দৃষ্টি অনেক দূরে

অন্যরা যেখানে ছোটবেলায় ভূত আর অঙ্কের নাম শুনলে দৌড়ে পালাত, মৌরি সামাদ সেখানে প্রায়ই অঙ্কে পেতেন ১০০তে ১০০! এই অভিজ্ঞতা হয়তো অনেকেরই নেই। তাই তাঁদের পক্ষ থেকেই জানতে চাই, ‘অঙ্কে ১০০তে ১০০ পেতে কেমন লাগে?’ 

মোটামুটি বেরসিক উত্তর এল, মাত্র দুটি শব্দে, ‘খারাপ না’। এই ‘খারাপ না’র কী মানে কে জানে! হয়তো বিজ্ঞানমনস্করা একটু এমনই হয়। কাজ করে বেশি বেশি, প্রকাশ করে কম কম। তাই যখন আনন্দে উচ্ছ্বসিত হওয়ার কথা, সেখানে উত্তর আসে ‘খারাপ না’। মৌরি সামাদও কাজ করেন বেশি। প্রমাণ পেতে আমাদের একটু পেছনে যেতে হবে। তার আগে বলে রাখা ভালো, মৌরি সামাদ দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। ক্যাম্পাসের সবাই তাঁকে মৌ নামে চেনেন। তিনি সেই প্রিয়মুখ, যিনি নাচেন, গান করেন, অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়ে নেন নিজের কাঁধে। আবার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় মুঠোফোনের অ্যাপ বানিয়ে পুরস্কারও বাগিয়ে নিয়ে আসেন। 

এই তো ২০১৬ সালের কথা। ‘ডিজিটাল ইনোভেশন ফর উইমেন’–এ তিনি আর তাঁর এক বন্ধু মিলে এমন একটা অ্যাপ বানালেন, যেটা বাংলাদেশের আর সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সব দলকে পেছনে ফেলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। সেই অ্যাপের নাম ‘ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন’। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যতগুলো দল ফাইনালে উঠেছিল, তাদের ভেতর মৌদের দল ছিল অন্যদের তুলনায় বয়সে ছোট। সেবার সেই ছোটদের হাতেই শোভা পেয়েছিল সবচেয়ে বড় ট্রফি। 

এর পরের বছর নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে হাবিপ্রবির চার সদস্যের দলে মৌ ছিলেন একমাত্র নারী। তাঁদের দলের নাম ছিল হাইলাইটস, যেটি সারা বিশ্বের চূড়ান্ত পাঁচ দলের একটি হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিল। তাঁরা এমন একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের প্রস্তাব করেছিলেন, যা কিনা ‘অটো সেনসরি ডিটেক্ট’–এর মাধ্যমে সব জলাশয় থেকে আবর্জনা তুলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবে। এভাবে পরিচ্ছন্ন রাখবে জলাশয়। 

মৌ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়—সব জায়গাতেই বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। ভালো নাচতেন। প্রথমবার বন্ধুদের অনুরোধে নেচেছিলেন। তারপর মৌয়ের সেই নাচ দেখে যেকোনো অনুষ্ঠানে বন্ধুরা তাঁকে ধরে মঞ্চে তুলে দিতেন। আর এখন তো শুধু নেচেই ক্ষান্ত দেন না, নাচানও। যেকোনো অনুষ্ঠানে নাচের নির্দেশনা দেন। লেখাপড়া শেষ করে কী করবেন? উত্তর এল, ‘উদ্যোক্তা হতে চাই। আর নারীদের জন্য কিছু করতে চাই।’ 

সময় নিশ্চয়ই সেসবও সত্যি করে দেখাবে একদিন।