বিদেশি বন্ধুদের কথা

দক্ষিণ এশিয়ার বন্ধুদের সঙ্গে লেখক (বাঁ থেকে তৃতীয়)
দক্ষিণ এশিয়ার বন্ধুদের সঙ্গে লেখক (বাঁ থেকে তৃতীয়)

ভিনদেশের মাটিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ হয়েছে দুবার। প্রথমবার, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) মুখপাত্র হিসেবে গিয়েছিলাম ভারতে। আর এ বছর বেসরকারি আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনিসেফের হয়ে তরুণ প্রতিনিধি হিসেবে ঘুরে এলাম নেপাল। বাংলাদেশে থেকে প্রতিবছর অনেক ছেলেমেয়ে বিভিন্ন সম্মেলন, প্রতিযোগিতা কিংবা ‘এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম’–এ অংশ নিতে ভিনদেশে যায়। এসব আয়োজন কিন্তু বিদেশি তরুণদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার, তাঁদের ভাবনার জগতের সঙ্গে আমাদের ভাবনার মিল-অমিল খুঁজে বের করার এবং তাঁদের কাছ থেকে নতুন কিছু শেখার একটা দারুণ সুযোগও।

ভারতে যেহেতু বিএনসিসির প্রতিনিধি হিসেবে গিয়েছি, সেখানে নানা দেশের ক্যাডেটদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। দেখা হয়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। নেপালে ইউনিসেফ দক্ষিণ এশিয়া আয়োজিত ৩ দিনের সেমিনারেও রাশিয়া, আমেরিকা, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভিয়েতনাম, পানামা, সাউথ সুদানসহ বিভিন্ন দেশের বন্ধু পেয়েছি।

ভারত ঘুরে মনে হয়েছে, সেখানকার বন্ধুরা অনেকটা আমাদের বাঙালিদের মতো। আমাদের মতোই বেশি কথা বলে! তবে আপ্যায়নের দিক থেকে বোধ হয় আমাদের চেয়ে একটু পিছিয়ে আছে। পাকিস্তানি একজন বন্ধু হয়েছে নেপালে গিয়ে। ওর নাম কারিশমা আলী। দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি মেধাবী। পাকিস্তান জাতীয় ফুটবল দলে খেলে সে। তবে এত সহজে এই সুযোগ পায়নি। মৃত্যুর হুমকি পেয়েছে বহুবার। নারী উন্নয়নে পাকিস্তান অনেকটাই পিছিয়ে। কারিশমা আমাকে বলেছে, ওদের দেশে নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানি, নারী ও শিশু পাচারের হার অনেক বেশি হয়। তবু লুকিয়ে লুকিয়ে সে বিভিন্ন বাসায় গিয়ে গৃহিণীদের ইংরেজি পড়ায়। লুকিয়ে ফুটবল খেলতে যায়। এই বন্ধুর সাহস আমাকে মুগ্ধ করেছে। নেপাল আবার সামাজিকভাবে নারীদের জন্য বেশ নিরাপদ।

রাশিয়ার বন্ধুদের সঙ্গে সেলফি
রাশিয়ার বন্ধুদের সঙ্গে সেলফি

সিঙ্গাপুর থেকে ভারতে এসেছিল ১২ জন ক্যাডেট, তাদের মধ্যে মাত্র একজন মেয়ে। নাম রিটো। আমার রুমেই ছিল সে। ওরা বোধ হয় ‘কথা কম কাজ বেশি’ নীতিতে বিশ্বাসী। এত কম কথা বলে একটা মানুষ কীভাবে বাঁচতে পারে, আমি ভেবে পাই না! ওদের নিয়ম হলো বাসে, খাওয়ার টেবিল ও ক্লাসরুমে কথা না বলা। কিন্তু আমার রুমে যেহেতু ছিল, তা–ও আবার আমার দোতলা বিছানার ওপরে, কথা না বলে যাবে কই! আমার একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়, এই ভয়েই মনে হয় বেচারা রুমে কম থাকত! ওকে আমার শাড়ি পরিয়ে দিয়েছিলাম। শাড়ি পরে সে কী যে খুশি! ছবি তুলতে তুলতে সেদিনই প্রায় তার ফোনের মেমোরি শেষ করে ফেলছিল। যাওয়ার আগে আমি ওকে উপহার দিয়েছি। সে-ও আমাকে উপহার দিতে ভোলেনি।

ভিয়েতনামের বন্ধুটি বেশ হাসিখুশি
ভিয়েতনামের বন্ধুটি বেশ হাসিখুশি

তবে উপহার দেওয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রাখতে হবে ভিয়েতনামের বন্ধুদের। ভীষণ বন্ধুপরায়ণ ওরা। নিজেদের রুম রেখে বেশির ভাগ সময় আমাদের রুমেই থাকত। উপহারের প্রতিযোগিতায় ওদেরকে কিছুতেই হারাতে পারিনি। মজা করে কথা বলে। ওদের দেশে অবশ্য ক্যাডেট কোর নেই। ওরা এসেছিল ইয়ুথ ফোরাম থেকে।

রাশিয়ার বন্ধুদের খুব অদ্ভুত মনে হয়েছিল। কথা বলে না, হাসে না। এদিকে আমি তো ওদের সঙ্গে কথা বলেই ছাড়ব! পরিচিত হওয়ার পর বুঝলাম, সমস্যাটা কোথায়। ওদের দলের ২৫ জন সদস্যের মধ্যে ইংরেজি পারে মাত্র একজন।

আমার ভিনদেশি বন্ধুদের মধ্যে অনেকের সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগ হয় নিয়মিত। যদিও তাঁদের কেউই বাংলা পড়তে পারে না, তবু এই লেখার সুযোগে তাদের জানাই বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা।