ক্যাম্পাসের ক্রিকেটাররা

>বিশ্বকাপের এই মৌসুমে ক্যাম্পাসের তারকা ক্রিকেটারদের খোঁজ নিয়েছেন ফজলে রাব্বী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারমিন সুলতানা

দলের অধিনায়ক, কখনো কোচও

‘আমি তখন মাত্র প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। ২০১৩ সালে শুরু হয় নারীদের আন্তহল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। আমি সে বছরই শামসুন নাহার হলের হয়ে খেলি। পুরো টুর্নামেন্টেই মোটামুটি ভালো খেলেছিলাম। তাই সে বছর প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট নির্বাচিত হই’, বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হল ক্রিকেট দলের অধিনায়ক শারমিন সুলতানা।

শারমিন জানান, ছোটবেলায় যখন দেখতেন বাসার সামনে অনেকে ক্রিকেট খেলছে, তখন থেকেই এই খেলার প্রতি তাঁর আগ্রহের শুরু। বলছিলেন, ‘সবাই যখন খেলত, আমিও খেলতে যেতাম। আমার বড় ভাইও সেখানে খেলতেন। তিনিই আমাকে তখন শিখিয়েছেন কীভাবে ব্যাট ধরতে হয়, কেমন করে বোলিং করতে হয়। বড় ভাই ইমতিয়াজ মাহমুদের কাছেই আমার ক্রিকেটের হাতেখড়ি।’

প্রথম বর্ষে প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছিলেন বলেই বোধ হয় দ্বিতীয় বর্ষ থেকে শামসুন নাহার হল ক্রিকেট দলের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পড়ে শারমিনের কাঁধে। সেই সময় থেকেই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়মিত অনুশীলন করতে শুরু করেন তিনি। শারমিন বলেন, ‘আমি নিজে প্র্যাকটিস করতাম, আবার অন্য যারা প্র্যাকটিস করতে আসত, তাদেরকেও দেখিয়ে দিতাম। অনেক সময় একই সঙ্গে কোচ আর অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করতে হয়।’

ঝুলিতে বেশ কিছু স্বীকৃতিও আছে শারমিনের। রবি স্পিনার হান্টে বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে সুযোগ পান বিসিবির আবাসিক ক্যাম্পে। সেখানে শারমিনের বলে ব্যাট করেন জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফিস। স্পিনার হান্টের সেই আবাসিক ক্যাম্পে সেরা ৩ নারী ক্রিকেটারের একজন হয়েছিলেন তিনি। ২০১৭ সালে নারীদের আন্তহল ক্রিকেট টুর্নামেন্টে তাঁর নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন হয় শামসুন নাহার হল ক্রিকেট দল আর ২০১৮ সালে হয় রানার্স আপ।

এবারের বিশ্বকাপ নিয়ে আশাবাদী শারমিন। তিনি মনে করেন, সামনের ম্যাচগুলো যদি বাংলাদেশ জিততে পারে, তবে সেমিফাইনাল খেলার একটা সম্ভাবনা রয়েছে। আর টিএসসিতে বড় পর্দায় সবাই একসঙ্গে খেলা দেখার আনন্দ তিনি দারুণভাবে উপভোগ করেন বলে জানালেন।

শারমিন সুলতানা বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ করছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনয় বিশ্বাস

খেলার সঙ্গেই থাকার প্রত্যয়

ক্যাম্পাসে সিনিয়র থেকে শুরু করে জুনিয়র, এমনকি শিক্ষকেরাও প্রায় সবাই তাঁকে চেনেন। আর চিনবেন নাই–বা কেন, তিনি যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসতেন অনয় বিশ্বাস। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও রয়েছেন ক্রিকেটের সঙ্গেই। ২০১৩ সালে ঢাকা লিগেও খেলেছেন।

অনয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন গণিত বিভাগে। চলছে চূড়ান্ত বর্ষের পড়ালেখা। থাকছেন বঙ্গবন্ধু হলে। জানালেন, পড়াশোনা শেষ হলেও তিনি ক্রিকেটের সঙ্গে থাকতে চান। মুঠোফোনের অপর প্রান্ত থেকে অনয় বললেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোনোর পর যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করব, সেই প্রতিষ্ঠানের হয়ে করপোরেট লিগ খেলার ইচ্ছে আছে। তাই পড়ালেখা শেষ হয়ে গেলেও আশা করি ক্রিকেটের সঙ্গে থাকতে পারব।’

বিশ্বকাপ উন্মাদনায় মেতে আছে সারা দেশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় তো বটেই। অনয় বলছিলেন, ‘বাংলাদেশের খেলা থাকলে দেখা যায় কমন রুমে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী একসঙ্গে হয়ে যায়, বড় পর্দায় খেলা দেখার মজা অন্য রকম। ভালো খেললে সবাই মিলে হইচই করি, আবার খারাপ করলে মন খারাপ হয়ে যায় সবার। আর শেষ পর্যন্ত জয় এলে ক্যাম্পাসে মিছিল তো হবেই।’ একদিকে যুক্তরাজ্যে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচ, অন্যদিকে বাংলাদেশে বিজয় মিছিলও নাকি বৃষ্টিবিঘ্নিত হচ্ছে। তাই আনন্দ-উল্লাস জমা থাকছে ইনডোরেই।

জানতে চাই ক্রিকেটে অনয়ের স্বীকৃতির কথা। বললেন, ক্লেমন ইনডোর গেমসে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার হাতে তুলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান। সেই স্মৃতি তাঁর কাছে বিশেষ কিছু। এ ছাড়া করপোরেট লিগে সাবেক ক্রিকেটার মোহাম্মদ রফিকের কাছ থেকেও পুরস্কার নিয়েছেন তিনি। ক্যাম্পাসে উপাচার্যের হাত থেকে পাওয়া পুরস্কারও তাঁকে প্রেরণা জোগায়।

ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের মাহবুবুর রহমান

দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি

ছোটবেলায় ক্রিকেট ছিল স্রেফ শখ, বড় হওয়ার পর সেটাই হয়ে উঠেছে নেশা। এখন তো পেশা হিসেবেও ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র মাহবুবুর রহমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে তিনি ক্যাম্পাসের দলে খেলার সুযোগ পাননি। তবে দ্বিতীয় বর্ষেই খেলেছেন ইউল্যাব ফেয়ার প্লে কাপের ২টি ম্যাচ।

ইউল্যাব ফিল্ড স্পোর্টস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘খেলার সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে অনেকের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার একটা সুযোগ হয়। নিজেদের মধ্যে একধরনের আন্তরিকতা তৈরি হয়। ইউল্যাব ফেয়ার প্লে কাপ আন্তবেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টে ২০১৬ সালে চ্যাম্পিয়ন হয় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে আমরা শ্রীলঙ্কায় রেড বুল ক্যাম্পাস ক্রিকেটে খেলার সুযোগ পেয়েছিলাম। সে বছরই প্রথম বিদেশের মাটিতে খেলতে যাই ইউ ল্যাবের হয়ে। ইউল্যাব প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশের।’

শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত রেড বুল ক্যাম্পাস ক্রিকেটের সেমিফাইনালে মাহবুবুরদের প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। পাকিস্তানের বিপক্ষে এই ম্যাচে দারুণ সুখস্মৃতি আছে মাহবুবুরের। বলছিলেন, ‘৯ ওভারে তাদের সংগ্রহ তখন ৯০–এর ওপরে। আমাদের অধিনায়ক তখন আমার হাতে বল তুলে দেন। আমি বাঁহাতি স্পিনার। প্রথম ওভারেই তুলে নিই উইকেট। সেই ম্যাচে ৪ ওভার বল করে ১৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট পেয়েছিলাম। শেষে ম্যান অব দ্য ম্যাচ স্বীকৃতিও পেয়েছি আমি।’

২০১৭ ও ২০১৮ সালেও রেড বুল ক্যাম্পাস ক্রিকেট খেলতে ভিনদেশে যাওয়ার সুযোগ হয় মাহবুবুরের। দল সুবিধাজনক অবস্থানে না থাকলেও সর্বশেষ ২০১৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে একটি ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন তিনি। সেই ম্যাচে ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে ৫ উইকেট তুলে নেন মাহবুব।

মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বিশ্বকাপ উন্মাদনা ছুঁয়ে গেছে আমাদের ক্যাম্পাস। বাংলাদেশের খেলা চলে যেদিন, সেদিন সবাই মিলে ক্যানটিনে একসঙ্গে খেলা দেখি। খেলা শুরুর সময় জাতীয় সংগীত চলাকালে সবাই মিলে দাঁড়িয়ে নিজেরাও জাতীয় সংগীত গাই।’ সেটি এক অন্য রকম অনুভূতি বলে জানান মাহবুব। ক্রিকেটটাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিতে চান তিনি। খেলেছেন দ্বিতীয় বিভাগের হয়ে। স্বপ্ন দেখেন, জাতীয় দলের জার্সি গায়ে একদিন মাঠে নামবেন।