বন্ধু তোর জন্য...

>
বন্ধুদের সঙ্গে আবদুল করিম রাজীব (বাঁ থেকে প্রথম)। ছবি: রাজীবের বন্ধু রাহাতের ইউটিউব ভিডিও থেকে সংগৃহীত
বন্ধুদের সঙ্গে আবদুল করিম রাজীব (বাঁ থেকে প্রথম)। ছবি: রাজীবের বন্ধু রাহাতের ইউটিউব ভিডিও থেকে সংগৃহীত
গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাসের চাপায় নিহত হয় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী আবদুল করিম রাজীব ও দিয়া খানম মীম। রাজীবের স্মরণে লিখেছে তার স্কুলের বন্ধু মো. মাহফুজুর রহমান

আমি তখন ঢাকার আশকোনা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে ক্লাস সেভেনে পড়ি। বৃহস্পতিবার আমাদের স্কুলে অর্ধ দিবস ক্লাস হতো। বাকি সময়টাতে টিচাররা নানা রকম সৃজনশীল কাজ করাতেন। কেউ গান গাইত, কেউ কৌতুক বলত। তো এ রকম এক বৃহস্পতিবারে আমাদের ক্লাসে একটা নতুন ছেলে যোগ হলো। যথারীতি স্যার যখন জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা কেউ গান-আবৃত্তি, কিছু পারো?’ আমরা দেখলাম, নতুন ছেলেটা চট করে দাঁড়িয়ে গেল। বলল, ‘স্যার, আমি গান গাইতে পারি।’ নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় সে একটা গান শোনাল। শুনে আমরা খুব মজা পেলাম। বাহ, ছেলেটা তো ভালো গায়।

জানলাম, ওর নাম আবদুল করিম রাজীব। খুব দ্রুত ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে গেল। আমরা ওর গানের প্রশংসা করতাম। একসঙ্গে আড্ডা দিতাম, গল্প করতাম।

দুই বছর পর ক্লাস নাইনে উঠে আমি চলে গেলাম কেসি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। স্কুল আলাদা হলেও কিন্তু বন্ধু আলাদা হয় না। হ্যাঁ, নতুন বন্ধু যোগ হয়। কিন্তু পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগযোগ থাকে সব সময়। তো করিমের সঙ্গেও আমার সব সময় যোগাযোগ ছিল। স্কুলে সবাই ওকে করিম নামে চিনত। কলেজে অবশ্য রাজু নামে ডাকে। ও বলত, ‘তোরাও আমাকে রাজু ডাকবি।’ আমরা শুনতাম না, করিম বলেই ডাকতাম।

 আমি, করিম, রাহাত, নাহিদ, সাকিব, শাওন, আকাশ...আমাদের একটা দলের মতো ছিল। বেশির ভাগ সময় আমরা একসঙ্গে থাকতাম। আমাদের বন্ধু রাহাতের একটা ইউটিউব চ্যানেল আছে। সেখানে করিম অভিনয় করত, গান গাইত। পয়লা বৈশাখ কিংবা অন্য কোনো উৎসবে আমরা একসঙ্গে বেড়াতে বের হতাম। ঈদে অবশ্য ও বাড়িতে চলে যেত। মা আর ছোট ভাই আল আমিনের সঙ্গে ঈদ করত।

মো. মাহফুজুর রহমান
মো. মাহফুজুর রহমান

আবারও একটা ঈদ আসছে। এবার করিম আর বাড়ি ফিরবে না।

গত ২৯ জুলাই, আমি ফুপুর সঙ্গে বেড়াতে যাচ্ছিলাম। বিমানবন্দরের কাছের সিগন্যালে প্রায় আধা ঘণ্টা বসে আছি, গাড়ি আর নড়ে না। লোকজনের মুখে শুনলাম, রমিজ উদ্দিন কলেজের কাছে একটা চলন্ত বাস নাকি ফুটপাতে উঠে গেছে। দুজন মানুষ মারা গেছে। তাই রাস্তা বন্ধ। যে দুজন মারা গেছে, কল্পনাও করতে পারিনি তাদের মধ্যে একজন আমার চেনা। আমার বন্ধু করিম।

আমরা যখন বিভিন্ন ভিডিও বানাতাম, নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে ভাবতাম। করিম বলত, ‘দেখিস, একদিন সবাই আমাদের চিনবে।’ এখন দেশের প্রায় সব মানুষ ওর নাম জেনে ফেলেছে। ওর ছবি প্রায় সব পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। কিন্তু এভাবে মানুষ ওকে চিনুক, সেটা তো আমরা কখনো চাইনি।

বন্ধু হত্যার বিচার চেয়ে আমরা রাস্তায় নেমেছি। কারও ওপর আমাদের কোনো রাগ নেই। শুধু চাই, আর কোনো মা যেন আমাকে জড়িয়ে ধরে না বলেন, ‘বাবারে, আমার ছেলেটা আর নাই।’

করিম একটা গান লিখেছিল। ইচ্ছা আছে আমরা গানটা কম্পোজ করব। ওর ইচ্ছা পূরণ করব।

আবার যখন পয়লা বৈশাখে আমরা বন্ধুরা ঘুরতে বের হব, আবার যখন বিকেল বেলা আড্ডা জমবে রাহাতের বাসায়...করিম, তোকে খুব মিস করব।