উদ্যোক্তাদের জন্য ৫ প্রতিযোগিতা

উদ্যোক্তা হওয়া তো কেবল ব্যবসা করা নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সমস্যা সমাধানের চ্যালেঞ্জ, মানুষের জীবনযাপনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার সুযোগও। বাংলাদেশে ও সারা বিশ্বেই এখন উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে নানা রকম অনুষ্ঠান, কর্মশালা, সম্মেলন আয়োজন করা হচ্ছে। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচিত করা হচ্ছে সেরা উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবনী ভাবনগুলোকে।

হয়তো আপনার মাথায়ও দারুণ একটি ব্যবসায়িক ‘আইডিয়া’ বা ধারণা আছে। প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও পুঁজির অভাবে এগোতে পারছেন না। ভাবনার ত্রুটিগুলো খুঁজে বের করা কিংবা বিনিয়োগ সহায়তা পাওয়া—দুটিই সম্ভব হতে পারে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে। শুধু জাতীয় পর্যায়ে নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও আয়োজিত হচ্ছে বেশ কিছু ‘স্টার্টআপ কম্পিটিশন’ বা উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতা। জেন নিন এমন পাঁচটি প্রতিযোগিতার খবর।

পোস্টকোড লটারি গ্রিন চ্যালেঞ্জ
পোস্টকোড লটারি গ্রিন চ্যালেঞ্জ

পোস্টকোড লটারি গ্রিন চ্যালেঞ্জ
নেদারল্যান্ডসের উন্নয়ন সংস্থা ডাচ পোস্টকোড লটারি ২০০৭ সাল থেকে টেকসই উদ্যোক্তা খাতে বিশ্বের অন্যতম বড় এ প্রতিযোগিতা আয়োজন করে আসছে। পৃথিবীর যেকোনো দেশের গ্রিন স্টার্টআপ বা পরিবেশবান্ধব উদ্যোগগুলো এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ফি ছাড়াই www.greenchallenge.info—এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আইডিয়া জমা দেওয়া যাবে। আইডিয়া জমা দেওয়ার নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ ২৫টি ভাবনাকে নির্বাচন করে সেগুলো প্রকাশ করে, যেগুলোর প্রতিটিরই সেরা ৫–এ যাওয়ার সুযোগ থাকে। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার পুরস্কার ৫০০,০০০ ইউরো বা প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকার বেশি। রানারআপ পায় ২০০,০০০ ইউরো (প্রায় ১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা) এবং বাকি তিনজন ১০০,০০০ ইউরো (প্রায় ৯৪ লাখ টাকা) করে পায়। পুরস্কারের অর্থ ছাড়াও চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেওয়া পাঁচ প্রতিযোগী বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে ছয় মাস প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পান। তবে পুরস্কারের অর্থ পুরোটা একসঙ্গে দেওয়া হয় না। কারণ, ডোন ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পর সেরা পাঁচে থাকা অংশগ্রহণকারীদের একটা দীর্ঘ সময় ধরে পর্যবেক্ষণ করে। পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে কাজের অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করে ফাউন্ডেশনটি সিদ্ধান্ত দেয়, কখন কী পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।

গ্লোবাল স্টুডেন্ট এন্ট্রাপ্রেনিউরস অ্যাওয়ার্ড
গ্লোবাল স্টুডেন্ট এন্ট্রাপ্রেনিউরস অ্যাওয়ার্ড

গ্লোবাল স্টুডেন্ট এন্ট্রাপ্রেনিউরস অ্যাওয়ার্ড
কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের জন্যই গ্লোবাল স্টুডেন্ট এন্ট্রাপ্রেনিউরস অ্যাওয়ার্ড। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর একজন প্রতিযোগী এই অ্যাওয়ার্ডের চূড়ান্ত পর্বে উত্তীর্ণ হন। স্টার্টআপটির সময়কাল ছয় মাসের কম হলে এ প্রতিযোগিতার জন্য আবেদন বিবেচ্য হয় না। এ বছর বাংলাদেশের ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নাজিবা নায়লা জাতীয় প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন চীনে অনুষ্ঠেয় চূড়ান্ত পর্যায়ে। এ প্রতিযোগিতাটি সম্পূর্ণভাবেই স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য। ৬০টির বেশি রাষ্ট্রের অন্তত দুই হাজার শিক্ষার্থী এই পুরস্কারের জন্য প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হন নিজের ব্যবসায়িক ভাবনা সম্বল করে। এ প্রতিযোগিতার পুরস্কার হিসেবে নগদ অর্থের পাশাপাশি ব্যবসার বিভিন্ন সেবাও প্রদান করা হয়। চূড়ান্ত পর্যায়ে বিজয়ীকে ২৫০০০ মার্কিন ডলার (প্রায় ২১ লাখ টাকা) নগদ অর্থের পাশাপাশি মোট ৪০০০০ মার্কিন ডলার (প্রায় ৩৪ লাখ টাকা) প্রদান করা হয়, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে ভ্রমণসহ অন্যান্য বিভিন্ন খরচ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারী প্রতিযোগী যথাক্রমে ১০০০০ (প্রায় সাড়ে আট লাখ টাকা) এবং ৫০০০ (প্রায় ৪ লাখ ২৩ হাজার টাকা) মার্কিন ডলার পেয়ে থাকেন।

জি-স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড ওয়াইড
জি-স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড ওয়াইড

জি-স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড ওয়াইড
জি-স্টার্টআপ গ্লোবাল একটি বৈশ্বিক স্টার্টআপ (উদ্যোগ) প্রতিযোগিতা, যার মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে থাকা পৃথিবীর উদ্ভাবনী উদ্যোগগুলোকে খুঁজে বের করে তাদের মধ্যে ১০ লাখ মার্কিন ডলার (প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা) বণ্টন করে দেওয়া হয়। তা ছাড়া সবদিক বিবেচনায় সম্ভাবনাময় এই উদ্যোগগুলোকে একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্কিং সহায়তার অধীনেও নিয়ে আসা হয়। এ প্রতিযোগিতায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় এমন সব উদ্ভাবনী পণ্যকে, যেগুলো বিশ্বে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা পর্বের মাধ্যমে সেরা ১০ প্রতিযোগীকে নিয়ে পরবর্তী সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের সেরা উদ্যোগগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়। এই প্রতিযোগিতার মূল বিজয়ী ২৫০০০০ মার্কিন ডলারের (প্রায় ২ কোটি টাকার বেশি) বিনিয়োগ পেয়ে থাকেন। প্রতিযোগীদের মূল্যায়নের আঞ্চলিক প্যানেলে থাকেন পৃথিবীর অন্যতম সেরা ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট এবং এক্সিলারেটররা। এর মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের একটি নেটওয়ার্কিংয়ের সফল সুযোগ তৈরি হয়।

রাইস বিজনেস প্ল্যান কম্পিটিশন
রাইস বিজনেস প্ল্যান কম্পিটিশন

রাইস বিজনেস প্ল্যান কম্পিটিশন
স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা বলা হয় রাইজ বিজনেস প্ল্যান কম্পিটিশনকে। যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত এ প্রতিযোগিতায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের প্রতিযোগীরাও অংশগ্রহণ করতে পারেন। তবে অবশ্যই অংশগ্রহণকারী দলের কমপক্ষে একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী হতে হবে। এ প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করা হয় জেসি এইচ জন্স গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব বিজনেস এবং রাইস ইউনিভার্সিটির রাইস অ্যালায়েন্স ফর টেকনোলজি অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপের যৌথ উদ্যোগে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিভিন্ন বিনিয়োগকারী এবং অভিজ্ঞ উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণের একটি সুযোগ তৈরি হয়; তা ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টদের সঙ্গে তিন দিনব্যাপী নেটওয়ার্কিংয়ের একটি ক্ষেত্র নিশ্চিত করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে থাকা উদ্যোগগুলোর জন্য এ প্রতিযোগিতা। মূলত চারটি বিভাগে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
• জীব বিজ্ঞান/মেডিকেল ডিভাইস/ডিজিটাল হেলথ
• ডিজিটাল/তথ্যপ্রযুক্তি
• জ্বালানি/ক্লিন টেকনোলজি/সাসটেইনেবিলিটি বা স্থায়িত্ব
• অন্যান্য উদ্ভাবন

সর্বমোট ১.৫ মিলিয়ন ডলার (১৪ কোটি ডলার) মূল্যমানের বেশি নগদ অর্থই এবং বিনিয়োগ এই প্রতিযোগিতার শীর্ষ ৪২টি দলের মধ্যে বণ্টন করা হয়।

স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপ
স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপ

স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপ
স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপ একটি বৈশ্বিক সভা এবং প্রতিযোগিতা, যা পৃথিবীর সেরা স্টার্টআপ, ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট, উদ্যোক্তা এবং প্রযুক্তি খাতের স্বনামধন্য প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের এক মঞ্চে নিয়ে আসে। চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে সারা বিশ্বে ৪০টির অধিক আঞ্চলিক পর্ব অনুষ্ঠিত হয় স্টার্টআপের এই বিশ্বকাপে। ২০১৯ সালের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ৬ এপ্রিল, বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের উদ্যোগে। এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে স্টার্টআপগুলো সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ পায়। করপোরেট অংশীদারত্বের পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্পের বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতি থাকে এখানে। প্রতিযোগিতার পুরস্কার এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা। এই বিশ্বকাপের মাধ্যমে মূলত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরাও নতুন নতুন আইডিয়া খুঁজে বের করেন বিনিয়োগ করার জন্য। সর্বোপরি এটি সারা পৃথিবীর ব্যবসার প্রায় সব ধরনের শীর্ষ অংশীদারদের একটি মিলনমেলায় পরিণত হয়।