক সমিতির সভাপতি দীপংকর মহন্ত বলেন, ‘আমরা সবাই সবাইকে চিনি ও জানি। তাই বেচাকেনায় কোনো সমস্যা হয় না। পুরুষেরা সকালে মাঠের কাজে চলে যান। এক বেলা মজুর খেটে একজন পুরুষ আয় করেন ২০০ টাকা। তাঁর বাড়ির উৎপাদিত সবজি ও গরুর দুধ নিয়ে তাঁর স্ত্রী এই বাজারে আসেন। এতে প্রতিটি পরিবারই আর্থিকভাবে সচ্ছল ও লাভবান হচ্ছে। বাজারটি ক্রমেই জমজমাট হয়ে উঠছে।’
জলিলপাড় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অখিল বৈরাগী বলেন, ‘বাজারে টিউবওয়েল, শৌচাগারসহ যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলো সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ তাঁর প্রত্যাশা, এলাকায় নারীদের এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। সব কটি পরিবার আরও সচ্ছল হবে। সুখে-শান্তিতে তাঁদের দিন কাটবে।
বাজারের নাম বউবাজার। তবে বউদের পাশাপাশি বরদেরও অংশগ্রহণ আছে। বর–বউ মিলেই জমজমাট বউবাজার।