তারুণ্যের জয়োৎসবের পর

>সারা দেশের বিভিন্ন জেলা শহর ও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় এক বছর ধরে ৩২ টি ‘ক্রাউন সিমেন্ট-প্রথম আলো তারুণ্যের জয়োৎসব’ অনুষ্ঠিত হয়। যার সমাপনী হয়েছে গত ২৪ এপ্রিল। কিন্তু কার্যক্রম কি এখানেই শেষ? তারুণ্যের জয়োৎসবের একটি মূল উদ্দেশ্য ছিল কর্ম ও শিক্ষাক্ষেত্রে তরুণদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা করা। সেই কার্যক্রম অব্যাহত আছে। তারই কিছু অংশ নিয়ে এই আয়োজন।

ঘুরে দেখা কারখানা

কথা ছিল, জাতীয় পর্বের পর নির্বাচিত কয়েকজন শিল্পকারখানা ঘুরে দেখার সুযোগ পাবে। জানবে, কীভাবে চলে একটি বিরাট কর্মযজ্ঞ। কথা অনুযায়ী, গত ৩০ জুন ৪০ জন তরুণ মিলে রওনা হন মুন্সিগঞ্জে ক্রাউন সিমেন্টের কারখানায়।

৩০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা কারখানায় বড় বড় যন্ত্রপাতি, সেই তুলনায় কর্মীর সংখ্যা খুব বেশি নয়। দেখে তরুণেরা আঁচ করতে পারলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব হয়তো খুব দূরে নয়। যন্ত্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কর্মবাজারে টিকে থাকতে হলে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। 

শুরুতেই ক্রাউন সিমেন্টের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র ম্যানেজার (কোয়ালিটি ও ল্যাব) মোহাম্মদ রেজাউল করিম সিমেন্ট সম্পর্কে জানান তরুণদের। তিনি ব্যাখ্যা করেন, কীভাবে একটি সিমেন্ট কারখানা কাজ করে, কী ধরনের স্থাপনার জন্য কেমন সিমেন্ট প্রয়োজন ইত্যাদি। শিক্ষার্থীরা আরও জানতে পারেন, সিমেন্টের কারখানায় ঠিক কত ধরনের চাকরির সুযোগ আছে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকেরাই নন, সঠিক প্রশিক্ষণ থাকলে কারিগরি শিক্ষা নিয়েও যোগ দেওয়া যায় এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে। 

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরুল বাসার বলেন, ‘ভেবেছিলাম, একটা সিমেন্ট কারখানায় শুধু প্রকৌশলীদের জন্য কাজ আছে। এখানে এসে জানতে পারলাম, অন্য আরও অনেক কাজের ক্ষেত্র এখানে আছে, যেখানে আমরাও কাজ করত পারি।’

টোয়েক কর্মশালা ও বিনা মূল্যে পরীক্ষা

তারুণ্যের জয়োৎসবে একটি কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছিল টোয়েক নিয়ে। টোয়েক অর্থাৎ টেস্ট অব ইংলিশ ফর ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশনস—আইইএলটিএস বা টোয়েফলের মতো ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাইয়ের একটি পরীক্ষা। শুধু উচ্চশিক্ষা নয়, চাকরির ক্ষেত্রেও সাহায্য করে টোয়েকের স্কোর। তাই বিভিন্ন দেশে টোয়েকের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ১৬০টি দেশে এর গ্রহণযোগ্যতা আছে। প্রায় ৭০ লাখ মানুষ প্রতিবছর টোয়েক পরীক্ষায় অংশ নেয়।

নাম নিবন্ধনের মাধ্যমে ১৮ ও ১৯ মে তারুণ্যের জয়োৎসবের অংশ হিসেবে টোয়েক বিষয়ে একটি কর্মশালায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান এক দল তরুণ। টোয়েক বাংলাদেশ থেকে প্রশিক্ষকেরা প্রথম আলো কার্যালয়ে এসে তরুণদের শেখান টোয়েক পরীক্ষার বিভিন্ন কলাকৌশল। ছিল মক টেস্ট দেওয়ার সুযোগও। মক টেস্টের সেরা ৩২ জন বিনা মূল্যে টোয়েক পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পান। 

যাঁরা পরীক্ষা দিয়েছেন, তাঁদের একজন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এস এম সারোয়ার। টোয়েক পরীক্ষা সম্পর্কে বিচ্ছিন্নভাবে শুনলেও এ সম্পর্কে খুব একটা ধারণা তাঁর ছিল না। কর্মশালায় অংশ নিয়ে তিনি পুরো বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। টোয়েকের ফলাফল পেয়ে জাপান বা কোরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করার কথা ভাবছেন তিনি। 

সারওয়ারের মতো বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে টোয়েক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন ইডেন মহিলা কলেজের অর্থনীতির শিক্ষার্থী ফাতেহা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ফাহিমসহ আরও অনেকে।

ইন্টার্নশিপের সুযোগ

তারুণ্যের জয়োৎসবে অংশ নেওয়া নির্বাচিত কয়েকজন তরুণকে শিক্ষানবিশি বা ইন্টার্নশিপের সুযোগ করে দিতে এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। অনলাইনে ফরম পূরণের মাধ্যমে ১৫০ জন তরুণের মধ্য থেকে ৬০ জনকে ডাকা হয় সাক্ষাৎকারের জন্য। তাঁদের দক্ষতা ও পছন্দ অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে ইন্টার্নশিপের জন্য ২০ জনকে নির্বাচিত করা হয়। পুরো প্রক্রিয়াটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) প্রাক্তন শিক্ষার্থী তামান্না ঊর্মি। তিনি বলেন, ‘এই পর্ব থেকে আমরা তরুণদের সামর্থ্য, দুর্বলতা, শখ ও স্বপ্নের কথা জানতে পেরেছি। এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তারুণ্যের জয়োৎসবের মাধ্যমে নিশ্চয়ই সামনের দিনগুলোতে আরও বড় পরিসরে তরুণদের সহায়তা করা সম্ভব হবে।’

 আন্তর্জাতিক বুটক্যাম্পে অংশগ্রহণ

ক্রাউন সিমেন্ট-প্রথম আলো তারুণ্যের জয়োৎসবের সার্বিক সহায়তায় থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বুটক্যাম্পে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী সাদিয়া কবির। থাইল্যান্ডের ব্যাংককে গত ২৭ জুন শুরু হওয়া এই বুটক্যাম্পে অংশ নেন ৪০টি দেশের প্রায় ১৫০ জন তরুণ, যাঁরা নিজেদের বুদ্ধিদীপ্ত আইডিয়া নিয়ে ইতিমধ্যে উদ্যোক্তা হয়েছেন, কিংবা উদ্যোক্তা হতে বদ্ধপরিকর। চার দিনের এই বুটক্যাম্পে ছোট ছোট দলে ভাগ করা হয়েছে অংশগ্রহণকারীদের। বিভিন্ন অধিবেশনে অংশগ্রহণের পর একটি পরিপূর্ণ ব্যবসায়িক মডেল উপস্থাপন করেছেন তাঁরা। সাদিয়া কবিরের দল, কেটুয়েন্টি পেয়েছিল সেরা দলের পুরস্কার। দলে ইন্দোনেশিয়া, টোগো ও ক্যামেরুনের তরুণেরাও ছিলেন। ৩০ জুন সাংস্কৃতিকসন্ধ্যা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় বুটক্যাম্প।


গ্রন্থনা: মাকসুদা আজীজ