শিশু বিকাশে তুবার 'লাটিম'

ফারাহ তুবা।  ছবি: প্রথম আলো
ফারাহ তুবা। ছবি: প্রথম আলো

ফারাহ তুবা ১১ মাস বয়সী সন্তানের মা। তুবা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয়বার ‘প্রারম্ভিক শিশু বিকাশ’ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এর আগে ঢাকার গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ থেকে ‘শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক’ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। অর্থাৎ তাঁর মেধা–মননে শিশু বিকাশের বিষয়টি ঢুকে গেছে। তাই শিশুর বিকাশ বিষয়টিকে তিনি কাজের ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছেন। 

শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে জরুরি শিক্ষা, পুষ্টি, শিশু প্রতিপালন ও স্বাস্থ্য। শিশুদের জন্য এই চারটি নিয়ামক নিশ্চিত করতে ২০১৭ সালে ফারাহ তুবা নোশিন তাবাসসুম ও ইফফাত হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তুললেন লাটিম নামের একটি ব্যতিক্রমধর্মী সামাজিক সংগঠন। তখন তাঁরা সবাই গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থী। প্রথম দিকে দেশের ও দেশের বাইরের বিশেষজ্ঞদের দেওয়া শিশু বিকাশবিষয়ক পরামর্শ সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া শুরু করে লাটিম।

সম্প্রতি লাটিমের পান্থপথের কার্যালয়ে বসে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ফারাহ তুবার সঙ্গে কথা হলো। তিনি বললেন, ‘ফেসবুক পেজের মাধ্যমে পরামর্শ দিতে গিয়ে মনে হলো, এভাবে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কাছে পৌঁছানো যাবে না। তখন আমরা শুধু শিক্ষা ও সৃজনশীল শিক্ষা উপকরণের দিকে মনোযোগী হই।’ সে অনুযায়ী লাটিমের স্বেচ্ছাসেবীরা শিক্ষা উপকরণ তৈরি করা শুরু করেন। সেসব উপকরণ বিনা মূল্যে হাজারীবাগের দোয়েল স্কুলের শিক্ষার্থীদের বিতরণ করা হয়। সুবিধাবঞ্চিত স্কুলের শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণেরও আয়োজন করা হয়।

চলতি বছরের গোড়ায় জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষা উপকরণ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে লাটিম। প্রতিযোগিতায় সারা দেশ থেকে হাতে তৈরি মোট ১৬৫টি শিক্ষা উপকরণ জমা পড়ে। বিশেষজ্ঞ বিচারক প্যানেল এগুলো থেকে প্রথমে ২৫টি এবং পরে ১১টি শিক্ষা উপকরণ নির্বাচন করে। আগস্টের শেষের দিকে ঘোষণা করা হবে কারা হয়েছেন প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়। বিজয়ীরা পুরস্কার হিসেবে পাবেন যথাক্রমে ২০ হাজার, ১৫ হাজার ও ১০ হাজার টাকা। প্রতিযোগিতায় যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদের জন্য শিক্ষা উপকরণ তৈরির কর্মশালারও আয়োজন করা হয়েছে। 

ফারাহ তুবা বললেন, ‘বিজয়ীরা ভবিষ্যতেও আমাদের সঙ্গে কাজ করা সুযোগ পাবেন। তাঁদের তৈরি করা সৃজনশীল শিক্ষা উপকরণ আমরা দেশের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেব। আমরা এই সৃজনশীল শিক্ষা উপকরণ নিয়েই কাজ করতে চাই। তবে শিক্ষা উপকরণ তৈরির জন্য একটি জায়গার খুব দরকার।’ 

লাটিমের শুরুতে তিনজন ছিলেন। এখন এই তিনজনের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন পাঁচজন স্বেচ্ছাসেবী। লাটিমের সদস্য নোশিন তাবাসসুম বললেন, ‘আপুর (তুবা) অনুপ্রেরণায় লাটিমের কাজে জড়িয়ে পড়া। গৎবাঁধা কাজ আমার ভালো লাগে না। এখানে নিজের মতো করে সৃজনশীল কাজ করতে পারছি।’ 

ফারাহ তুবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি অ্যান্ড বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আগ্রহ মনোবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানে। পরের বছরও আগ্রহের বিষয়ে পড়ার সুযোগ না পেয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে ভর্তি হয়েছিলেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে। তুবার মতে, শিশুর বিকাশ নিয়ে কাজ করা মানে হচ্ছে তিনি একই সঙ্গে মনোবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান দুটোর সমন্বয় ঘটাতে পারছেন। 

২০১৫ সালে বিয়ে করেন ফারাহ তুবা। লাটিম চালানোর খরচও তাঁকেই জোগাড় করতে হয়। একদিকে সংগঠন, অন্যদিকে পড়ালেখা ও সংসার কীভাবে সামলা—এ প্রশ্নের উত্তরে তুবা বললেন, ‘স্বামী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছ থেকে সহযোগিতা ও সমর্থন পাই, তাই অসুবিধা হয় না।’